ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষায় তীব্র দুর্ভোগ নেমে আসবে

সাড়ে ষোলো হাজার কিমি রাস্তা যান চলাচলের অযোগ্য হতে চলেছে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সাড়ে ষোলো হাজার কিমি রাস্তা যান চলাচলের অযোগ্য হতে চলেছে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ সড়ক যোগাযোগের খবর ভাল নয়, বরং দুঃসংবাদই। সারাদেশে ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়কের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বেহাল। অর্থাৎ বেশিরভাগ সড়কের অবস্থা এখন খারাপ। এর মধ্যে জেলা ও আঞ্চলিক সড়কগুলো সবচেয়ে নাজুক। সড়কের অধিকাংশ স্থানে পিচ ঢালাই উঠে গিয়ে ইট-সুড়কি বেরিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এ সব সড়কে অনেক স্থানে খোয়া-বালি উঠে গিয়ে শুধু মাটির ওপর দিয়ে চলছে যানবাহন। একটু বৃষ্টি হলেই বড় বড় গর্ত মৃত্যু ফাঁদ তৈরি হয়। গত বছর বন্যা ও বৃষ্টিতে সড়ক-মহাসড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাই বর্ষার আগে সড়কগুলো দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান স্থানীয়রা। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ১০টি জোনের ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামতের জন্য ৩ হাজার ২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া গেছে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই প্রেক্ষাপটে আসন্ন বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে মহা-দুর্ভোগের আশঙ্কা করো হচ্ছে। এ বিষয়ে সড়ক ও মহাসড়কের বিভাগের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, গত বছর বর্ষার কারণে সারাদেশে যে সব সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইতিমধ্যে তা মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি আগামী জুনের মধ্যে সকল সড়ক সংস্কারের কাজ শেষ হবে। এ ছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আলোকে সারাদেশের সড়ক রক্ষণারেক্ষণ কাজ চলছে। অর্থ বছরে সড়ক সংস্কারের সর্বমোট ১৮শ’ কোটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টসহ সড়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়ক মেরামত করা না গেলে দুর্ভোগ মাত্রা ছাড়াতে পারে। দ্রুত বেহাল সড়কগুলো অগ্রাধিকার ভিত্ততে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া না হলে আসন্ন বর্ষা ও ঈদকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ চরমে ওঠারও কথা বলছেন তারা। জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই সড়ক সংস্কারের কথা বলে আসছি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক রয়েছে সেখানে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বর্ষার আগে সড়কগুলো সংস্কার করা না গেলে দুর্ভোগমাত্রা ছাড়ানোর আশঙ্কার কথাও জানান পরিবহন মালিক সমিতির এই নেতা। জেলা ও আঞ্চলিক সড়ক বেহাল ॥ জানা গেছে, সারাদেশে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)’র ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৩ হাজার ৮১৩ কিলোমিটারের ৯৬টি জাতীয় মহাসড়ক, ৪ হাজার ২৪৭ কিলোমিটারের ১২৬টি আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ১৩ হাজার ২৪২ কিলোমিটারের ৬৫৪টি জেলা মহাসড়ক রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়কগুলো যান চলাচলের কিছুটা উপযোগী থাকলেও খুব খারাপ অবস্থা জেলা ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলো। প্রায় ১৬ হাজার ৪৮৯ কিলোমিটার সড়কই যান চলাচলের অনুপযোগী। এর মধ্যে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বগুড়া, ঢাকা-বরিশাল-খুলনা, ঢাকা-ফরিদপুর-যশোর মহাসড়কে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা। মাগুরা থেকে যশোর পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার সড়ক ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন সড়কে খানাখন্দ ও গর্তের কারণে যান চলাচল করছে ধীরগতিতে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও গোপালগঞ্জ এলাকায় অধিকাংশ সড়কের অবস্থা খারাপ। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ, গাজীপুরে, ভোলা, ঝালকাঠী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফরিদপুর, বাগেরহাট, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা সড়কগুলো যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে উন্নয়ন কাজ চলায় বিভিন্ন স্থানে ধুলা-বালিতে একাকার। সড়কের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ক্যাডেট কলেজ থেকে জামুর্কী পর্যন্ত মহাসড়কটি চার লেন উন্নীত করণ কাজ চলায় বিভিন্ন স্থানে ধুলার সৃষ্টি হচ্ছে। ধুলার কারণে মহাসড়কটিতে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলছে। ফলে এ মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে। এ ছাড়া প্রতিনিয়তই সড়কে যানবাহন বিকল হওয়াসহ ঘটছে দুর্ঘটনা। মহাসড়কের আশপাশের ঘরবাড়ি, দোকান আর গাছপালাও এখন ধুলায় ছেয়ে গেছে। সড়কটি দিয়ে চলাচলের সময় ধুলায় কিছুই দেখা যায় না এমনকী নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় চালক ও যাত্রীদের। ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে চলাচল করে বিনিময় পরিবহনের সুপারভাইজার কামাল হোসেন বলেন, ‘এই সড়ক দিয়ে চলতে হলে ধীরে ধীরে যাতায়াত করতে হয়। সামনে থাকা যানবাহন চলে গেলে পেছনের যানবাহনের চালক ধীর গতিতে যান চালিয়ে থাকেন। এতে সময় বেশি লাগছে। তাছাড়া ধুলার কারণে সামনে প্রায় ২৫/৩০ গজ কিছু দেখা যায় না। এতে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’ নোয়াখালীর সেনবাগ-সোনাইমুড়ী সড়কটির ২৪ কিলোমিটার যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এর মধ্য সেনবাগের গাজীরহাট থেকে ডাকবাংলোর পুকুর এলাকা পর্যন্ত (সাড়ে ছয় কিলোমিটার) ভাঙ্গা। এই সড়কটি মূলত সেনবাগ উপজেলার মানুষ চলাচল করে। নোয়াখালী ও ঢাকা-চট্টগ্রাম আসা-যাওয়ার জন্য এ সড়কের বিকল্প নেই তাদের। সড়কটি ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়ক থেকে শুরু হয়ে নোয়াখালী-কুমিল্লা সড়কের সঙ্গে মিশেছে। সড়কের গাজীরহাটের মোড় থেকে সেনবাগ ডাকবাংলোর পুকুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার এলাকার বেশির ভাগ স্থানে পিচ ঢালাই নেই। ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। এর মধ্যে গাজীরহাটের মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে প্রায় এক কিলোমিটার অংশের অবস্থা বেশি নাজুক। গর্তের কারণে গাড়ির গতিও কমে গেছে। সড়ক-সংলগ্ন ডমুরুয়া এলাকার বাসিন্দা মোঃ ইব্রাহিম বলেন, উপজেলার প্রধান এই সড়কটির পাঁচ-ছয় বছর ধরেই বেহাল। অবস্থা এমন, সড়ক দিয়ে হাঁটাও দুরূহ হয়ে পড়েছে। তবে দুটি ধাপে সেনবাগ-সোনাইমুড়ী সড়কের সংস্কারকাজ হাতে নেয়া হয় নোয়াখালীর সওজ বিভাগের সূত্র জানায়। প্রথম ধাপে গত বছরের মাঝামাঝি গাজীরহাটের মোড় পর্যন্ত সাড়ে ১৪ কিলোমিটার গর্ত সংস্কার করে পিচ ঢালাই করা হয়। বাকি অংশের কাজ গত সেপ্টেম্বরে শুরু হয়েছে, শিগগিরই পুরো সড়কের সংস্কার শেষ হবে বলে সওজ নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল জানান। এ ছাড়া ঢাকা-চাঁদপুর মহাসড়কের চাঁদপুরের মতলব ফেরিঘাট থেকে শ্রীরামপুর ব্রিজ পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়ক ও শরিয়তপুরের বাসস্ট্যান্ড থেকে মনোয়ারা থেকে গোসাইহাঁট হয়ে আবুপুর লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থা। খানা-খন্দর ও গর্তে ভরা সড়কে যান চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ছে বলে স্থানীয়রা জানান।
×