ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রন্থাগারের আধুনিকায়ন

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

গ্রন্থাগারের আধুনিকায়ন

শনিবার জনকণ্ঠে তরুণ-তরুণীদের গ্রন্থাগার বিমুখিতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে সাধারণত চাকরির প্রস্তুতি গ্রহণের জন্যই যুব সমাজের অংশ গ্রন্থগারে আসেন। বিষয়টি উদ্বেগজনক। আজকের প্রজন্মকে সত্যিকারের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে তুলতে হলে বই পড়া আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। তরুণ-তরুণীদের পাঠাভ্যাসে আগ্রহী করে তুলতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। সেজন্য গ্রন্থাগারের আধুনিকায়ন অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে দেশের নাম করা সব গ্রন্থাগার যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নয়ন ঘটাতে পারছে না। গণমাধ্যমে গ্রন্থাগার বা পাঠাগারগুলোর করুণ চিত্র উঠে আসে প্রাায়শই। জ্ঞান-তথ্যের কেন্দ্রস্থল। শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সরকারী সেবা সংক্রান্ত নানা তথ্যের উৎস। যদিও উন্নয়ন ভাবনায় জ্ঞান-তথ্যের সেই উৎস অর্থাৎ গ্রন্থাগারই রয়েছে সবচেয়ে অবহেলিত। অধিকাংশ গ্রন্থাগারেই পাঠকক্ষের পরিসর সন্তোষজনক নয়। অভাব রয়েছে চেয়ার-টেবিলের। অনুপস্থিত ফটোকপিয়ার, প্রিন্টার, স্ক্যানারের মতো প্রয়োজনীয় সামগ্রীর। সঙ্কট আছে গ্রন্থাগারের সার্চ ইঞ্জিন গ্রন্থাগারিকেরও। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে বইয়ের স্বল্পতা। আর এসব নিয়েই চলছে দেশের গ্রন্থাগারগুলো। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম গণগ্রন্থাগার। বছরের পর বছর নতুন বই সংগ্রহ ছাড়াই চলছে গ্রন্থাগারটি। জেনারেটর না থাকায় সন্ধ্যার পর লোডশেডিং হলেই গ্রন্থাগার ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হয় পাঠকদের। শতবর্ষী নোয়াখালী গণগ্রন্থাগারের দশা আরও করুণ। চেয়ার-টেবিলের সঙ্কট তো আছেই, বই রাখার আলমারিগুলো ঘুণে ধরে নষ্ট হওয়ার জোগাড়। বৃষ্টি হলেই টিনের চাল বেয়ে পানি ঢুকে ভিজতে থাকে বই। গ্রন্থাগারের মূল ফটকেই আবার ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। ২০১২ সালে নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু হলেও সমস্যা দূর হয়নি সিরাজগঞ্জ সরকারী গণগ্রন্থাগারের। পৃথক পাঠকক্ষ না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পাঠকদের। বসার জন্য প্রয়োজনীয় চেয়ার-টেবিলের স্বল্পতা তো রয়েছেই, প্রধান গ্রন্থাগারিকও ডেপুটেশনে অধিদফতরে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজের জন্য এসব গ্রন্থাগারের মানোন্নয়নের বিকল্প নেই এ কথা বলাইবাহুল্য। এক সময় মুক্তবুদ্ধি চর্চা, বই-পত্রিকাপ্রেমী পাঠক ও কবি-লেখকদের মিলনস্থল ছিল বিভিন্ন উদ্যোগে গড়ে ওঠা এসব গ্রন্থাগার। অথচ আলোর মানুষ গড়ার কারিগর প্রতিষ্ঠানগুলো আজ অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংস হতে বসেছে। তাই সমস্যাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করে এসব প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। পাশাপাশি যেসব এলাকায় গ্রন্থাগার নেই সেসব এলাকায় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা জানি, ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারসহ দেশের ত্রিশটি গ্রন্থাগার আধুনিকায়নের (ডিজিটাল ও ই-গ্রন্থাগারে রূপান্তর) লক্ষ্যে গণগ্রন্থাগার অধিদফতর ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের মধ্যে ‘সমঝোতা স্মারক’ স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেদিন সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের সবক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। এক্ষেত্রে সরকারী গণগ্রন্থাগারগুলোও পিছিয়ে নেই। কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারসহ দেশের গণগ্রন্থাগারগুলোকে ডিজিটাল ও ই-গ্রন্থাগার করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’ আমরা আশা করতে পারি চলতি বছরেই বাংলাদেশ ই-গ্রন্থাগার যুগে প্রবেশ করবে। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে একদিকে যেমন গণগ্রন্থাগারগুলোতে পাঠক সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে পাঠকদের কাছে গ্রন্থাগারকে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। ভাষার মাসে আমাদের প্রত্যাশা বাঙালী পাঠকদের কাছে বিশ্বের বিখ্যাত বইগুলো সহজলভ্য হোক। প্রিন্ট কপির পাশাপাশি ই-বুক ভান্ডার গড়ে তোলার সক্রিয় উদ্যোগ নেয়া হোক। প্রতিটি পাঠাগারের কম্পিউটার থেকে এ্যামাজন ডটকমের মতো অনলাইন পুস্তক বিক্রয় ওয়েবসাইটের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হোক।
×