ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গাছে গাছে স্বর্ণালি মুকুল- পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১১ মার্চ ২০১৮

গাছে গাছে স্বর্ণালি মুকুল- পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

মামুন-অর-রশিদ ॥ সাধারণত মাঘের শেষেই রাজশাহী অঞ্চলের গাছে গাছে প্রস্ফূটিত হতে শুরু করে আমের মুকুল। তবে এবার তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। মৌসুমের শুরুতে গাছে গাছে আমের মুকুলের তেমন দেখা না পেয়ে অনেকটাই হতাশ ছিল এ অঞ্চলের চাষীরা। ফাল্গুনের শুরুতেও কাক্সিক্ষত মুকুল ছিল না। এ নিয়ে অনেক চাষীর মনে শঙ্কার রেখা ফুটে উঠেছিল। তবে সব শঙ্কা কাটিয়ে দেরি হলেও শেষ পর্যন্ত মধ্য ফাল্গুনে এসে শোভিত হয়েছে রাজশাহী অঞ্চলের আমের বাগান। দেরি করে হলেও এখন গাছে গাছে শোভা ছড়াচ্ছে স্বর্ণালি মুকুল। চাষীদের মনে বইতে শুরু করেছে শান্তির সুবাতাস। এরই মধ্যে একপশলা বৃষ্টির পর প্রস্ফূটিত মুকুলে ভরে উঠেছে রাজশাহী অঞ্চলের আম বাগান। বাগানে বাগানে তাই বাড়তি পরিচর্যা শুরু করেছেন এ অঞ্চলের চাষীরা। কৃষি বিভাগ বলছে, এবার দীর্ষ সময় তীব্র শীতের প্রকোপ থাকায় দেরিতে আমের মুকুল এসেছে। তাদের ভাষ্য, জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ এলাকায় কিছু কিছু গাছে আগাম মুকুল আসলেও তার পরিমাণ ছিল কম। তবে মধ্য ফাল্গুনে এসে শতভাগ গাছেই এখন প্রস্ফূটিত হয়েছে মুকুল। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাল্টে গেছে আম বাগানের চেহারা। এখন গাছে গাছে শুধু মুকুল আর মুকুল। স্বর্ণালি মুকুলের সুবাসিত গন্ধে এখন মুখরিত রাজশাহী। ছোট বড় সব ধরনের গাছেই এবার মুকুল এসেছে। এরমধ্যে এক পশলা বৃষ্টির কারণে এবার আমের বাম্পার ফলনের আশা জেগেছে চাষীদের মনে। তাই আম প্রধান এই অঞ্চলের মানুষের সময় এখন কাটছে আম গাছ ও মুকুলের যত আত্তি নিয়েই। শেষ পর্যন্ত গাছভর্তি স্বর্ণালি মুকুল আশার প্রদীপ হয়ে দেখা দিয়েছে চাষীদের মনে। দুই সপ্তাহ আগেও যে চাষী চিন্তিত ছিলেন গাছের মুকুল নিয়ে, তাদের মুখেও এখন স্বর্ণালি আভা ছড়াচ্ছে আমের মুকুলের মতোই। গাছে গাছে আমের মুকুলে তাই এখন রাজশাহী জুড়ে মৌমাছির গুঞ্জন। মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ যেন জাদুর মতো কাছে টানছে তাদের। গাছের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় তাই চলছে মৌমাছি আর ভ্রমরের সুর-ব্যঞ্জনা। আমের শহর রাজশাহীর মানুষের কাছে ঋতু বৈচিত্র্যে এবারের ফাল্গুন ধরা দিয়েছে এভাবেই। তাই নগরজীবনে চলার পথে ঘুরে ফিরে আমগাছের মগডালেই উঠছে পথচারীর চোখ। মহানগরের পথে-প্রান্তরে চোখ মেললেই সদ্য মুকুল ফোটার এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য। গ্রামের আম বাগানগুলোতেও একই দৃশ্য। তাই সবখানে শুরু হয়েছে কেবলই গাছের পরিচর্যা। আম প্রধান চারঘাট, বাঘা এলাকার দৃশ্যপটও পাল্টে গেছে আমের মুকুলে। গাছভর্তি মুকুল দেখে ভাল বার্তা দিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞ ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারাও। তারা বলছেন, এবার মোক্ষম সময়ে আমের মুকুল এসেছে গাছে গাছে। এরই মধ্যে বৃষ্টি হয়ে গেছে। এ বৃষ্টি আমের মুকুলের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। এ দিকে রাজশাহী মহানগরীর গৌরহাঙ্গা, শিরোইল, ভেড়িপাড়া, পুলিশলাইন, মালোপাড়া, মেহেরচন্ডি ও ভদ্রা আবাসিক এলাকা ছাড়াও জেলার আম প্রসিদ্ধ চারঘাট, বাঘা ঘুরে গাছে গাছে দেখা গেছে শুধুই প্রস্ফূটিত মুকুল। সোনারাঙ্গা সেই মুকুলের সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছে বাতাসে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব¡ ও গবেষণা কেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শরফ উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, এবার শীত ছিল বেশি। এ জন্য আগাম মুকুল খুব একটা আসেনি। শীতের পর তাপমাত্রা কমে আশার পর একটু দেরিতে মুকুল এসে গেছে। তিনি বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ গাছে মুকুল এসে গেছে। এর মধ্যে একটি বৃষ্টিপাতও হয়ে গেছে। এ বৃষ্টিতে মুকুলিত গাছে গুটি ধরতে সহায়ক হবে। এ অবস্থায় কোন কোন এলাকায় রোদ কম হলে সে সব এলাকার গাছে গাছে ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক বড় ধরনের কোন বিপর্যয় না হলে এবার রাজশাহী অঞ্চলে আমের ভাল ফলন হবে। আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত অনুকূলে থাকলে আমের ফলনের জন্য খুবই ভাল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন বাগান মালিকরাও। বাঘা ও চারঘাট উপজেলার কৃষকরা বলছেন, এবার মৌসুম পেরিয়ে গেলেও গাছে মুকুলের দেখা না পেয়ে হতাশ ছিলেন তারা। তবে শেষপর্যন্ত গাছভর্তি মুকুল প্রস্ফূটিত হওয়ায় তাদের মনে আশা জেগেছে। মুকুল আসার পর থেকেই বাগানে গাছের পরিচর্যা শুরু করেছেন তারা। রোগবালাইয়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচর্যার প্রয়োজনীয় ওষুধ স্প্রে করছেন তারা।
×