ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আফগানদের হারানো ঐতিহ্য

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আফগানদের হারানো ঐতিহ্য

উজ্জ্বল বা বর্ণিল আফগান সাময়িকী জাভান্দুন প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২০ এর দশকে। এটি চলেছিল পাঁচ দশক ধরে। এই ইংরেজী সাময়িকীর পুরনো সংখ্যাগুলোয় ফুটে উঠেছে সে যুগের অভিজাত আফগানদের জীবন ও তাদের আকাক্সক্ষা। ওই দশকগুলোয় আফগানিস্তানের সুদূর প্রসারী পরিবর্তন হয়েছিল। জাভান্দুন পত্রিকায় থাকত সেই সময়ের খবর। আরও থাকত বিশ্বের নানা দেশের সমাজ ও ইতিহাস নিয়ে নিবন্ধ, সিনেমা আর ফ্যাশন জগতের মজার মজার খবর। আপনি যদি টাইম ম্যাগাজিনের সঙ্গে কবিতা আর ছোটগল্প যোগ করেন- তাহলে যেমন হবে অনেকটা সেই রকম। খবরে বলা হয়েছে, জাভান্দুন বেরুতো এমন একটি দেশ থেকে যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই ছিল নিরক্ষর। এর পাঠক আর লেখকরা প্রধানত কাবুল শহরেরই বাসিন্দা ছিলেন। তারা ছিলেন প্রগতিশীল লোক, তাদের প্রচুর অর্থ ছিল যাতে তারা সিনেমা ও ফ্যাশন নিয়ে কাটাতে পারতেন। ১৯২০ এর দশকে বা তার পরে আফগানিস্তানে যে সব সাময়িকী প্রকাশিত হতো- তাদের চেয়ে জাভান্দুন ছিল অনেকটা অন্যরকম। আফগানিস্তানের সবচেয়ে ভাল লেখক এবং চিন্তাবিদরা এতে লিখতেন। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িকীর নাম ছিল ‘আদব’। এতে শিশুদের জন্য থাকত ধাঁধাঁ আর গল্প দিয়ে। সেই অঞ্চলের জন্য ১৯৪৯ সালটি ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পুরনো ইউরোপীয় সাম্রাজ্যগুলো তখন ভেঙে পড়ছে। আফগানিস্তানের প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান আর ইরানে তখন উপনিবেশবাদ-উত্তর চিন্তাধারা চালু হয়েছে। আফগানিস্তানের তৎকালীন রাজা জহীর তখন বুঝলেন, তাকে একটি আধুনিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে। ব্যাংকে টাকা থাকতে হবে। তিনি তার স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে বিদেশী উপদেষ্টাদের ডাকলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্য চাইলেন। আরিয়ানা নামে আফগান বিমান সংস্থা চালু হলো ১৯৫৫ সালে। অর্ধেক বিশ্বের সঙ্গে আফগানিস্তানের যোগাযোগ স্থাপিত হলো। এর সবচেয়ে বিখ্যাত রুট ছিল কাবুল থেকে তেহরান, দামেস্ক, বৈরুত, আর আংকারা হয়ে জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট। একে বলা হতো ‘মার্কো পোলো রুট। যেসব আফগান শহর পার্বত্য এলাকা বা মরুভূমি দিয়ে বিচ্ছিন্ন ছিল- সেগুলো তখন নিয়মিত ফ্লাইট দিয়ে সংযুক্ত হলো। ১৯৬০-এর দশক থেকে জাভান্দুনে দেখা দিতে লাগলো বিজ্ঞাপন। গাড়ি, ফ্রিজ, গুঁড়ো দুধ- এগুলোর দাম তখন ছিল বেশির ভাগ লোকেরই সাধ্যের বাইরে। কিন্তু অল্প কিছু লোকের জন্য এটা ছিল জীবনযাপনের ক্ষেত্রে একটা বিপ্লবের মতোই পরিবর্তন- বিশেষ করে নারীদের জন্য। রাজা জহীরকে ১৯৭৩ সালে ক্ষমতাচ্যুত করেন তারই সম্পর্কীয় ভাই মোহাম্মদ দাউদ। ঐতিহ্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে তিনি নিজেকে রাজা নয়, বরং নতুন এক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করলেন। -বিবিসি অবলম্বনে।
×