ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ (ডিপিএল) ॥ বিকেএসপিতে গাজী গ্রুপ-লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ মুখোমুখি, ফতুল্লায় শেখ জামালের;###;প্রতিপক্ষ প্রাইম দোলেশ্বর

প্রিমিয়ার ক্রিকেটে আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথ আজ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

প্রিমিয়ার ক্রিকেটে আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথ আজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সেই উত্তেজনা এখন আর আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে নেই। নেই রোমাঞ্চ। বাকি ম্যাচগুলোর মতোই এখন হয়ে গেছে এ দুই দলের ম্যাচ। তবুও ম্যাচটি আগের ‘চির প্রতিদ্বন্দ্বী’ দুই দল বলে কথা। আর ঢাকার কোন লীগে খেলা মানেইতো আবাহনী-মোহামেডান নিয়ে উত্তাপ থাকেই। কর্মকর্তাদের মধ্যে এখন আর সেই উত্তাপ না মিললেও, ক্রিকেটাররা মাঠে নিজেদের ঠিকই মেলে ধরতে চান। এমন ‘হাইভোল্টেজ’ ম্যাচে নিজেকে উজাড় করে দিতে পারলে যে সবার নজরে দ্রুতই আসা যায়। আজ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে (ডিপিএল) সেই আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথ। ম্যাচটি মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সকাল ৯টায় শুরু হবে। একইদিন বিকেএসপিতে গাজী গ্রুপ-লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ মুখোমুখি হবে। ফতুল্লায় শেখ জামালের বিপক্ষে লড়াই করবে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব। আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ আগে যখনই হতো, শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ত। চলত কথার লড়াই। কর্মকর্তারা কথার লড়াইয়ে যুক্ত হতেন। ক্রিকেটাররা ভুগতেন স্নায়ুচাপে। কিন্তু এখন সেই আলামত নেই। ম্যাচটির আগেরদিনও যেন সব কেমন নিশ্চুপ! আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের উত্তাপ যেটুকু আছে, তা যেন মিডিয়াই বাঁচিয়ে রেখেছে। খেলা আছে। সবার ভেতর বোধ যেন এতোটুকুই। কারও ভেতর আগের সেই অনুভূতিই এখন আর যেন হয় না। যে অনুভূতি ছোট বেলায় ছিল, ওটা এখন আর নেই। ম্যাচের আগে দুই দলের ক্লাব আগে অনেক গরম থাকতো। তিনদিন আগেই আবহ তৈরি হয়ে যেতো। ম্যাচের আগেরদিন তো একের পর এক টিম মিটিং চলত। যেভাবেই হোক, জিততে হবে। এমন কথাই বলা হতো। ক্রিকেটারদের ওপর চাপও প্রয়োগ করা হতো। হারলেই বিপদ ঘনিয়ে আসত। ক্রিকেটারদের কটুকথা শুনতে হতো! আগে থেকেই ম্যাচটিকে সামনে রেখে পুরোদমে প্রস্তুতিও চলত। মানসিক প্রস্তুতি, ক্রিকেটের প্রস্তুতি থাকত অন্যরকম। সেই জিনিসগুলো এখন আর দেখা যায় না। আবাহনী এখন আর আবাহনীর মাঠে অনুশীলন করে না। মোহামেডানও করে না। এখন দলের ক্রিকেটাররা সব এক স্থানে, মিরপুর একাডেমি মাঠে অনুশীলন করে। অনুশীলনের মাঝে খোশগল্পও চলে। আগে যেটি কোনভাবেই দেখা যেত না। ম্যাচের আগেরদিন শত্রুভাব যেন তৈরি হয়ে যেত। ক্রিকেট যুদ্ধে নামার আগে চলত ধুন্ধুমার কথার লড়াই। এখনও প্রস্তুতি নেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু অন্য আরেকটি ম্যাচের মতো করেই। ক্রিকেট বোর্ডে আবাহনী ও মোহামেডানের কমকর্তারাই আসন গেড়ে আছেন। আর তাই কর্মকর্তাদের মধ্যে নেই কথার যুদ্ধ। ক্রিকেটারদের ওপরই নেই বিশেষ চাপ। জিততেই হবে। সেই স্নায়ুচাপেও ক্রিকেটাররা এখন ভোগেন না। তবে ক্রিকেটারদের মধ্যে নৈপুণ্য দেখানোর জেদ ঠিকই থাকে। নৈপুণ্য দেখাতে পারলেই যে নজর কাড়া যাবে। জাতীয় দলে ঢোকার পথ অনেক পরিষ্কার হতে থাকে। এমন ম্যাচে যে এখনও সবার নজর থাকে। যদিও দর্শকশূন্যতা এখন ভোগায়! সেটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কারণেই কমে গেছে। তবুও যে দর্শকরা থাকেন, তা অন্য যে কোন ম্যাচের চেয়ে বেশিই থাকেন। দুই দলের মধ্যে এখন আর শত্রুভাব না থাকলেও, মাঠের লড়াইয়ে কিন্তু কেউই কোন ছাড় দেয় না। আবাহনী যেমন এবার কোন দলকেই ছাড় দিচ্ছে না। টানা পাঁচ ম্যাচের পাঁচটিই জিতে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে আছে। মোহামেডানকে হারাতে পারলে আরেকটি জয় মিলবে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে একটু এগিয়ে যাওয়া হবে। আর পাঁচ ম্যাচের মধ্যে তিন জয় পাওয়া মোহামেডান জিতলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। তাই আগের মতো সেই উত্তাপ না থাকলেও, দুই দলই চাইবে জিততে। আবাহনীর জেতার সম্ভাবনাই যেন বেশি দেখা হচ্ছে। দলটিতে যে নাসির হোসেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক ও লীগে টানা পারফর্ম করে যাওয়া মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদী হাসান মিরাজ, সানজামুল ইসলাম, এনামুল হক বিজয়, মোহাম্মদ মিঠুন, সাকলায়েন সজিব, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তরা আছেন। আর এ ক্রিকেটারদের টেক্কা দিয়ে, পারফর্ম করে, জয় তুলে নিয়ে বাজিমাত করার প্রতীক্ষায় আছেন মোহামেডানের অধিনায়ক শামসুর রহমান শুভ, রকিবুল হাসান, রনি তালুকদার, তাইজুল ইসলাম, শুভাশীষ রায়রা। কিন্তু তা কী সম্ভব? মোহামেডানকে কোনভাবেই জিততে দিতে রাজি নন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। রবিবার বলেছেন, ‘সব টিমই ভাল। আমাদের টিমটা একটু বেশিই ভাল। আমার কাছে মনে হয়। কাগজে-কলমে বা আমাদের টিমে যে নামগুলো আছে, আমার মনে হয় নামের ওপর যে রেপুটেশন আছে, সেটা অনুযায়ী যদি খেলতে পারি টিমগুলোর কষ্ট হয়ে যাবে আমাদের সঙ্গে ম্যাচ জেতা।’ আগের সেই উত্তেজনা না থাকা নিয়েও মোসাদ্দেক বলেন, ‘আমি যখন প্রথম বছর প্রিমিয়ার লীগ খেলি তখন মনে হয়েছিল আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ অনেক বেশি উত্তেজনা। এবার নিয়ে আমি ৫ বছর প্রিমিয়ার লীগ খেলতেছি। তো আমার কাছে এখন বিষয়টা এখন অনেক নরমালের মতো। একটা ম্যাচ, আগের পাঁচটা ম্যাচের মতো এটাও একটা ম্যাচ। তো আগেও যেভাবে অনুশীলন করেছি, যেভাবে খেলে আসছি, প্রস্তুতি ঠিক ওরকমই। মোহামেডানের সঙ্গে খেলা অনেক কিছু করতে হবে, ওরকম কিছু না।’ উত্তেজনা নেই। উত্তাপ নেই। রোমাঞ্চই যেন হারিয়ে গেছে! দর্শকহীনতায় ভুগছে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগ। এসব না ভেবে নিজেদের খেলাটাই খেলে যেতে চান মোসাদ্দেক, ‘যখন প্রথম খেলি, দেখি আবাহনী-মোহামেডান দুই টিমেরই ভাল দর্শক আছে। মাঠে খুব ভাল দর্শক হয়। আস্তে আস্তে এটা কমে যাচ্ছে। ঐতিহ্যটা ছিল, সেই জিনিসটা আমরা হারিয়ে ফেলছি কিনা, সেটা একটা দেখার বিষয়। হয়তো মানুষ নানান কাজে ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। যার যার কাজ নিয়ে। তারা আসলে ভাল লাগে। আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ হচ্ছে। দুটি দলই বড় নাম। সবাই চিন্তা করে একটা ভাল খেলা হবে। আমাদের কাজটা দর্শক নিয়ে না। আমাদের খেলাতে ফোকাস করাই ভাল।’ ক্রিকেটাররা সেই ফোকাসই দেন। আর তাতে করে যা একটু উত্তেজনা দেখা যায়। সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই আবাহনীর কাছে হারে মোহামেডান। আজ দুই দলের ম্যাচ আছে। আর সেটিতে সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের মধ্যে টানা তিন ম্যাচেই হারা মোহামেডান এবার জিততে পারে কিনা সেদিকেই নজর থাকছে।
×