ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ভারত মিডিয়া সংলাপের সমাপনী

হাসিনা ও মোদির আমলেই তিস্তা চুক্তি করার আহ্বান কাদেরের

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

হাসিনা ও মোদির আমলেই তিস্তা চুক্তি করার আহ্বান কাদেরের

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির বর্তমান সরকারের আমলেই তিস্তা চুক্তি করার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এছাড়া রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের লক্ষ্যে মিয়ানমারের ওপর চাপ দেয়ার জন্যও ভারতের প্রতি অনুরোধ করেছেন তিনি। বুধবার রাজধানীর হোটেল রেডিসনে বাংলাদেশ-ভারত মিডিয়া সংলাপের সমাপনী অধিবেশনের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট ল এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (আইসিএলডিএস) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী মিডিয়া সংলাপের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ওবায়দুল কাদের। এ অধিবেশনে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার ড. আদর্শ সোয়াইকা। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, আইসিএলডিএসের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, তাদের সরকারের আমলেই তিস্তা চুক্তি হবে। আমরা আশা করব, এই দুই সরকার ক্ষমতায় থাকাকালেই যেন চুক্তিটি সম্পন্ন হয়। এই চুক্তি বাস্তবায়নে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যেন দিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকারকে সহযোগিতা করেন, এটাও আমাদের প্রত্যাশা। তিস্তা চুক্তির পক্ষে যুক্তি দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিস্তায় পানি না থাকায় আমাদের উত্তর জনপদ শুকিয়ে গেছে। সেখানে হেঁটে নদী পার হওয়া যায়। তাই এই চুক্তি হওয়াটা জরুরী। এছাড়া আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি। জনগণের কাছে আমাদের জবাবদিহিতা রয়েছে। আগামী ৭-৮ মাস পর আমাদের নির্বাচন। এটাও আমাদের মনে রাখতে হবে। কেননা আমাদের জনগণের কাছেই যেতে হবে। ভারতীয় সাংবাদিকদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা এখন রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলা করছি। মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কও রয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রেখেই রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এ লক্ষ্যে ভারতীয় গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতাও চান ওবায়দুল কাদের। যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে আমরা ভারতকে সহযোগিতা করে আসছি। বিশেষ করে ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যে স্থিতিশীলতা আমরা প্রত্যাশা করি। আর এখানে আমাদের বিকল্প হচ্ছে পাকিস্তানপন্থীরা। এটাও আপনাদের মনে রাখা প্রয়োজন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত পরীক্ষিত ও বিশস্ত বন্ধু। এই বন্ধুত্বকে আমরা আরও জোরদার করতে চাই। সে কারণে এখানে গণমাধ্যমের একটি শক্তিশালী ভূমিকা রয়েছে। দুই দেশের গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে আরও দৃঢ় ভূমিকা নেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান। তারানা হালিম বলেন, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে বিভিন্ন সময় বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের দ্বারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে। তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি কখনোই করেনি। আওয়ামী লীগের রাজনীতিই হলো অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার ড. আদর্শ সোয়াইকা বলেন, বিগত নয় বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গভীর হয়েছে। আগামী দিনেও এই সম্পর্ক ধরে রাখতে হবে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক বাড়াতে গণমাধ্যম কর্মীরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এ বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতা করার জন্য তিনি আহ্বান জানান। মোহাম্মদ জমির বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে সহযোগিতা ও বন্ধুত্ব বাড়ানোর জন্য এই মিডিয়া সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। এতে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামীতে এই ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। সেমিনারের অপর একটি অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান খান, প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যম বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু ও ক্যাচ নিউজ পত্রিকার সাবেক সম্পাদক ভারত ভূষণ। প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যম বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে ঢাকা-দিল্লীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কোন সুযোগ নেই। এই সম্পর্ক নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কোন কারণ নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ ও ভারত মধ্যে সম্পর্ক বাড়ানোর লক্ষ্যে এই মিডিয়া সংলাপের আয়োজন করা হয়। তিন দিনব্যাপী আলোচনার বিভিন্ন পর্বে অংশ নেন উভয় দেশের সাংবাদিকরা। আলোচনার একাধিক পর্বে অংশ নেন ভারতের টেলিগ্রাফ পত্রিকার রাজনীতি ও নীতি বিভাগের ব্যুরো চিফ দেবোদিপ পুরোহিত, দিল্লীর প্রেসক্লাবের প্রেসিডেন্ট গৌতম লাহিড়ী, টেলিগ্রাফ পত্রিকার সম্পাদক জয়ন্ত রায় চৌধুরী, টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকার সহকারী সম্পাদক মহুয়া চট্টোপাধ্যয়, আনন্দবাজার পত্রিকার সহকারী সম্পাদক অনামিত্র চ্যাটার্জি প্রমুখ। ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট ল এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ তিন দিনব্যাপী এই মিডিয়া সংলাপের আয়োজন করে। সোমবার থেকে শুরু হওয়া তিনদিনের এই সংলাপে ভারতের নয়াদিল্লী ও কলকাতা থেকে ২৩ জন সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট যোগ দেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের গবেষক, কূটনীতিক সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্টরা অংশ নেন। ভারতীয় সাংবাদিকরা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। এছাড়া একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান। বুধবার তিনদিন ব্যাপী এ সংলাপ শেষ হয়।
×