ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৭ মার্চের ভাষণের স্বীকৃতি

দেশের মানুষের গৌরব ও সম্মান বেড়েছে ॥ আনিসুজ্জামান

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২ মার্চ ২০১৮

দেশের মানুষের গৌরব ও সম্মান বেড়েছে ॥ আনিসুজ্জামান

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঘোষণা রণকৌশলের দিক দিয়ে অসাধারণত্ব, আবেগ আর স্বতঃস্ফূর্ততার পরিচায়ক। যে ভাষায় তিনি কথা বলতেন, সে ভাষায়ই তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর এই বক্তৃতা এখনও মানুষকে শিহরিত করে। এই ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়ে বাংলাদেশের মানুষের গৌরব-সম্মান আরেকবার আন্তর্জাতিকভাবে বেড়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ প্রণীত ‘৭ মার্চের ভাষণ কেন বিশ্ব-ঐতিহ্য সম্পদ : বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং মুখ্য বক্তা ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বইয়ের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান প্রমুখ। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। সভাপতির বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু সাতই মার্চের ঘোষণার আগে রাজনৈতিক কর্মী ও জনসাধারণ একদিকে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছেন, অন্যদিকে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করলে পাকিস্তানী সেনা শাসকদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাবে সে বিষয়েও অবহিত ছিলেন। এর এক মাস আগেই তিনি নিউজউইকের এক সাংবাদিককে অব দ্য রেকর্ডে বলেছিলেন, পাকিস্তানকে যেভাবে দেখা হয়, সেখানে আর ফেরার উপায় নেই। স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন কী না সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, আমরা তো সংখ্যাগরিষ্ঠ। পশ্চিমাদের ওপর নির্ভর করছে তারা বিচ্ছিন্ন হতে চায় কী না। এই বক্তৃতা নিয়েও অনেকে আমাদের দেশে কুণ্ঠিত কথাবার্তা বলেছেন। অনেকে বলেছেন এটি পাকিস্তানকে রক্ষা করার শেষ চেষ্টা। কিন্তু সেসব সময় থেকে আমরা অনেক পরে চলে এসেছি। তিনি ওই বক্তব্যের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারার পরিচয় দিয়েছেন। প্রধান অতিথি তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু দোতলায় উঠছেন, আমরা গিয়েছিলাম। একজন তাকে বললেন, জনগণ কিন্তু সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা ছাড়া মানবে না। তিনি তাঁকে বলেন, তুমি তোমার কাজ কর। আমি তাঁদের নেতা, আমি তাঁদের পরিচালিত করব, তাঁরা আমাকে নয়। আব্রাহাম লিংকন, মার্টিন লুথার কিং বা জন এফ কেনেডির মতো নেতার ভাষণ বিশ্বখ্যাত, কিন্তু সবগুলো লিখিত ভাষণ। বঙ্গবন্ধু তাঁর চশমাটা সেদিন ডায়াসের ওপর রেখে ১৮ মিনিটের ভাষণ দিয়েছিলেন, পুরোটাই অলিখিত। একদিকে তিনি পাকিস্তানীদের প্রতি চার দফা শর্ত আরোপ করলেন, আরেকদিকে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে বললেন। বললেন, আমরা ভাতে মারবো, পানিতে মারবো। প্রধানবক্তা নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সাত মার্চ বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে বাঙালীর হাজার বছরের যে আকাক্সক্ষা ও স্বপ্ন ছিল তা ধারণ করেছেন। তিনি ওই সময় আইনগতভাবে ছিলেন জনগণের প্রতিনিধি। ওই সময় সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করলে পুরো বিশ্বের সমর্থন হারাতেন। বিষয়টি তাঁকে খুব সতর্কতার সঙ্গে নিতে হয়েছে। তাঁর প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন ছিল। ওই সময় কি হচ্ছিল, অতীতে কী হয়েছিল, সামনে কি হবে সবগুলো বিষয় তিনি ধারণ করে নিয়ে আসেন তাঁর বক্তৃতায়। মানুষ সে বক্তৃতা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছেন।
×