ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাদেরকে আর কিভাবে রাজনীতি শেখাব ॥ এমাজউদ্দীন

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কাদেরকে আর কিভাবে রাজনীতি শেখাব ॥ এমাজউদ্দীন

বিডিনিউজ ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ‘রাজনীতি শেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন’ বলে আক্ষেপ করেছেন তার এক সময়ের শিক্ষক বিএনপিপন্থী পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ। বিএনপিকে ‘ঘরে বা অফিসে বসে’ রাজনীতি করতে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনায় এই কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাবেক শিক্ষক এমাজউদ্দীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগেই পড়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সংঘাতের দিকে নিতে সরকার উসকানি দিচ্ছে বলে বিএনপি নেতাদের অভিযোগের মধ্যে রবিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাদেরকে ঘরে বসে আন্দোলনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আপনারা যদি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেন তাহলে ঘরে করুন, অফিসে করুন, রাস্তায় কেন? জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছেন কেন? কাদেরের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এমাজউদ্দীন বলেন, আমার এককালীন ছাত্র আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি জেনারেল, তিনি বলেছেন- ঘরের মধ্যে থেকে রাজনীতি করেন অথবা অফিসে বসে রাজনীতি করেন। অফিসে বসে যে রাজনীতি হয় না, ঘরের মধ্যে থেকে যে রাজনীতি হয় না- এখন এই তরুণকে আমি কেমন করে শেখাব? শেখাতে পারিনি হয়ত, আমাদের ব্যর্থতা। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কথাটা ‘খানিকটা’ শুনে রাখা ভাল বলে মন্তব্য করে এমাজউদ্দীন বলেন, এভাবে দিন চললে তারপর পরিস্থিতি এমন অবস্থায় আসবে যখন আপনা-আপনি গতিটা দ্রুত হবে। হিংসাত্মক হওয়ার দরকার নেই। এজন্য অপেক্ষা বেশি দিন করার দরকার হবে না। কারণ হিংসা-প্রতিহিংসা, নতুন হিংসা-প্রতিহিংসার জন্ম দেয়। তিনি বলেন, নির্বাচন ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। ১০ থেকে সাড়ে ১০ লাখ মানুষ প্রায় ৫০ হাজার মামলায় আসামি বা জড়িত হয়ে আছে। তাদের অনেকে কারাগারে, নির্বাচনের আগে তাদের প্রস্তুতি পর্ব চলতে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকেই নিরপেক্ষ নির্বাচনের আবহ তৈরি করে দিতে হবে। এসব না করে কিছুতেই নির্বাচনের দিকে যাওয়া যাবে না। স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলন নামে একটি সংগঠন ‘বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং সঙ্কটে আগামী জাতীয় নির্বাচন’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। এলডিপির সভাপতি অলি আহমদও আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। অলি আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ঢাকাসহ সারাদেশ অবরোধ করেছে। আমি সেদিন মন্ত্রী ছিলাম। তাদেরকে দমন করা কোন কঠিন বিষয় ছিল না। কয়েকজন লোককে গ্রেফতার করলে সবকিছু দমন হতো। আমি যেহেতু মুক্তিযোদ্ধা, গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম, আমাদের হাতে গণতন্ত্র হত্যা হোক সেটা আমরা চাইনি। নির্বাচন কমিশন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্যুট-কোট পরে এয়ারকন্ডিশন রুমে দিন কাটাচ্ছেন তারা। মাঝে মাঝে বিএনপিকে তাড়িত করে বক্তব্য রাখেন। এটা ধোঁকাবাজি, বিএনপি প্রতিনিয়ত এই ধোঁকার শিকার হচ্ছে। বিগত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিতদের সবাইকে ডাকার পরামর্শ দিয়ে অলি বলেন, তাদেরকে বলতে হবে- আইনসম্মত ও সাংবিধানিকভাবে আওয়ামী লীগ যেভাবে অবরোধ করেছিল বা অবস্থান ধর্মঘট করেছিল সে ধরনের কর্মসূচীর দিকে যেতে। যে ভাল করবে আগামী দিন তাকেই পুরস্কৃত করা হবে, নমিনেশন দেয়া হবে। একটা পদ্ধতিগতভাবে চলতে হবে। প্রত্যেক দিন প্রেসক্লাবে বক্তব্য বা অবস্থান ধর্মঘটের মাধ্যমে খলেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি। প্রতিপক্ষকে দেখতে হবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন একটা রাজনৈতিক দল, যারা সব সময় লাঠিসোটা নিয়ে মারামারি করে নির্বাচনে জিতে এসেছে, মঞ্চ করে নির্বাচনে জিতে এসেছে, তারা প্রতিপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে কিভাবে অগ্রসর হতে হবে সেটা চিন্তা করতে হবে। আমরা ওই পন্থা অবলম্বন করতে চাই না, আমরা শান্তিপূর্ণ পন্থায় এগোতে চাই। ২০০৭-০৮ সালে আর্মির সময় যতগুলো মামলা হয়েছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সব মামলা নিষ্পত্তি করা উচিত। যারা দুর্নীতি করেছে তাদের অবশ্যই শাস্তি চাই। বেগম জিয়া ও তারেক জিয়াকে যে মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে সেখানে তারা সম্পৃক্ত নন। আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির।
×