ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে বসন্ত বরণে প্রাণের উচ্ছ্বাস

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রাজশাহীতে বসন্ত বরণে প্রাণের উচ্ছ্বাস

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী/ কায়কোবাদ খান, রাবি ॥ বসন্ত দিনের সকাল থেকেই ফাল্গুনী রঙে সেজেছে রাজশাহী। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে শহরের ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজ ছাড়াও ফাগুনের হাওয়ায় নানা উচ্ছাসে ঋতুরাজ বরণ হয়েছে রাজশাহীতে। গাছে গাছে যখন ফুটেছে শিমুল, পলাশ। উঁকি দিচ্ছে আমের মুকুলও। চারপাশে মৌ মৌ গন্ধ। এমন মিষ্টি গন্ধের মধ্যে ঋতুরাজের আগমনে যেন মাতোয়ারা রাজশাহীর তরুণ-তরুণীরা। বাসন্তি রাঙা শাড়ি পরে আর খোঁপায় ফুল গুঁজে তারা নেমেছেন বসন্ত বরণে। বিনোদন কেন্দ্র থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও বসন্ত বরণের উৎসব যেন সর্বত্র উচ্ছাসে পরিণত হয়েছে। নাচে আর গানে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) তরুণ-তরুণীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই উৎসবমুখর ছিল ক্যাম্পাস। বসন্তের রং লাগে তাদের বাহারি রঙের পোশাকেও। মেয়েদের খোঁপায় শোভা পায় ফুল। সারাদিন গল্পে-গানে-আড্ডায় তারা জমিয়ে রাখে ক্যাম্পাসের আড্ডার স্থানগুলো। ফাগুনের আগমন শুধু শিমুল-পলাশের বনকেই নয়, রাঙিয়েছে রাবির তরুণ শিক্ষার্থীদের মনকেও। অন্য যেকোন দিনের চেয়ে প্রাণোচ্ছ্বল ছিল ফাল্গুনের প্রথম সকাল। সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা বসন্তি সাজে বেড়িয়ে পড়ে সবুজ ক্যাম্পাসে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভিড়। প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে শহরের অনেকেও ঢুকে পড়েন ক্যাম্পাসে। মেয়েদের পরনে বাসন্তি রঙের শাড়ি অথবা সালোয়ার, খোঁপায় শোভা পায় আগুনরঙা ফুল। ছেলেরদের পরনে বাসন্তি রঙের পাঞ্জাবি অথবা ফতুয়া। বসন্ত যেন তরুণ-তরুণীর প্রাণে সঞ্চার করেছে সজীবতা আর উদ্দামতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি, সাবাস বাংলাদেশ, শহীদ মিনার, পুরাতন ফোকলোর চত্বর, চারুকলার মুক্তমঞ্চ ও বধ্যভূমিতে দল বেঁধে আড্ডা দিতে দেখা যায় তাদের। শীতের রিক্ততা মুছে প্রাণের স্পন্দনে একটু একটু করে জেগে উঠেছে প্রকৃতি, ঠিক তেমনি করে বসন্তের ফুলে সেজে উঠেছে মতিহারের সবুজ চত্বর। এদিকে বসন্তকে বরণ করে নিতে ফাগুনের প্রথম প্রহরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসবের। বেলা ১১টায় প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রভাষ কুমার কর্মকার ও শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান। সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করে অরণী সাংস্কৃতিক সংসদ। এছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ক্যাম্পাসের আড্ডার স্থলগুলোতে আয়োজন করে নাচ, গান ও আবৃত্তি উৎসব। শিক্ষার্থীদের প্রাণের উচ্ছ্বাস এবং কোকিলের কুহু কুহু কুহুতান যেন জানিয়ে দেয়, ‘বসন্ত এসে গেছে, বসন্ত এসে গেছে।’ ফুলের দোকানিরা জানিয়েছেন, বসন্ত ও ভালবাসা দিবসে দুই দিনের চাহিদা মেটাতে এবারও জেলার বাইরে থেকে ফুল আমদানি করতে হয়েছে। অন্য সময়ের চেয়ে ফুলের তোড়ার দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। গোলাপের দাম বেড়েছে প্রতি পিস ২০ থেকে ৩০ টাকা। তারপরেও বেচাকেনায় তেমন প্রভাব পড়েনি। ভোলায় ঋতুর রাজাকে বরণ নিজস্ব সংবাদদাতা ভোলা থেকে জানান, ঋতুর রাজা বসন্তকে ভোলায় নানা আয়োজনে বরণ করা হয়েছে। বসন্তের সকালে মঙ্গলবার ভোলা সরকারী কলেজ ক্যাম্পাসে লাল হলুদ আর বাসন্তি শাড়ি পাঞ্জাবি পরে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। কিশোর, কিশোরী আর যুবতীসহ বিভিন্ন বয়সী নারীরা রং বেরঙের ফুল দিয়ে বাসন্তির বর্ণিল সাজে নিজেদের সাজিয়ে তুলে। ভোলা সরকারী কলেজের আয়োজনে ছায়া বীথি মঞ্চে বসন্ত বরণে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মেতে উঠে কলেজ ক্যাম্পাসটি। কলেজ অধ্যক্ষ প্রফসর পারভিন আকতারের সভাপতিত্বে নাচ ও গানের মুছনার ফাঁকে ফাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, সাবেক অধ্যক্ষ রুহুল আমিন জাহাঙ্গীর, সাবেক অধ্যক্ষ আফসার উদ্দিন বাবুল, এরব স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাফিয়া খাতুন প্রমুখ। শাহজাদপুরে র‌্যালি নিজস্ব সংবাদদাদা শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ থেকে জানান, রংধনু স্কুলে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে বসন্ত উৎসব পালিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে শাহজাদপুরে রংধনু কিন্ডারগার্টেন এ্যান্ড হাইস্কুলে বসন্ত উৎসব পালন করা হয়েছে। ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নিতে নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে এ বিদ্যালয়টি। বেলা সাড়ে ১১টায় বসন্তের সাজে র‌্যালি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, বসন্তকে বরণ করে নিতেই আমাদের এ আয়োজন। লক্ষ্মীপুরে বসন্তবরণ নিজস্ব সংবাদদাতা লক্ষ্মীপুর থেকে জানান, দক্ষিণী হাওয়া জানান দিচ্ছে বসন্ত বার্তা মানে এবার শীতের পালা শেষ, আসছে বসন্ত। তাই ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে লক্ষ্মীপুর সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ক্যাম্পাস মাঠে পালিত হয়েছে বসন্ত বরণ উৎসব। এতে প্রধান অথিতি ছিলেন, বিশ্ব নাট্যসভার সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দ্র মজুমদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, লক্ষ্মীপুর সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মাইন উদ্দিন পাঠান, রায়পুর কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মাহবুবুল করিম, উপাধ্যক্ষ আব্দুস সহিদসহ উৎসবমুখর শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। উৎসবে ছিল বসন্ত কথন ও প্রতীক বন্ধনী, রবীন্দ্র সঙ্গীত, পরিবেশিত হয়েছে গান আবৃতি, কবিতা ও নৃত্য। খাগড়াছড়িতে নাচগান পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধি খাগড়াছড়ি থেকে জানান, বরণ উৎসব গান নাচে উদ্্যাপিত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে খাগড়াছড়ি জেলা শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে পলাশ তলায় এই বসন্ত বরণ উৎসব পালন করা হয়। ঋতু বৈচিত্র্যের বর্ণিল এই বসন্তকে বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খাগড়াছড়ি সদর জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল জি এম সোহাগ। সভাপতিত্ব করেণ খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সদস্য ও শিল্পকলা একাডেমি বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক খগেশ্বর ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ শানে আলম, বাংলা একাডেমি পুরাস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিক গবেষক প্রভাংশ ত্রিপুরা, দৈনিক অরণ্যবার্তা প্রতিকার সম্পাদক টিভি ব্যক্তিত্ব চৌধুরী আতাউর রহমান রানা। সৈয়দপুরে জমজমাট ফুলের বাজার সংবাদদাতা সৈয়দপুর, নীলফামারী থেকে জানান, বসন্ত উৎসব ও বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে সৈয়দপুরে জমজমাট হয়ে উঠেছে ফুলের বাজার। সব বয়সীরা শহরের বিভিন্ন সড়কের দোকানগুলোতে ভিড় করছে। এতে দুই দিনে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ফুল পাইকারি ও খুচরা বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার সরজমিনে দেখা যায়, শহীদ ডাঃ জিকরুল হক রোড, সৈয়দপুর প্লাজা, বিমানবন্দর রোডে পাপন ফুল বিতান, শামিম ফুল স্টোর, নওশাদ ফুল ঘর, বিপ্লব ফুল দোকান ও সাদিয়ানা ফুল বিতান মিলে ৫ পেশাজীবী ফুল বিক্রেতার সঙ্গে মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও পসরা সাজিয়েছে। এতে ফুল দোকানের সংখ্যা বেড়ে ১২টিতে চলছে ফুল কেনাবেচা। সকালে সামিয়ানা টানিয়ে স্টল সাজিয়েছে বাহারি ফুলে। এভাবে জমজমাট হয়ে উঠেছে সৈয়দপুরের ফুলের বাজার।
×