ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সঙ্কট

নেদারল্যান্ডস জাতিসংঘে সজাগ থাকবে

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নেদারল্যান্ডস জাতিসংঘে সজাগ থাকবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সজাগ থাকবে নেদারল্যান্ডস। এছাড়া বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে দু’দেশের মধ্যে জ্ঞান ও উদ্ভাবনমূলক বৃহত্তর অংশীদারিত্ব জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। বুধবার দি হেগে বাংলাদেশ এবং নেদারল্যান্ডের মধ্যে অনুষ্ঠিত তৃতীয় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। এদিকে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক নেদারল্যান্ডে প্রথমবারের মতো একটি শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক এবং ডাচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল ইওকা ব্রান্ড তৃতীয় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে দু’দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে নেদারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল ছাড়াও কৃষি, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিনিধিরা প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করেন । বাংলাদেশ এবং নেদারল্যান্ডের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে চলমান বহুমুখী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে জোরদারকরণ এবং নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। দু’পক্ষ নেদারল্যান্ডে ২০১৫ সালের নবেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারী সফরে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পর্যালোচনা এবং ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ এর যৌথ উদ্বোধনের লক্ষ্যে ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটেকে এ বছর বাংলাদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণের বিষয়ে আলোচনা করে। পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ প্রণয়নে নেদারল্যান্ডের কারিগরি সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানান। ডাচ পক্ষ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের জ্ঞান ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং কারিগরি সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস প্রদান করে। এছাড়াও দু’পক্ষ বাংলাদেশের টেক্সটাইল এবং তৈরি পোশাক, ভূমি পুনরুদ্ধার, সাইবার নিরাপত্তা, সমুদ্র অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ, গ্রিন হাউসে কৃষিচাষ, গবাদি পশুপালন, মৎস্যচাষ ইত্যাদি সেক্টরের উন্নয়নে সহযোগিতার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে ডাচ পক্ষ বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরকালে এবং বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জন প্রচেষ্টায় সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করে। বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশকে সমর্থন করায় পররাষ্ট্র সচিব নেদারল্যান্ডসকে ধন্যবাদ জানান। ডাচ সেক্রেটারি জেনারেল জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় এবং মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন। আগামী মার্চে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নেদারল্যান্ডের সভাপতিত্বকালে তাদের রোহিঙ্গা বিষয়ে সজাগ থাকার আশ্বাস প্রদান করেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে নেদারল্যান্ডের নির্বাচনে বাংলাদেশের সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান ডাচ সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি আরও জানান, নেদারল্যান্ডস জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তাদের সদস্য কালে সংঘর্ষ প্রতিরোধ, নৃশংস অপরাধের জন্য দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সংস্কার বিষয়ে অগ্রাধিকার প্রদান করবে। এছাড়াও ডাচ সরকার নৃশংস অপরাধীদের তাদের কৃতকর্মের জন্য দায় নির্ধারণের অভিপ্রায় পুনঃপ্রকাশ করে। বাংলাদেশ এবং নেদারল্যান্ডের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের প্রথম বৈঠক ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে দি হেগে এবং দ্বিতীয় বৈঠক ২০১৬ সালের মে মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে বুধবার পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক শহীদ মিনার নির্মাণের লক্ষ্যে দি হেগের জাউডারপার্কে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার জন্য সংঘটিত ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনকে অনুসরণ করে সারা বিশ্বে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে মানবতা ও বহু ভাষাবাদ প্রচারের উদ্দেশে নেদারল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস গত কয়েক বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে। দূতাবাসের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফলে, ২০১৭ সালের অক্টোবরে হেগ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ঐতিহ্যবাহী জাউডারপার্কে একটি জমি বরাদ্দ প্রদান করে। বর্তমানে শহীদ মিনার নির্মাণের নক্সা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। কর্মদিবসে বৃষ্টিপাত ও প্রচ- ঠা-া উপেক্ষা করে নেদারল্যান্ডস এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। প্রবাসী বাংলাদেশীরা ছাড়াও ছাত্র-ছাত্রী, দূতাবাস কর্মকর্তা, মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় বাসিন্দা এবং অন্যান্য অতিথিরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পররাষ্ট্র সচিব ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য জমি প্রদান করায় হেগ মিউনিসিপ্যাল ??কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সকল মাতৃভাষা সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধ এবং বাঙালী জাতির মুক্তির জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুপ্রতিষ্ঠিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। নেদারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল তার বক্তব্যে শহীদ মিনার নির্মাণের পর তা রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের অনুরোধ করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ এ একাত্মতার মাধ্যমে বাঙালী জাতি যেভাবে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল সেই চেতনা ধারণ করে তিনি সবাইকে একত্রিত থাকার আহ্বান জানান। হেগের উপ-মেয়র রবিন বালদেবসিং তার বক্তব্যে বলেন, শহীদ মিনার তথা ভাষা স্মৃতিস্তম্ভটি বাংলা ভাষা আন্দোলনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হলেও এই স্মৃতিস্তম্ভটি বিশ্বের সকল ভাষার চিত্র তুলে ধরেছে। হেগ মিউনিসিপাল কর্তৃপক্ষ এই ঐতিহাসিক ঘটনার অংশ হতে পেরে আমরা আনন্দিত। একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস উপলক্ষে দূতাবাস আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং অমর একুশে উদ্যাপনের জন্য দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
×