ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর গ্যালারিতে আশা জাগানিয়া দর্শক

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বঙ্গবন্ধুর গ্যালারিতে আশা জাগানিয়া দর্শক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ রিক্সা, বাস, ট্রাক বা মোটর সাইকেলে গেলে মাত্র দুই মিনিট সময় লাগে। আর হেঁটে গেলে সময় লাগে মিনিট দশেক। দ্বিতীয় পন্থাই বেছে নিল শ’ দুয়েক ফুটবলপ্রেমী। এরা সবাই আরামবাগবাসী। বয়সে সবাই কিশোর থেকে যুবক। শনিবার নিজেদের এলাকা থেকে বিশাল ব্যানার নিয়ে তারা উৎসবমুখর পরিবেশে হাঁটতে হাঁটতে প্রবেশ করলো বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের চত্বরে। মাথায় লাল ক্যাপ। সঙ্গে ব্যান্ডপার্টি। তবে চুপচাপ নয়, গলা ফাটিয়ে সেøাগান দিতে দিতে। কয়েকটা উদ্ধার করা গেল। যেমন : ‘জিতব কে? আরামবাগ।’ ‘আরে জিত্তা গেছেÑ আরামবাগ।’ ‘সবার প্রিয়Ñ আরামবাগ’, ‘জোরে বল-আরামবাগ’ ... স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের ফাইনালে এই প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছে আরামবাগ। প্রতিপক্ষ গতবারের শিরোপাধারী চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড। তাই বলে পাঠক আবার ধরে নেবেন না কেবল এই শ’দুয়েক ফুটবলপ্রেমীই হাজির ছিল স্টেডিয়ামে। খেলা শুরুর সময় দেখা গেল গ্যালারিতে তাদের সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে হাজার ছয়েক। যদিও আগেরদিন আরামবাগ ক্লাব জানিয়েছিল ফাইনাল খেলা দেখতে তাদের প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার দর্শক মাঠে থাকবে। মজার ব্যাপারÑ ফাইনালে আরামবাগের দর্শকরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারা বসে মোহামেডান গ্যালারি। আবাহনী গ্যালারিতেও অল্প কিছু দর্শক ছিল, যাদের মনে হয়েছে ‘নিরপেক্ষ’। গ্যালারিতে কথা হয় জসিম উদ্দিনের সঙ্গে। ফুটবলপ্রেমী। তিনি অবশ্য আরামবাগবাসী নন। গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর। থাকেন পুরনো ঢাকার চানখারপুলে। কবি নজরুল সরকারী কলেজে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থী। তিনি জানান, ‘আমি এই টুর্নামেন্টে কোয়ার্টার ফাইনালে আরামবাগের খেলা দেখে তাদের ভক্ত হয়ে গেছি। তাই আজকেও তাদের খেলা দেখতে এলাম। খুব ভাল লাগছে।’ টিভিতে ইউরোপিয়ান লীগের খেলা নিয়মিত দেখেন জসিম। ওই লীগের খেলার মানের সঙ্গে ঢাকার ফুটবলের মানের কতটা তফাত? ‘ওদের সঙ্গে তুলনার প্রশ্নই আসে না। তবে সঠিক পরিকল্পনা, ভাল কোচ, উন্নত প্রশিক্ষণ... এগুলোর বাস্তবায়ন হলে আমাদের ফুটবলের মানও একদিন অনেক উঁচুতে উঠবে।’ জসিমের ভাষ্য। মাঠের প্রাণ হচ্ছে দর্শক। আর সেই দর্শকই যদি মাঠে না আসে তাহলে যত ভাল বা আকর্ষণীয় খেলাই হোক না কেন তা হয়ে ওঠে নীরস, প্রাণহীন। স্বাধীনতা কাপ চলাকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামেরও ছিল সেই দশা। তবে শনিবার দেখা গেছে এর ব্যতিক্রম চিত্র। দর্শক খরায় আক্রান্ত বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে পরিলক্ষিত হয়েছে মোটামুটি দর্শক-জোয়ার। রাত জেগে বিদেশী লীগের খেলা দেখে যে প্রজন্ম, তাদের সংখ্যাই বেশি ছিল দর্শকসারিতে। ফুটবলের হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে দর্শক সবার আগে প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। কর্মব্যস্ত এই ঢাকায় একমুহূর্ত সময় নেই মানুষের। কিন্তু এলাকার ক্লাব ফাইনালে উঠেছে বলে কথা। পড়ন্ত বিকেলে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সমবেত হয় প্রায় ছয় হাজার মানুষ, উপভোগ করে জমজমাট ফাইনাল ম্যাচটি।
×