ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়া হুয়াকুয়া উচ্চ বিদ্যালয়

অনিয়মই নিয়ম যে স্কুলে

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অনিয়মই নিয়ম যে স্কুলে

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ কামেল পাস স্কুলের মৌলবি নেন ইংরেজীর ক্লাস। যিনি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ছেলে। শরীরচর্চা শিক্ষক নেন অঙ্কের ক্লাস। যিনি প্রধান শিক্ষকের ভাগ্নে। কম্পিউটারের শিক্ষক নেন ইংরেজীর ক্লাস। যিনি প্রধান শিক্ষকের চাচাত বোন। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির (এসএমসির) দাতা সদস্য প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী। এভাবে এসএমসির সব সদস্য প্রধান শিক্ষকের আপনজন ও নিকট আত্মীয়। বেশিরভাগ শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের নিকটজন। এই স্কুল বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার হুয়াকুয়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়। সমস্যার সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতি স্কুলটির অগ্রযাত্রার পথে বিঘœ ঘটাচ্ছে। শিক্ষার মান নেমে যাচ্ছে। এলাকার লোক বিষয়গুলো জেনে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরে এবং ম্যানেজিং কমিটি গঠনে আপত্তি জানিয়ে এলাকার সুধীজন আবেদন করেছেন রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বগুড়া জেলা প্রশাসকের কাছে। সোনাতলা উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৭৩ সালে। গ্রামে মাধ্যমিক শিক্ষা বিস্তারে শুরু থেকেই স্কুলটি কোএডুকেশন। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫শ’। ছেলে মেয়ে শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ৫০:৫০। স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারী ২০০৯ সালের ৯ ডিসেম্বর সহকারী প্রধান শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পান তৎকালীন এসএমসির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের কল্যাণে। যিনি প্রধান শিক্ষকের নিকট আত্মীয়। পরে এই দেলোয়ার হোসেনকে সভাপতির পদ থেকে কৌশলে সরিয়ে দেন প্রধান শিক্ষক। তারপর প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারী তার স্ত্রী, সন্তান, চাচাত ভাই বোন, ভাগ্নেদের নিয়ে এস এম সি গঠন করেন। দশ সদস্যের এই কমিটির সভাপতিসহ অভিভাবক সদস্য ছয় জনই নিরক্ষর। তারা মাধ্যমিক পাসও করেননি। দীর্ঘদিন ধরে এই কমিটি ক্ষমতার জোরে টিকিয়ে রাখার পর এ বছর জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে মেয়াদ শেষ হয়। এরপর তড়িঘড়ি করে ফের নিকটাত্মীয়দের নিয়ে কমিটি গঠন করে অনুমোদনের জন্য রাজশাহী বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠান। বিষয়টি জেনে এলাকার সুধীজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সুধীজনের পক্ষে এলাকার সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী আপেল মাহমুদ আপত্তির নিয়মানুযায়ী রাজশাহী বোর্ডের হিসেবে ৭ হাজার ৫৮ টাকা জমা দিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। এই বিষয়ে তদন্ত শুরু হবে, এমনটি জানিয়েছে বোর্ড সূত্র। আরেক সূত্র জানায়, তদন্তের জন্য বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা ও আইসিটি) কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জানান, বিষয়টি তদন্তের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বোর্ডে জমা দেয়া হবে। এই বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার গোপাল চন্দ্র সরকার বলেন, ওই স্কুলের অনিয়মের তদন্তের দায়িত্ব তিনি পেয়েছেন। যিনি অভিযোগ করেছেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। দুই পক্ষকে একত্রিত করে তদন্ত করতে হবে। এদিকে ওই স্কুলের ৮ সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের প্রতি অনাস্থা এনে অনাস্থা পত্রে স্বাক্ষর করেছেন। তাতে বলা হয়েছে : বর্তমান প্রধান শিক্ষক ২০১১ সাল থেকে তার স্ত্রী ছেলে নিকটাত্মীয়দের নিয়ে এসএমসি গঠন করছেন। যাদের বেশিরভাগ নিরক্ষর। কোন যোগ্যতাই নেই। প্রধান শিক্ষকের অব্যবস্থাপনা, আর্থিক অনিয়মে কয়েকটি মামলা আদালতে আছে। এলাকার আনোয়ার হোসেন ও রেজাউল করিমসহ ক’জন শিক্ষক ও সুধীজন জানান, ম্যানেজিং কমিটি গঠনে তাদের জানানো হয়নি। মোঃ আপেল মাহমুদ বোর্ডের আবেদনে বলেছেন, স্কুলের অধিক হারে বেতন, অযৌক্তিক সেসন ফি ও অধিক হারে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফি ধার্য করা হয়। শিক্ষক নিয়োগে প্রধান শিক্ষক বড় অঙ্কের যে অর্থ নেন তা ব্যাংকে জমা করেন না। প্রধান শিক্ষক আর্থিক অনিয়মের দ্বারা দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। তিনি বেকার জামাইকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়ে প্রতি মাসে বেতন দেন। সেই জামাই কোন ক্লাস নেন না। বৈধ অভিভাবকের অগোচরে বিনা ভোটে এসএমসি গঠন করেন। প্রধান শিক্ষক তার কামেল পাস ছেলে আব্দুল আজিজকে কৌশলে নিয়োগ দিয়েছেন। এ ধরনের অনেক অনিয়ম ও অসঙ্গতিতে ডুবে গিয়েছে ওই স্কুল। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল বারীর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বললে, তিন জানান কোন অনিয়ম করেননি। এসএমসি গঠনে কমিটি তৈরি করে বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। তিনি শুনেছেন, তদন্ত হবে, কে একজন অভিযোগ করেছেন। নিজের আত্মীয়কে কমিটিতে নিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগেও তো তারা ছিলেন। শিক্ষক নিয়োগ ও মাধ্যমিক পরীক্ষার ফরম পূরণের অর্থ তিনি জমা দেন নি। এই প্রশ্নে জানান, এ কথা ঠিক নয় তিনি ব্যাংকে অর্থ জমা দিয়েছেন।
×