মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননের একমাত্র ক্ষেত্র বাংলাদেশের চট্টগ্রামের হালদা নদী অদ্যাবধি অভয়াশ্রম ঘোষিত না হওয়ায় মৎস্য প্রজাতির সংখ্যা ক্রমাগতহারে হ্রাস পাচ্ছে। ২০০৯ সালের জরিপ অনুযায়ী হালদা নদীতে ৭৬ প্রজাতির মৎস্য ও স্তন্যপায়ী প্রাণী বিরল প্রজাতির ডলফিনের বিচরণ কেন্দ্র ছিল। অব্যাহত নদী দূষণ, বালি উত্তোলন, ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে মৎস্য প্রজাতির সংখ্যা হ্রাস পেয়ে ২০১৬ সালে ৫০ এ এসে দাঁড়িয়েছে। উদ্বেগজনক এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হালদা নদীকে ইসিএ (ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া) বা প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা ঘোষণার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত রাখলেও এখনও চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি।
এ দিকে, গত বৃহস্পতিবার হালদা নদীতে আরও একটি বিপন্ন প্রজাতির মিঠা পানির ডলফিন মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গত পাঁচমাসে এ নদীতে ১৮ মৃত ডলফিন পাওয়া গেল। ক্রমাগতভাবে মৃত ডলফিন পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা নদী গবেষক প্রফেসর ড. মোঃ মঞ্জুরুল কিবরিয়া শুক্রবার জনকণ্ঠকে জানান, কেন বার বার এ নদীতে বিরল প্রজাতির ডলফিন মারা যাচ্ছে তার সঠিক কারণ এখনও নির্ণীত হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এ নদী থেকে যত্রতত্রভাবে বালু উত্তোলন ড্রেজার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকার অবাধ চলাচলের কারণে মিঠা পানির এই ডলফিন আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার ভেসে ওঠা মৃত ডলফিনটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ল্যাবরেটরিতে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রয়োজনে এটি পোস্টমর্টেমও করা হবে।
গবেষকদের মতে, নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশে বিরল প্রজাতির মিঠা পানির এই ডলফিনের বিচরণ রয়েছে। আবার এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশের হাটহাজারী ও রাউজান সংলগ্ন হালদা নদী। ভারতে স্তন্যপায়ী প্রাণী ডলফিনটি জলজ প্রাণী হিসেবে অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে। ভারতের গঙ্গা নদী, চট্টগ্রামের সাঙ্গু, কর্ণফুলী ও হালদাতে এ জাতীয় ডলফিনের অস্তিত্ব রয়েছে। গবেষকদের মতে, বর্তমানে মৃত অবস্থায় যে ডলফিনগুলো পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো বড় আকৃতির। এ জাতীয় ডলফিন সাধারণ ৪ থেকে ৫ ফুট পানির গভীরে চলাফেরা করে থাকে। খুলনা রূপসা নদীতেও এই প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে। হালদা নদীতে সবচেয়ে বেশি থাকায় এটিকে অচিরেই প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা ঘোষণার দাবিটি বহু আগেই উঠেছে। ইতোমধ্যেই এ নদীতে ২৬ প্রজাতির মৎস্যের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়েছে। হালদা নদী নিয়ে গবেষণারত বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মঞ্জুরুল করিম জানিয়েছেন, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে এ পর্যন্ত বিরল প্রজাতির ১৮ ডলফিন মরে ভেসে উঠেছে। যা খুবই উদ্বেগজনক। তার মতে, এ নদীতে ২শ’য়ের মতো এ প্রজাতির ডলফিন রয়েছে। স্তন্যপায়ী এ ডলফিন প্রাণী দুই বছরে একটি বাচ্চা প্রসব করে। কিন্তু যেভাবে এ ডলফিন মারা পড়ছে তা খুবই উদ্বেগজনক। তার মতে, তিনি আশাবাদী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী খুব দ্রুততম সময়ে হালদা নদীকে ইসিএ ঘোষণা করা হবে। এতে করে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রের একমাত্র আঁধার এই হালদা নদীর জলজপ্রাণীর অস্তিত্ব টিকে থাকবে।