ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেন শিক্ষা সচিব

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেন  শিক্ষা সচিব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে সবার মতামত নিয়ে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেছেন, ‘এবার এসএসসি পরীক্ষায় যেভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে; এরপর আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস হবে না, তেমন নিশ্চয়তা আমি দিতে পারছি না।’ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই অনিশ্চয়তার কথা জানান তিনি। এসএসসির পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস রোধে ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না- হাইকোর্টের এই রুল জারির পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আদালত যে আদেশ দেবে আমরা অবশ্যই পরিপূর্ণভাবে প্রতিপালন করব। আমাদের কোন নিষ্ক্রিয়তা থাকলে সে বিষয়ে বক্তব্য অবশ্যই আদালতের কাছে উপস্থাপন করব। নানা চেষ্টার পরও প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে না পারায় অসহায়ত্ব প্রকাশ করে সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘বর্তমান পদ্ধতিতে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস রোধ করা সম্ভবপর নয়। আমাদের নতুন এমন কোন প্রক্রিয়া, এমন কোন পদ্ধতিতে যেতে হবে, যেখানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ থাকবে না।’ গত কয়েক বছর ধরে প্রায় সকল পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় টানা নয়দিনই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এই পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষামন্ত্রী ও সচিব কড়া হুঁশিয়ারি দিলেও প্রশ্নফাঁস এবার ব্যাপক মাত্রায় রুপ নিয়েছে এবং প্রতি পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রশ্ন চলে আসছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ নিয়ে জাতীয় সংসদসহ দেশজুড়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। এর মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের বলেন, প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়ন থেকে পরীক্ষার্থীর হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত বহু মানুষের সম্পৃক্ততা থাকায় এই পদ্ধতির পরিবর্তন ছাড়া প্রশ্নফাঁস বন্ধ সম্ভব নয়। এই অবস্থায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আরও বলেন, প্রশ্ন আগেও ফাঁস হতো, কিন্তু এখন তা বিস্তৃত হচ্ছে ইন্টারনেটকে মাধ্যম করে। এখন প্রশ্নফাঁস হওয়ার পর ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। যদি ইন্টারনেট না থাকত, তবে ফাঁস হলেও এত বড় সর্বনাশ হতো না। সেটি সীমিত, হয়ত কেউ জানতেই পারত না। পরবর্তী পরীক্ষা কিভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্ত রাখা যায়, সারা দিন-রাত তাই নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন-মন্তব্য করে সচিব বলেন, সেখানে কোন নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। কারণ পাবলিক পরীক্ষা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে কখানো নেয়া সম্ভব নয়। অতীতেও সম্ভব হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নিতে হয়। এছাড়াও আমি বার বার বলছি যে, বাস্তবতা হচ্ছে এখানে ৩০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী সংশ্লিষ্ট। ৩০ হাজারের মধ্যে আমি মনে করি যে একেবারে সবাই অনেস্ট ও সিনসিয়ার। কিন্তু দু-চারজনও যদি এই জঘন্য অপকর্মটি করেন, তাহলে প্রত্যেকের সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, সততার কোন মূল্য থাকছে না আর।’ নৈতিক অবক্ষয়কে প্রশ্ন ফাঁসের অন্যতম কারণ আখ্যায়িত করে শিক্ষাসচিব বলেন, আমরা যখন ইনকোয়ারি করেছি, মনে হয়েছে আগে মানুষের নৈতিকতা-আদর্শবোধ অনেক তীক্ষè ছিল, তখন কেউ ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেলেও নিজের বন্ধুকে বলত না, ভাবত মানুষ আমাকে নোংরাভাবে দেখবে। এখন তো অন্যরকম হয়ে গেছে। এখন গার্ডিয়ান থেকে শুরু করে সবাই এর মধ্যে ইনভল্ব হয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধের চেষ্টা করছেন জানিয়ে সচিব বলেন, আমি অবিলম্বে একটি প্রতিবেদন তৈরি করছি। এটি মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে দেব। আমাদের যারা গুণী ব্যক্তিরা আছেন, তাদের নিয়ে বসে নতুন কোন পথ উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়, তাহলে পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস রোধ করা সম্ভব। এখন যে পরিস্থিতি সেই পরিস্থিতিতে সকলে মিলে একটা উপায় বের করতে হবে, যে প্রক্রিয়া প্রশ্ন আউটের কোন বিষয় থাকবে না। সেই প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করার জন্য সকলে মিলে এগিয়ে আসতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে সোহরাব হোসাইন বলেন, পরিকল্পনা থাকলেও সারাদেশে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় প্রশ্ন না ছাপিয়ে সকাল ১০টায় সব কেন্দ্রের স্ক্রিনে (বড় পর্দা) একযাগে সরবরাহ করা সম্ভব না। সেটা করতে পারলে প্রশ্ন ফাঁসের কোন সুযোগ থাকবে না। সেটা করতে গেলে বিশাল ধরনের কেন্দ্র সংখ্যা, কেন্দ্রের যে পরিস্থিতি, এখনও ওই পর্যায়ে যেতে পারিনি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রশ্ন ফাঁসের হোতাদের ধরতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন জানিয়ে সচিব বলেন, তারা আন্তরিকভাবে এর মূলে পৌঁছাতে চান। গোয়েন্দারা তিনজনকে রিমান্ডে (জিজ্ঞাসাবাদ) এনেছেন। তারা ২০১৩ সাল থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। এই তিনজন ভুয়া ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে দিত। প্রশ্নফাঁস হলে পরীক্ষা বাতিল করা হবে- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে; তাদের সুপারিশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আগে প্রশ্নফাঁস হলে পরীক্ষার বাতিলের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, এবার দেরি কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আগে আগেরদিন প্রশ্নফাঁস হয়েছে। ট্রেজারি অফিসার যদি সবাইকে নিয়ে প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পান, তবে ওই প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয় না।
×