ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সম্প্রীতির বারতায় সুফি উৎসবের সমাপ্তি

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সম্প্রীতির বারতায় সুফি উৎসবের সমাপ্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানুষে মানুষে সহাবস্থানের কথা বলে সুফিবাদ। ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের বদলে উচ্চারিত হয় মানবিক সমাজ বিনির্মাণের আহ্বান। মানবতার জয়গান গাওয়া সেই সম্প্রীতির সুরে শেষ হলো দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সুফি উৎসব। ‘সম্প্রীতির জন্য সঙ্গীত’ প্রতিপাদ্যে শুক্রবার শুরু হওয়া উৎসবের সমাপনী দিন ছিল রবিবার। এদিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত দশটা অবধি আধ্যাত্মবাদী চেতনার সুফি গান পরিবেশন করেছেন দেশ-বিদেশের শিল্পী ও সঙ্গীত দল। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব মোঃ ইব্রাহীম হোসেন খান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকাস্থ ইরানের রাষ্ট্রদূত আব্বাস ভায়েজি দেহনবী। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন উৎসবের সদস্য সচিব ইউসুফ মুহাম্মেদ। ইব্রাহীম হোসেন খান বলেন, এদেশের হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে রয়েছে সুফিবাদের প্রত্যক্ষ প্রভাব। কারণ অগণিত সুফিসাধক ও দরবেশের সমাগম ঘটেছে এই ভূখ-ে। তারা ছড়িয়ে দিয়েছেন মানুষে মানুষে সম্প্রীতির বাণী। আব্বাস ভায়েজি দেহনবী বলেন, মানবিকতার ধারণা থেকেই জন্ম নিয়েছে সুফিবাদ। চট্টগ্রামের লোকসঙ্গীত শিল্পী ইকবাল হায়দারের গান দিয়ে শুরু হয় পরিবেশনা পর্ব। তিনি গেয়ে শোনান ‘একটি গন্ধমের লাগিয়া আল্লায় বানাইলো দুনিয়া’ ও ‘হাছন রাজারে বাউলা কে বানাইলো রে’সহ কিছু গান। ফেরদৌস হালী গেয়ে শুনিয়েছেন ‘মহান আল্লাহ’ শিরোনামের সঙ্গীত। দীপঙ্কর দে গেয়েছেন ‘কী জ্বালা দিয়া গেলা মোরে, নয়নের কাজল পরানের বন্ধুরে’ ও ‘এই নিদানে তুমি বিনে’। শ্রোতাকে উচ্ছ্বসিত করে কাঙ্গালিনী সুফিয়া গেয়েছেন ‘বুড়ি হইলাম তোর কারণে’সহ কয়েকটি গান। বাউল জাহাঙ্গীরের গাওয়া গানের শিরোনাম ছিল ‘আজ আমার মন ভাল নাই আইসো নীল জলে’। এছাড়াও একক কণ্ঠে গান শুনিয়েছেন সমীর বাউল। সমাপনী রাতে সুফি ঘরানার গান শুনিয়ে শ্রোতার হৃদয় রাঙিয়েছেন জাগৃতি লুথরা ও নীতা পান্ডে নামের ভারতের দুই বোনের সঙ্গীতদল রুহানি সিস্টার্স। ইরানের সঙ্গীতদল জেরিওবের পরিবেশনাও ছিল শ্রোতাদের জন্য দারুণ উপভোগ্য। সব শেষে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে সঙ্গীতদল জলের গান। সংস্কৃতিমন্ত্রী মন্ত্রণালয় ও শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় যৌথভাবে এ উৎসবের আয়োজন করে আল্লামা রুমি সোসাইটি বাংলাদেশ ও হাটখোলা ফাউন্ডেশন। থিয়েটারের দ্রৌপদী পরম্পরা নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন ॥ ঢাকার মঞ্চে এলো আরেকটি নতুন নাটক। মহাভারতের কেন্দ্রীয় চরিত্র দ্রৌপদীকে উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে নাটকটি। এ নাটকের মাধ্যমে সমকালের আয়নায় রূপায়ণ ঘটেছেন প্রাচীন আমলের দ্রৌপদীর। চরিত্রটির মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে পুরুষশাসিত সমাজের যাঁতাকলে পিষ্ঠ নারীর দীর্ঘশ্বাস। মহাভারতের ছায়া অবলম্বনে প্রবীর দত্তের নির্দেশনায় দ্রৌপদী পরম্পরা নামের প্রযোজনাটি মঞ্চে এনেছে থিয়েটার (আরামবাগ)। রবিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। প্রযোজনাটির উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। উদ্বোধন করেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ড. নিলুফার বানুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন নাট্যজন গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সহ-সভাপতি ঝুনা চৌধুরী ও সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজামান। মহাভারতের দ্রৌপদী চরিত্রটি কম-বেশি সকলেরই চেনা। তবে মহাভারতে দ্রৌপদী যে কথাগুলো বারংবার বলতে চেয়েও বলতে পারেনি প্রযোজনার দ্রৌপদী সেই না বলা কথাগুলো বলেছে। অপ্রিয় হলেও নাটকের মাধ্যমে উচ্চারিত হয়েছে সেই অপ্রিয় সত্য কথন। মহাভারতের সময়ে ঘটনায় তাকে যেভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছে সেই চিত্র উন্মোচনের মাধ্যমে অবক্ত ও অপ্রিয় সত্য কথাগুলোই উঠে এসেছে নাটকে। মহাভারতের আলোকেই নাট্যকার দ্রৌপদীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন নাটকে। তবে আখ্যানটি বিস্তৃত হয়েছে মহাভারত থেকে বর্তমান পর্যন্ত। দ্রৌপদী পরম্পরা মূলত মহাভারতকে উপজীব্য করে সমাজ, ধর্ম ও রাজনীতিকে বহুমাত্রিক রূপে প্রকাশ করেছে। সেখানে সহজাতভাবেই বর্ণিত হয়েছে গভীর জীবন দর্শন। যে জীবনদর্শনের আদর্শে মহাভারতের দ্রৌপদী সমকালের আয়নার ধরা দেয় মহাভারতী হয়ে এবং মহাভারতে তার না বলাগুলো বলে অকপটে। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাহমিনা আক্তার, আকেফা আলম, ইউশা আনতারা প্রপা, রফিকুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম বাদল, শাহরিয়ার ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির, শংকর চন্দ্র সরকার, লেনিন ফিরোজী, রাব্বানী এবং প্রবীর দত্ত। নাটকটির মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন রফিক উল্যাহ। পোশাক পরিকল্পক ড. আইরিন পারভীন লোপা, সঙ্গীত পরিকল্পক শিশির রহমান, আলোক পরিকল্পক শামীমুর রহমান এবং পোস্টার ডিজাইনার শিল্পী সৈয়দ ইকবাল। কথাশিল্পী শওকত ওসমানের নিদর্শন হস্তান্তর ॥ বরেণ্য কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমানের নিদর্শন হস্তান্তর করা হলো জাতীয় জাদুঘরে। রবিবার জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সভাকক্ষে এ হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অধ্যাপক শরিফ নাফি আস-সাবের তার কাছে সংরক্ষিত শওকত ওসমানের নিজ হাতে আঁকা চিত্রকর্ম, ছড়া ও চিঠিসংকলিত তিনটি পোস্টকার্ড জাদুঘরে হস্তান্তর করেন। জাদুঘরের পক্ষে নিদর্শনসমূহ গ্রহণ করেন শওকত ওসমানের ছেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিকের আরেক ছেলে জানেসার ওসমান ও জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। অধ্যাপক শরিফ নাফি আস-সাবের বলেন, রবীন্দ্র বলয়ের বাইরে থেকে যারা জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছিলেন তাদের অন্যতম ছিলেন শওকত ওসমান। সাহিত্যিক মোতাহার হোসেন চৌধুরীকে পাঠানো স্কেচ ও লিখিত পোস্টকার্ডেও মাধ্যমে তার সমাজ সচেতন চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ইয়াফেস ওসমান বলেন, বাবা প্রায়ই বলতেন আমি ছাত্র ধনে ধনী। সে সময় যোগাযোগ এত সহজ ছিল না। পোস্ট কার্ডের মাধ্যমে যোগাযোগ করা ছিল সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু সেই সাধারণ ব্যাপারটিও একটি মানুষ অসাধারণ করতে পারেন তা এই পোস্ট কার্ডগুলো দেখলে বোঝা যায়। তিনি আরও বলেন, বাবা নিজ পরিবারের মধ্যে তার ভালবাসা সীমাবদ্ধ রাখেননি।
×