ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অস্ত্র ব্যবসায়ীদের পক্ষ নেয়ার অভিযোগ

ট্রাম্পের প্রস্তাবে শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্র প্রতিযোগিতার শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ট্রাম্পের প্রস্তাবে শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্র প্রতিযোগিতার শঙ্কা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সে দেশের প্রভাবশালী অস্ত্র ব্যবসায়ী গ্রুপ বৃহস্পতিবার এক সম্মেলনে বিভিন্ন স্থানে গুলিবর্ষণের ঘটনা অস্ত্র হাতে নিয়ে সমাধানের পন্থা বাতলে দিয়েছেন। ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডের যে স্কুলে গুলিবর্ষণে ১৭ জন নিহত হয় সে স্কুলের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা অস্ত্রসজ্জিত থাকলেও তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হন, এ বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর ন্যাশনাল রাইফেল এ্যাসোসিয়েশন (এনআরএ) প্রধান ও অস্ত্র ব্যবসায়ীরা তাদের পক্ষে এক জোরালো যুক্তি খুঁজে পেয়েছেন। এএফপি। এনআরএ প্রধান ওয়েন লা পিয়েরে বলেন, এটিকে একটি দুঃখজনক ঘটনার নির্লজ্জ রাজনীতিকরণ বলা যায়। তিনি তার সংস্থার নীতির প্রতি পুনরায় সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, ‘দুষ্ট লোককে ঠেকাতে হলে ভাল মানুষের অস্ত্র হাতে নিতে হয়। অপরদিকে ট্রাম্প শিক্ষকদের অস্ত্রসজ্জিত করার এক বিতর্কিত প্রস্তাব করে নতুন করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। শুধু পার্কল্যান্ড নয়, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষক সমাজের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়াকে অবিবেচনাপ্রসূত প্রস্তাব বলে সমালোচনা করেছেন শিক্ষক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ এবং এর মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, এনআরএকে সামনে রেখে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীরা যদি বর্তমান সঙ্কট কাটিয়ে ওঠে। শিক্ষকদের অস্ত্রসজ্জিত করতে পারে, তবে এ মওসুমেই তারা কয়েক মিলিয়ন ডলার কামিয়ে নিতে সক্ষম হবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষকদের মোট সংখ্যা সাত লাখের মতো। এই সাত লাখকে অত্যাধুনিক অস্ত্রেসজ্জিত করা গেলে অস্ত্র খাতে মুনাফা বিলিয়ন ডলারেও পৌঁছে যেতে পারে। তাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের কিছু সদস্যকে সামনে রেখে এনআরএ সংবিধানের দ্বিতীয় ধারায় বর্ণিত ব্যক্তি নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা নিয়ে সোচ্চার হয়েছে। এ প্রসঙ্গে লা পিয়েরে বলেন, যারা এখন একটি হত্যা ঘটনা নিয়ে সোচ্চার হয়েছে তারা একটি গোপন রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছে। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। তারা বন্দুক বহনের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করতে চায়। কারণ, তারা এনআরএকে ঘৃণা করে, তারা পবিত্র সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীকে ঘৃণা করে এবং তারা ব্যক্তি স্বাধীনতাকে ঘৃণা করে। এনআরএ প্রধানের এই যুক্তি ট্রাম্পের বক্তব্যকে জোরদার করেছে। তাই মার্কিন স্কুলগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে ট্রাম্প যখন হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে বসেন তখন তিনি স্কুলগুলোর নিরাপত্তায় আরও অস্ত্র সরবরাহের পক্ষে তার সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আগ্নেয়াস্ত্রমুক্ত স্কুলগুলো বন্দুকধারী দুষ্কৃতকারীদের চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে। তাই যেসব শিক্ষক গোপন আগ্নেয়াস্ত্র রাখতে চান তাদেরকে ট্রাম্প বোনাস হিসেবে বন্দুক দেয়ার প্রস্তাব করেন। এর আগে তিনি এসল্ট রাইফেলের মতো বন্দুক ক্রয়ের জন্য বয়সসীমা ১৮ থেকে ২১ বছরে উন্নীত করার প্রস্তাব দেন। উল্লেখ্য, বর্তমান আইনে ১৮ বছরের যে কেউ এসল্ট রাইফেলের মালিক হতে পারে, যার দরুন ফ্লোরিডা স্কুল হত্যার আসামি নিকোলাস ক্রুজের (১৯) মতো মানসিকভাবে অসুস্থ একটি লোক এত মানুষকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। কিন্তু ট্রাম্প বন্দুক ক্রয়ের এই বয়সসীমা ১৮ থেকে ২১-এ উন্নীত করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে ঘোরতর সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, রিপাবলিকান অনেক কংগ্রেস ও সিনেট সদস্য অস্ত্র ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বিশাল অঙ্কের মাসোহারা পান, তারা কী এই প্রস্তাব আইনে পরিণত হওয়ার পক্ষে ভোট দিবে তা নিয়ে এখনই সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাম্প নিজেও এনআরএ’র প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতি প্রবণ। কারণ এনআরএ তার নির্বাচনী তহবিল ৫০ মিলিয়ন ডলার চাঁদা দিয়েছিল। কিন্তু ফ্লোরিডার স্কুলে নির্মম গণহত্যার ব্যাপক প্রতিক্রিয়া এমন হয়েছে, কেউ যদি জনগণের প্রতি সহানুভূতি সম্পন্ন না হয়ে সংবিধানের দোহাই দিয়ে এই সমস্যা পাশ কাটিয়ে যেতে চায় তবে এটি হবে তার রাজনৈতিক আত্মহত্যা। একটি অর্থগৃন্ধু বিবেক ও মানবতাবর্জিত রাজনীতিক হিসেবে সে ব্যক্তি মার্কিন জনগণের কাছে প্রত্যাখ্যাত হবে।
×