ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেটপিস থেকে গোল হজম রোধে কোচ জ্যাসনের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সেটপিস থেকে গোল হজম রোধে কোচ জ্যাসনের উদ্যোগ

রুমেল খান ॥ বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ দলের বহু পুরনো একটা রোগ আছে, যা আজ পর্যন্ত বহু চিকিৎসাতেও সারেনি। রোগের নাম সেটপিস থেকে গোল হজম! খেলায় জিতলে হলে বা হার এড়াতে হলে এই রোগ কাটিয়ে ওঠার বিকল্প নেই। সেজন্য গোলরক্ষদের মনোসংযোগ ধরে রাখার চর্চাটাও জরুরী। জাতীয় দলের নতুন গোলরক্ষক কোচ ওয়েলসের জ্যাসন রয় ব্রাউন গোলরক্ষকদের নিয়ে সাভারের জিরানির বিকেএসপিতে জাতীয় দলের কন্ডিশনিং ক্যাম্পে বিশেষভাবে কাজ করছেন। বাংলাদেশের ফুটবল-ইতিহাসের অন্যতম হাই-প্রোফাইল এই কোচ লন্ডনের বার্মেনজি শহরে জন্মগ্রহণ করলেও মাঠ মাতিয়েছেন ওয়েলস জাতীয় দলের হয়ে। প্রিমিয়ার লীগে খেলেছেন গিলিংহ্যাম, ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স, লিডস ইউনাইটেড ও কার্ডিফ সিটির হয়ে। তিনি জানিয়েছেন বাংলাদেশে আসার কারণ, ‘ইংল্যান্ডের সঙ্গে এদেশের ফুটবলের তুলনা চলে না। তবে সত্যিটা হলো আমি সারাটা জীবন চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবেসেছি। অর্ডর কাছে শুনেছি এখানকার ফুটবলের দুঃসময়ের কথা। আগ্রহটা সেখান থেকেই। কাজটা সহজ নয় জানি। তবে এটাও জানি কিভাবে কঠিন কাজগুলো সহজ করে করতে হয়’। খেলোয়াড়-গোলরক্ষক ব্রাউনের চেয়ে কোচ ব্রাউনের সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার যে কারোর জন্যই ঈর্ষণীয়। আর্সেনালের নারী দলের গোলরক্ষক কোচ ছাড়াও কাজ করেছেন গানারদের একাধিক বয়সভিত্তিক দলের হয়ে। সবশেষ ছিলেন ভিয়েতনামের কোচ। সেই অভিজ্ঞতাই আত্মপ্রত্যয়ী করছে ৩৫ বছর বয়সী জ্যাসনকে। তার ভাষ্য, ‘অল্পদিনেই বুঝেছি এখানে কজন প্রতিভাবান ফুটবলার আছে। প্রথমদিন থেকেই আমি তাদের মধ্যে পেশাদারিত্বের ছাপও দেখেছি। তবে ফিটনেসে এখনও ঘাটতি আছে। এই দুটোকে একসঙ্গে ক্লিক করতে হবে। তাদেরকে বুঝতে হবে তারা ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে। আপাতত এতটুকু হলেই চলবে।’ বিশ্বকাপ বাছাইসহ শেষ কটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে বাংলাদেশ যে গোলগুলো হজম করেছে, তার বড় একটা অংশই সেটপিস থেকে। এটি নিয়ে এখনই কাজ শুরু করে দিয়েছেন ব্রাউন। জানিয়েছেন আসন্ন সাফের আগেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবেন গোলরক্ষকরা। তিনি বলেন, ‘জানতে পেরেছি সেটপিসে সমস্যা আছে দলের। এটা নিয়ে অনেক কাজ করতে হবে। তবে আমার মনে হয় না এটা বড় কোন সমস্যা।’ আগামী ২৭ মার্চ লাওসের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের আগে ক্যাম্পে ডাক পাওয়া চার গোলরক্ষকে নিয়ে বিশেষ অনুশীলনের কথাও জানান ব্রাউন। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আগে পুরোপুরি পেশাদার জাতীয় ফুটবল দল গড়ে তোলা হবে। সাভারের জিরানির বিকেএসপিতে বেশ জোরেশোরেই চলছে বাংলাদেশ দলের ফিটনেস ক্যাম্প। খেলোয়াড়দের ফিনিশিং থেকে শুরু করে স্কিল নিয়েও কাজ করছেন কোচ এ্যান্ড্রু অর্ড। লাওসের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচের আগে কাতার ও থাইল্যান্ডে অনুশীলন ক্যাম্প বেশ কাজে দেবে বলে মনে করেন সহকারী কোচ মাহবুব হোসেন রক্সি। বিকেএসপির আর্টিফিশিয়াল টার্ফে অনুশীলন করছেন মামুনুল-মতিনরা। এই টার্ফ থেকেই হয়তো নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন ফুটবলাররা। পুরো একটা বছর ছিল না বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোন খেলা। লাল-সবুজের জার্সিটাও গায়ে জড়ানো হয়নি। তবে সামনেই আবারও শুরু হচ্ছে ব্যস্ততা। তাই নতুন বছরে আবারও নতুন স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। কন্ডিশন, ফিটনেস এবং গেম সিচুয়েশন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ফিনিশিংয়ের মেন্টালিটি তৈরির চেষ্টা চলছে। বয়সভিত্তিক দলগুলো অনেক গোল করে, সিনিয়র টিম কেন গোল পায় না? এই বিষয়ে সমন্বয়ের জন্যই কাজ করছেন অর্ড-রক্সি। এএফসি কাপের ম্যাচ থাকায় এখনও দলের সঙ্গে ক্যাম্পে যোগ দেননি ঢাকা আবাহনীর ফুটবলাররা। বিকেএসপিতে দু’সপ্তাহ কঠোর অনুশীলন করবেন মামুনুলরা। ২৮ ফেব্রুয়ারি কাতারে অনুশীলনের জন্য গেলেও দলটি দেশে ফিরবে ১৪ মার্চ। এরপর ১৯ মার্চ থাইল্যান্ডের উদ্দেশে রওয়ানা হবে জাতীয় ফুটবল দল। সেখানে ২১ ও ২৩ মার্চ স্থানীয় দু’টি ক্লাবের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলবে লাল-সবুজের দল। সেখান থেকেই দু’দিন পর তারা পৌঁছবে লাওসে স্বাগতিক জাতীয় দলের বিপক্ষে একটি ফিফা প্রীতি ম্যাচ খেলতে। সেখান থেকে আবার ২৭ মার্চ ঢাকায় ফিরবে দলটি। এভাবেই চলবে সাফের প্রস্তুতি।
×