ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালের প্রথম শহীদ মিনার

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বরিশালের প্রথম শহীদ মিনার

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ শহরের অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৫২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন শহীদ মিনারে শোকের প্রতীক কালো পতাকা এবং সংগ্রামের প্রতীক লাল পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। এর আগে জনৈক মোহাম্মদ সুলতান তার দোকানের ১০ গজ সাদা কাপড় দিয়ে শহীদ মিনার মুড়ে দিয়েছিলেন। পুষ্পস্তবক দিয়ে বরিশাল রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আবুল হাশেম শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে সরকারী নির্দেশে পুলিশ ওই শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে ফেলেছিল। জীবিত থাকাকালীন বরিশালের কয়েকজন ভাষা সৈনিকের স্মৃতিচারণ ও বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘ভাষা আন্দোলনের আঞ্চলিক ইতিহাস’ গ্রন্থ সূত্রে জানা গেছে, ভাষা আন্দোলনের প্রথম সংগ্রাম শুরু হওয়ার পূর্বে ১৯৪৮ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে শেখ মুজিবুর রহমান বরিশালে এসে বিএম কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সভা করে ছাত্রদের সংগঠিত করেন। শেখ মুজিবুর রহমান বরিশালে সভা করে ঢাকায় যাওয়ার পর বাংলা ভাষার দাবিতে প্রদেশব্যাপী ধর্মঘট করে সেক্রেটারিয়েট ঘেরাও করা হয়। ওইদিন শেখ মুজিবুর রহমানসহ বরিশালের গৌরনদী থানার কাজী গোলাম মাহবুব, সরদার ফজলুল কবির গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকার এক জনসভায় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করার পর পরই এর প্রতিবাদে বিভিন্ন দলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয় ‘রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ’। ২৮ সদস্যবিশিষ্ট ওই কর্মপরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন বরিশালের কৃতী সন্তান কাজী গোলাম মাহবুব। এছাড়া ওই কমিটিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বরিশালের আরও পাঁচজন। ফলে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের ঘোষণার উত্তাপ বরিশালেও ছড়িয়ে পরে। কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের আহ্বানে বরিশালে ‘২১ ফেব্রুয়ারি’ পালনের প্রস্তুতি চলে। আওয়ামী মুসলিম লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের উদ্যোগে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য ‘পতাকাদিবস’ পালন শুরু হয়। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এ নামে পতাকা ও ব্যাজ বিতরণ এবং পোস্টারিং চলতে থাকে। কর্মীরা টিনের চোঙা নিয়ে রাস্তায় প্রচার কাজ চালায়। ওই চোঙা ফুকানোর অন্যতম নায়ক ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নিখিল সেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি আব্দুল মালেক খানকে সভাপতি এবং যুবলীগের সম্পাদক আবুল হাশেমকে আহ্বায়ক করে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট ‘বরিশাল রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়। বরিশাল যুবলীগের সভাপতি আলী আশরাফ ছিলেন সংগ্রাম পরিষদের অবিসংবাদিত নেতা। বরিশালে ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিএম কলেজের ছাত্ররা ছিলেন মূল চালিকাশক্তি। তারা পৃথক ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করেন। এর আহ্বায়ক ছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি এবং বিএম কলেজছাত্র সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট গৌরনদীর সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া।
×