সকালবেলা ঘুম ভাঙবে সুমধুর আজান ও পাখির ডাক শুনে। দুঃখজনক হলেও সত্য ঢাকা মহানগরীর বাসিন্দাদের ঘুম ভাঙে যানবাহন ও কলকারখানার ভারি যন্ত্রের বিকট শব্দে। শব্দ যা এখন অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছে গেছে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর উপ-শহরগুলো নীরব ঘাতক শব্দ দূষণের কবলে। আমি বিশেষ করে ঢাকা শহর গুলিস্তানের কথাই বলি, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট, বঙ্গবাজার, গোলাপ শাহ্ মাজার, সুন্দরবন স্কায়ার, স্টেডিয়াম মার্কেটের আশপাশে বিভিন্ন হকার তাদের পণ্যের পশরা সাজিয়ে বসে। তারা ভোক্তাদের আকৃষ্ট করার জন্য উচ্চ শব্দে মাইক বা মিনি সাউন্ড রেকর্ডার বাজায়। যা ওই অঞ্চলে সহনীয় মাত্রায় থাকে না। কেউ সাহস করে প্রতিবাদ করে না লোকমুখে অপদস্থ হবার ভয়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৬০ ডেসিবেল শব্দে মানুষের সাময়িক শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে। এবং ১০০ ডেসিবেল শব্দে চিরতরে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে।
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকা শহরে প্রায় এলাকায়ই সার্বক্ষণিক শব্দের গড় মাত্রা ১০০ ডিসিবেল। যা আমাদের জন্য স্বস্তিকর নয়।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের প্রধান বলেন, ‘এক গবেষণায় দেখা গেছে এইভাবে শব্দ দূষণ অব্যাহত থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ কানে কম শুনবে।’
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তার ছাড়পত্র কবিতায় লিখেছেন,
‘চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ অঙ্গীকার।’
আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কথা চিন্তা করে, শুধু আইন আর ফাইন করেই তুষ্ট না হয়ে বিভিন্ন এনজিও মানবাধিকার সংস্থার মাধ্যমে জোর প্রচারণা চালাতে হবে। ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে যানবাহন চালক ও মালিকদের সচেতন করতে হবে, হাইড্রোলিক হর্ন যাতে ব্যবহার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে। পাশাপাশি আবাসিক এলাকা থেকে অন্তত ৩০০/৪০০ মিটার দূরে ইট ও পাথর ভাঙার মেশিন স্থাপন করতে হবে। কারণ এই মেশিনের বিকট শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়। অনবরত শব্দ একটি মানুষকে বধির করে দিতে পারে, হৃদরোগ, আলসারসহ মারাত্মক মানসিক সমস্যা যেমন মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই এই শব্দ সন্ত্রাসের হাত থেকে আমাদের প্রিয় প্রজন্মকে মুক্তি দিতে হবে।
কাপাসিয়া, গাজীপুর থেকে