ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যটন শিল্পে ওআইসির উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

পর্যটন শিল্পে ওআইসির উদ্যোগ

ঢাকায় তিন দিনব্যাপী ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর পর্যটনমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। এটি ১০ম সম্মেলন। সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সম্মেলন থেকে ঢাকাকে ‘ইসলামিক ট্যুরিজম সিটি’ ঘোষণা করা হয়। ওআইসিভুক্ত দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে আগামীতে বৃহত্তর পরিসরে সহযোগিতা ও সমন্বয় বাড়াতে এই সম্মেলনের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। অর্থনৈতিক ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরস্পরের কাছাকাছি আসা এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের ক্ষেত্রে এ সম্মেলন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। উল্লেখ্য, সম্মেলনের রীতি অনুযায়ী বিদায়ী চেয়ারপার্সন আহমেদ বথু বক্তৃতার পর পরই পরবর্তী দুই বছরের জন্য আইসিটিএমের চেয়ারপার্সনশিপ বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী আকম শাহজাহান কামালের কাছে হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যগণ, জাতীয় সংসদের সদস্যবৃন্দ, সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা, কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ৩০টি রাষ্ট্রের ১৫ জন পর্যটনমন্ত্রী এবং প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী পর্যটন একটি দ্রুত বিকাশমান খাত যা বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পর্যটন শিল্প অন্যতম ক্ষেত্র যেখানে একসঙ্গে কাজ করার বড় সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে অর্থনৈতিক খাত হিসেবে উন্নত করতে তাঁর সরকার বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। পর্যটনের টেকসই উন্নয়নের জন্য এই শিল্পকে ‘দ্রুত বর্ধনশীল খাত’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, পর্যটন এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে ইসলামী দেশগুলো বৃহত্তর সুযোগ ও সম্ভাবনা খুঁজতে একসঙ্গে কাজ করতে পারে। তিনি ইসলামিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। মানুষ প্রকৃতির সান্নিধ্য চায়। আজানাকে দেখতে, জানতে আগ্রহী তারা। সেই আগ্রহ থেকেই মানুষ বেরিয়ে পড়ে ভ্রমণে। বর্তমান পৃথিবীতে পর্যটন টেকসই উন্নয়নের হাতিয়ার। পর্যটন শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে বিশ্বের নানা দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরছে। পর্যটন খাতকে কেন্দ্র করেই বিনিয়োগ বাড়ছে, বাড়ছে অর্থনীতির গতি প্রবাহ। যার সুফল পড়ছে বহু দেশের জাতীয় অর্থনীতিতেও। যদিও বাংলাদেশের চিত্র এখনও আশানুরূপ নয়। বাংলাদেশ পর্যটনবান্ধব। আমাদেরও রয়েছে পর্যটন আকৃষ্ট করার মতো প্রাকৃতিক সম্পদ। পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে আমাদের দেশে সম্পদের অভাব নেই। সুদীর্ঘ মেরিন ড্রাইভসহ বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ ও নিরবচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুন্দরবন বাংলাদেশে অবস্থিত। রয়েছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা, যা অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এসব স্থান পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হতে পারে। জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে শত শত নদী যা ছবির মতো সুন্দর। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রয়েছে শত শত সবুজ চা বাগান যা অবকাশ যাপনের চোখ জুড়ানো মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। রয়েছে হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস ও প্রতœ-সমৃদ্ধ স্থানসমূহ। পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে দরকার প্রশিক্ষিত জনবল। রক্ষা করতে হবে পর্যটন এলাকাগুলো। বর্তমান বিশ্বে পর্যটনের যে বিশাল বাজার তা ধরে রাখা গেলে বদলে যেতে পারে আমাদের অর্থনীতি। ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর সম্মেলনে এই সম্ভাবনার কথাই তুলে ধরা হয়েছে।
×