ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকিতে জলাভূমি জীববৈচিত্র্য

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

হুমকিতে জলাভূমি জীববৈচিত্র্য

বদলে যাচ্ছে প্রকৃতি। বদলে যাচ্ছে জাগতিক সব দৃশ্যাবলী। থমকে দাঁড়িয়ে আছে জলজপ্রাণী, তার বিচরণের ক্ষেত্র প্রায় নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের ধকল আজ সর্বত্র। তার সঙ্গে উপরি জুটেছে মানবসৃষ্ট প্রকৃতি ধ্বংসের আয়োজন। জলাভূমিগুলো আজ ধূসর প্রায়। কোথাও অস্তিত্ব তেমন চোখে পড়ে না। নিঃশেষ হয়ে পড়েছে সব। বিরূপ প্রভাব তাই প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর ব্যাপক। খাল-বিল, নদী-নালার দেশ খ্যাত যে বাংলাদেশ ছিল, তা যেন আজ অতীত। একুশ শতকে দেখা যাচ্ছে, ছোট নদীগুলো আর নদী নেই। পরিণত হয়েছে মরা গাঙে। যেখানে কখনও আসে না বান। কোনটি আবার খাল ডোবা নালার রূপ ধারণ করেছে। একদা এখানে নদী ছিল বলে মানুষকে চেনাতে হয়। আসলে এখানে এখন অজস্র স্থাপনা, ঘরবাড়ি, দালানকোটা। জলবায়ুর পরিবর্তনে প্রকৃতির বিরূপতা এবং মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগে জলাভূমি সত্যি সত্যি মহাবিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। হিমালয় থেকে নেমে আসা নদ-নদীগুলোর মধ্যে উত্তরাঞ্চলের কমপক্ষে বাষট্টিটি নদীর অস্তিত্বই আর মেলে না। আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কের মধ্যে পার হওয়া ছোট নদীগুলো শুকনো ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। যেখানে হচ্ছে চাষাবাদ। জাতিসংঘও মনে করে যে, জলাভূমি নিছক মাছের আধার নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রকৃতিকে ব্যালান্স করে চলার প্রচুর জলজ উদ্ভিদ ও জলজপ্রাণী। দেশে বর্তমানে জলাভূমির অবস্থা কারও কাছেই সুখকর মনে হয় না। একের পর এক জেগে উঠে চর আর বালিয়াড়ি হয়ে বড় নদীগুলোর প্রমত্তা রূপটি বিলীন হওয়ার পথে। বিপন্ন হয়ে পড়া জলের গভীরে আবাস হারিয়ে ফেলছে মৎস্যকুল। বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র তাদের হয়ে এসেছে সঙ্কুচিত। অস্তিত্ব হারানোর পথে জলজ উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণী। তাই পরিস্থিতি এখন এমন যে, জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের অস্তিত্ব বিপন্ন প্রায়। জলাভূমি হ্রাস পাওয়ায় বাংলাদেশের মিঠা পানির সুস্বাদু মাছের অনেক প্রজাতি গেছে হারিয়ে। এ অবস্থা কেবল বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বিরাজ করছে এ করুণ অবস্থা। পরিবেশবিদরা বলাবলি করছেন, গোটা বিশ্ব জলাভূমি সেচে যে নগরায়ণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে, তাতে পৃথিবীর ভারসাম্য ঠিক থাকছে না। নানা ধরনের দুর্যোগ আঘাত করছে দেশে দেশে। বাংলাদেশের সুন্দরবন ও টাঙ্গুয়ার হাওড়ের জলাভূমি আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু এ দুটো স্থানের অবস্থাও বিপন্ন হওয়ার দিকে ধাবিত আজ। জাতিসংঘ বিশ্বের প্রতিটি দেশের জলাভূমির ওপর গুরুত্বারোপ করলেও সেসব তাদের কার্য বিবরণীতেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। সিদ্ধান্তগুলো আর হয় না বাস্তবায়ন। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘ জলাভূমির আন্তর্জাতিক উপযোগিতা তুলে ধরে বিশ্ব জলাভূমি দিবস পালন শুরু করে প্রথম। বিশ্বের জলাভূমি যে মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন সে বিষয়টিতে প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন প্রাণী বিজ্ঞানীরা। ১৯৭১ সালে ইরানের বামাসার নগরীতে তারা একটি সম্মেলনে বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আনেন। জাতিসংঘ দীর্ঘ সময় পর বিষয়টি গুরুত্ব অনুধাবন করে। বাংলাদেশে জলাধার নিঃশেষিত হয়ে যাবার কারণে হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র প্লাবনভূমির প্রায় দুই কোটি হেক্টর জলাভূমির অস্তিত্ব সত্যিকারার্থে হুমকির মুখে। উল্লেখযোগ্য নদীর দিকে তাকালে স্পষ্ট হয় জলাভূমির অস্তিত্ব হারানোর দৃশ্য অনেক নাম না জানা নদী আজ শুকনো ভূমিতে পরিণত। এই করুণ অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য নেই কোন পরিকল্পনা। নেই জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ। মরা নদীতে হয়ত আর প্রাণ প্রবাহ ফিরিয়ে আনা যাবে না। কিন্তু যেসব নদ-নদীর অস্তিত্ব রয়েছে আজও, তাকে রক্ষা করার জন্য সরকারের সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন।
×