ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত

প্রশ্নফাঁস চক্রের আরও দুই সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

প্রশ্নফাঁস চক্রের আরও দুই সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার

গাফফার খান চৌধুরী ॥ প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ফার্মগেট থেকে গ্রেফতার হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের সক্রিয় দুই সদস্য। গ্রেফতারকৃতরা ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। দীর্ঘদিন ধরে তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে নিচ্ছিল। তাদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র বিক্রির বেশ কিছু টাকা, প্রশ্নপত্র ও প্রশ্নপত্র ফাঁসে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। অভিযানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতরা গ্রেফতার হলেও প্রশ্নপত্র ফাঁস থেমে নেই। একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এবার চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে রীতিমতো তুঘলকি কা- ঘটে যাচ্ছে। দেশের প্রায় সর্বত্র একই আলোচনা সমালোচনা। কোনভাবেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারছে না ক্ষমতাসীন দলসহ পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র। প্রায় প্রতি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরির কৌশল পরিবর্তনের কথা বলছেন সরকারের খোদ মন্ত্রী ও আমলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা। আর প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকবে, তাদেরই গ্রেফতার করা হবে। তা সে যত বড় রাঘববোয়ালই হউক না কেন ছাড়া দেয়া হবে না। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে সারাদেশে চলমান সাঁড়াশি অভিযানের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাত সোয়া একটার দিকে র‌্যাব-২ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানাধীন ইন্দিরা রোডের ঢাকা ওরিয়েন্টাল কলেজ গেটের সামনে ২৫/বি নম্বর মাসুদ টেলিকম নামক বিকাশের দোকানের সামনে ছদ্মবেশে অবস্থান নেয়। তাদের কাছে সেখানে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের দুই সদস্য অবস্থান করছে বলে তথ্য ছিল। সেই তথ্য মোতাবেক সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় মোঃ রেদোয়ান আহম্মদ (২৪) ও বেলাল হোসেনকে (২৩)। র‌্যাব জানায়, রেদোয়ানের পিতার নাম মোঃ আব্দুল মান্নান। মায়ের নাম লুৎফুন্নেছা। বাড়ি যশোর জেলার চৌগাছা থানাধীন মুক্তারপুরের বড় কাবিলপুর গ্রামে। আর বেলালের পিতার নাম মোঃ হযরত আলী। মায়ের নাম রহিমা খাতুন। বাড়ি একই জেলার ঝিকরগাছা থানাধীন গুলবাগপুর এলাকার বেঙ্গদা গ্রামে। তারা দু’জনই রাজধানী ঢাকার ধানম-ি-৩২ নম্বরের শুক্রবাদের ৯২/৩ নম্বর বাসায় থাকত। এরা বেসরকারী ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ধানম-ি শাখায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের ছাত্র। এরমধ্যে রেদোয়ান নবম আর বেলাল দশম সেমিস্টারে অধ্যয়নরত। তারা ওই বাসায় থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের যাবতীয় কর্মকা- চালাত। যখন প্রশ্নপত্র ফাঁসের কর্মকা- চালাত তখন রাতে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করত। যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেয়া যায়। তার পিছু নেয় গোয়েন্দারা। অবশেষে ফার্মগেট থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও কেমিস্ট্রি-২০১৮ নামে একটি গ্রুপের মাধ্যমে একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত হয়। পরবর্তীতে এই গ্রুপটির এডমিনের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী চাকরি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ নানা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করত। এসব ফাঁস করা প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। এসব টাকা তারা সরাসরি হাতে নিত না। টাকা নেয়ার কাজটি করত মাসুদ টেলিকম নামের যে দোকানটির সামনে থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, ওই দোকানটির মাধ্যমে। বিকাশের মাধ্যমে ওই দোকানির মাধ্যমে টাকা নিত। বিষয়টি দোকানি জানে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। গ্রেফতারকৃতরা অবলীলায় ইতিপূর্বে বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তা পরীক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেছে। চক্রের অন্য সদস্য এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত পুরো চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এজন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলছেন, শুধু পরীক্ষার সময়ই নয়, বছরের অন্যান্য সময়েও পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হবে। গ্রেফতারকৃতদের তথ্য মোতাবেক সারাদেশেই র‌্যাব অভিযান চালিয়ে আসছে। এবার মুদি দোকানে মিলল এসএসসির আরও ৫০ উত্তরপত্র ॥ এবার জয়পুরহাট শহরের বিশ্বাসপাড়ার শাহীন নামে এক মুদি দোকানির কাছ থেকে এসএসসি পরীক্ষার ইংরেজী প্রথমপত্রের ৫০টি উত্তরপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে জয়পুরহাট সুগার মিল কেজি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম সরওয়ার উত্তরপত্রগুলো উদ্ধার করেন। পরে তিনি বিষয়টি জয়পুরহাট থানা পুলিশকে জানান। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে শহরের সোনারপট্টি সড়কের ওপর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ২৫টি উত্তরপত্র উদ্ধার করে পথচারীরা। তারা উত্তরপত্রগুলো সদর থানায় জমা দেন। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুমিনুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ৫ ফেব্রুয়ারি চলমান এসএসসি পরীক্ষার ইংরেজী প্রথমপত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার পর খাতাগুলো পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে রাজশাহী বোর্ডে পাঠানো হয়। সেখান থেকে জয়পুরহাট সুগার মিল কেজি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম সরওয়ার কিছু উত্তরপত্র বস্তায় ভরে ট্রেনে জয়পুরহাটে নিয়ে আসেন। এর পর জয়পুরহাট রেল স্টেশন থেকে তিনি রিক্সায় বাড়ি যাওয়ার পথে শহরের সোনারপট্টি সড়কে তার অজান্তে বস্তার মুখ খুলে ৭৫টি খাতা পড়ে যায়। তিনি জানান, এর মধ্যে ২৫টি উত্তরপত্র রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে পথচারীরা উদ্ধার করে থানায় জমা দেন। পরে শুক্রবার দুপুরে বাকি ৫০টি উত্তরপত্র শাহীন নামে এক মুদি দোকানির কাছ থেকে ওই শিক্ষক উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
×