ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নেই শিক্ষক ॥ বিকাশে লেনদেন

অধ্যক্ষ ঢাকায় বসে চালান টিচার্স ট্রেনিং কলেজ

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অধ্যক্ষ ঢাকায় বসে চালান টিচার্স ট্রেনিং কলেজ

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ নীলফামারী টিচার্স ট্রেনিং কলেজের নামে চলছে চিটিংবাজি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত এ কলেজটির অফিস, শ্রেণিকক্ষসহ অবকাঠামোর কোন অস্তিত্ব নেই। তার পরও শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন কলেজের অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম। তিনি মূলত ঢাকায় বসবাস করেন। শিক্ষার্থীরা বিকাশসহ নানা মাধ্যমে দেনা-পাওনা পরিশোধ করেন। প্রতিষ্ঠানটিতে স্থায়ী কোন শিক্ষক নেই। কখনও ক্লাসও হয় না। ভর্তি থেকে শুরু করে সার্টিফিকেট পাওয়া পর্যন্ত অধ্যক্ষের দেখা মেলে না। সম্প্রতি তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। ২০০৬ সালে এ কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। ওই সময় ভাড়ার চুক্তিতে জেলা শহরের মশিউর রহমান ডিগ্রী কলেজে কার্যক্রম শুরু হলেও পরে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। ১৯৯২ সালের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইনানুসারে বিএড সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান টিচার্স ট্রেনিং কলেজ নিজস্ব জমির ওপর স্থাপিত হতে হবে। অনুমোদন ছাড়া ক্যাম্পাস পরিবর্তন করা যাবে না; কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এসবের কোনটিই মানা হয়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন সিরাজুল ইসলাম। এরপর দায়িত্ব পান আব্দুর রউফ রউফুল। ২০১৫ সালে পুনরায় অধ্যক্ষের দায়িত্বে ফিরে আসেন সিরাজুল ইসলাম। অভিযোগ রয়েছে, এ কলেজে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই কানিয়ালখাতা নি¤œ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে সভাপতি করেন তিনি। পরে মশিউর রহমান ডিগ্রী কলেজ থেকে ক্যাম্পাসটি স্থানান্তর করেন ওই নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। গতবছর ডিসেম্বরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসটি সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়। এখন কোথায় কলেজটির অবস্থান তা কারও জানা নেই। তার পরও ওই কলেজে চলতি শিক্ষাবর্ষে ৭৯ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে কানিয়ালখাতা নি¤œ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম অনুরোধ করায় আমাদের স্কুলে পড়ানোর জন্য মৌখিক অনুমতি দিয়েছিলাম। নানা কারণে গতবছর ৩১ ডিসেম্বর ক্যা¤পাস তুলে নিতে বলা হয়েছে। বর্তমানে অধ্যক্ষ স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস করছেন। এ কারণে কলেজে কখনও আসেন না। তার হয়ে এখানে কাজ করেন অফিস সহকারী মোতাহার হোসেন ও আনিসুর রহমান বিপুল। নির্দেশনা অনুযায়ী তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেন। মাত্র দুজন অস্থায়ী শিক্ষককে মাঝে মধ্যে ক্লাস নিতে দেখেছি। কলেজের সাবেক সভাপতি আকতারুল ইসলাম রাজু বলেন, সিরাজুল ইসলাম একসময় মাদরাসায় কৃষিশিক্ষক হিসেবে চাকরি করতেন। এসব চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কৃষি ডিপ্লোমা হলেই চলে। অধ্যক্ষ হওয়ার সময় তিনি প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র দেখিয়েছিলেন। এখন শুনছি, টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ হওয়ার মতো তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। তবে কি কাগজগুলো নকল ছিল? এ বিষয়ে এখন খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। ওই কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী হরিদাস রায় বলেন, নিয়মিত ক্লাস হয় জেনে চাকরি থেকে এক বছরের ছুটি নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছিলাম। পরে দেখি কোন ক্লাস হচ্ছে না। অধ্যক্ষ স্যার কখনও ক্যাম্পাসে আসেন না। ঢাকা থেকে ফোনে শুধু টাকার কথা বলেন। এ বিষয়ে নীলফামারী টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, নিজস্ব জমিতে ক্যাম্পাস স্থাপন করার জন্য গত মাসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চিঠি দিয়েছে। আমরা দ্রুত কাজটি সম্পন্ন করব। তা ছাড়া আমার যোগ্যতার যাবতীয় সনদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা করে দেখেছে। আমার বিরুদ্ধে আনা কোন অভিযোগ সত্য নয়। এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার কাছেও এ ধরনের অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার প্রক্রিয়া চলছে।
×