ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তিরক্ষীদের কৌশলগত এবং কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধিই মূল লক্ষ্য

শান্তিদূত-৪ প্রশিক্ষণ

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

শান্তিদূত-৪ প্রশিক্ষণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত শান্তিরক্ষীদের কৌশলগত এবং কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি করাই শান্তিদূত-৪ প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য। ইউএন মিশন এলাকায় গমনপূর্ব প্রশিক্ষণ, পারস্পরিক যোগাযোগ ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মূল বিষয়গুলোর ওপর ধারণা দেয়াই এ অনুশীলনের অন্যতম বিষয়বস্তু। অনুশীলনে মোট ২২ দেশের সেনা সদস্য অংশ নেবেন। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি এই অনুশীলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। টানা ১৪ দিন চলার পর ১২ মার্চ এই অনুশীলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক কমান্ড কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত অনুশীলন শান্তিদূত-৪ উপলক্ষে শনিবার ঢাকা সেনানিবাসস্থ আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরে (আইএসপিআর) সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন্স ট্রেনিংয়ে (বিপসট) প্রধান প্রশিক্ষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘অনুশীলন শান্তিদূত-৪’ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ওপর পরিচালিত একটি বহুজাতিক অনুশীলন। এই প্রশিক্ষণ ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট) এ অনুষ্ঠিত হবে যা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ইউএস প্যাসিফিক কমান্ড (ইউএসপ্যাকম) কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত গ্লোবাল পিস অপারেশনস্ ইনিশিয়েটিভ (জিপিওআই) এর পৃষ্ঠপোষকতায় শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর পরিচালিত বহুজাতিক অনুশীলন। শান্তিদূত শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘শান্তির বার্তাবাহক’। অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের সামরিকবাহিনীর সদস্যদের পেশাগত ও কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ইউনিট পর্যায়ে অত্যাবশ্যক কর্মকা-ের ওপর সার্বিক প্রশিক্ষণ প্রদান এ অনুশীলনের উদ্দেশ্য। সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিআর পরিচালক ও মার্কিন সেনাবাহিনীর মেজর ক্যাসান্ড্রা গেসেকিসগ নিজ উর্ধতন সামরিক ও অসামরিক কর্র্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অনুশীলনটি ইউএস প্যাসিফিক কমান্ড দ্বারা পরিচালিত মাল্টিন্যাশনাল পিস কিপিং ইভেন্ট (এমপিই) প্রতিবছর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে পরিচালিত হচ্ছে এবং বিপসটে ২০০২, ২০০৮ ও ২০১২ সালে একই ধরনের অনুশীলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত শান্তিরক্ষীদের কৌশলগত এবং কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি করাই শান্তিদূত-৪ এর উদ্দেশ্য। ইউএন মিশন এলাকায় গমনপূর্ব প্রশিক্ষণ, পারস্পরিক যোগাযোগ ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মূল বিষয়গুলোর ওপর ধারণা প্রদান এ অনুশীলনের অন্যতম বিষয়বস্তু। অনুশীলন শান্তিদূত-৪ তিনটি ভাগে একই সময়ে পরিচালিত হবে; ফিল্ড ট্রেনিং ইভেন্ট (এফটিই), স্টাফ ট্রেনিং ইভেন্ট (এসটিই) এবং ক্রিটিক্যাল এনাবেলার ক্যাপাবিলিটি এনহান্সমেন্ট (২সিই)। এছাড়াও আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে দিনব্যাপী একটি স্ট্র্যাটেজিক লেভেল সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে বাংলাদেশসহ ২২টি দেশের মোট ১৩১৯ এর বেশি অংশগ্রহণকারী যোগদান করবেন। দেশসমূহ হলো অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, বসনিয়া-হারজেগভিনা, কানাডা, ফিজি, ঘানা, গ্রেট ব্রিটেন, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, কর্ঘিজস্তান, মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, নিউজিল্যান্ড, পেরু, ফিলিপাইন, রুয়ান্ডা, সেনেগাল, সিয়েরালিওন, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, ইউএসএ এবং ভিয়েতনাম। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অনুশীলন শান্তিদূত-৪ এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের মধ্যে আঞ্চলিক বন্ধন, নিরাপত্তা ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে দক্ষতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। ফিল্ড ট্রেনিং ইভেন্ট প্রশিক্ষণে বিভিন্ন ধরনের লেইন ট্রেনিং এর পাশাপাশি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাস্তবধর্মী পরিস্থিতির আলোকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। উক্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অবলোকন করার জন্য ইউএন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিরা সার্বক্ষণিকভাবে উপস্থিত থাকবেন। বর্তমানে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী শীর্ষদেশ সমূহের অন্যতম। বিপসট এর মাধ্যমে প্রদানকৃত উন্নত প্রশিক্ষণ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ভূমিকা পালনে অন্যতম সহায়ক বলে প্রতীয়মান হয়। অনুশীলন শান্তিদূত-৪ এর মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও পারস্পরিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক গুণ বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা যায়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে এ অনুশীলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশ ও বিদেশের উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত থাকবেন। দু’সপ্তাহ একটানা চলার পর আগামী ১২ মার্চ অনুশীলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী। শেষ দিনেও উচ্চপদস্থ সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
×