ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম

সালামের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সালামের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

(গত শুক্রবারের পর) আমরা সালাতের সমাপ্তিকালে ডানের কাঁধ বরাবর মুখ ফিরিয়ে যে সালাম করি এবং বামের কাঁধ বরাবর মুখ ফিরিয়ে যে সালাম করি সেটা হচ্ছে আস্সালামু ‘আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সালাম বা শান্তি কামনার এই যে বিধান ইসলাম দিয়েছে মানব সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাসে এর দৃষ্টান্ত দ্বিতীয়টি নেই। এমনকি কবর জিয়ারত করার সময় প্রথমেই কবরবাসীর উদ্দেশে যে সালাম জানাতে হয় তা হচ্ছে : আস্সালামু আলায়কুম ইয়া আহলাল কুবূর- হে কবরের বাসিন্দাগণ! তোমাদের ওপর বর্ষিত হোক শান্তি (সালাম)। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের প্রতি সালাত (দরুদ) এবং যথাযথ সম্মানের সঙ্গে সালাম জানানোর নির্দেশ আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : ইন্নাল্লাহা ওয়া মালাইকাতাহু ইউসল্লুনা আলান্ নাবী, ইয়া আইউহাল্লাযীনা আমানূ সল্লু আলায়হি ওয়া সাল্লিম তাসলিমা- নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশ্তাগণ নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করেন। ওহে তোমরা যারা ইমান এনেছ! তোমরাও নবীর প্রতি দরুদ পেশ কর এবং তাঁকে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে সালাম জানাও। (সূরা আহ্যাব : আয়াত ৫৬)। এই আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে মিলাদ মাহফিল প্রবর্তিত হয়েছে এবং যথাযথ সম্মানের সঙ্গে সালাম জানাও- আল্লাহর এই নির্দেশ পালন করার উদ্দেশ্যে মিলাদ মাহফিলে এক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে মধুর স্বরে এবং বিনয়ের সঙ্গে উচ্চারিত হয়; ইয়া নবী সালামু আলায়কা, ইয়া রসূল সালামু আলায়কা, ইয়া হাবীব সালামু আলায়কা, সালাওয়া তুল্লাহি আলায়কা। সূরা সাফ্ফাতের ৭৯ নম্বর আয়াতে হযরত নূহ আলায়হিস্ সালামের প্রতি, ১০৯ নম্বর আয়াতে হযরত ইব্রাহীম আলায়হিস্ সালামের প্রতি, ১২০ নম্বর আয়াতে হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম ও হারুন আলায়হিস্ সালামের প্রতি, ১৩০ নম্বর আয়াতে হযরত ইলয়াসিন (ইলয়াস) আলায়হিস সালামের প্রতি, ১৮০ নম্বর আয়াতে সমস্ত রসুলের প্রতি সালাম বর্ষণের উল্লেখ রয়েছে। প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লালাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম যারা সালামের ব্যাপারে কার্পণ্য করে তাদের দারুণ কৃপণ বলেছেন। (আহমদ, বায়হাকী)। বায়হাকীতে বিধৃত আর একখানি হাসিদে আছে যে প্রিয় নবী সাল্লালাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : তোমরা যখন কারও গৃহে প্রবেশ করবে তখন সেই গৃহের বাসিন্দাদের সালাম করবে এবং বের হয়ে আসবার সময়েও সেই গৃহের বাসিন্দাদের সালাম করে গৃহ ত্যাগ করবে। সালামের নানা মাত্রিক প্রচলনের ফলে ইসলাম অল্প সময়ের মধ্যে শান্তির বাণী বিশ্ব পরিম-লে বিস্তৃত করতে সমর্থ হয়েছিল। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সালামের ব্যাপক প্রসার জরুরী হয়ে পড়েছে। এই সালামের মধ্যে আল্লাহর নিকট শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য দু‘আর এক অনন্য প্রবাহ প্রবাহিত হতে থাকে। যারা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের জন্য হিদায়াত লাভের সুযোগ ও সালাম রয়েছে। তাই তো তাদের ক্ষেত্রে যে সালাম বাক্য উচ্চারিত করার কথা বলা হয়েছে, তা হচ্ছে : আস্সালামু আলা মানিত্তাবা‘আল্ হুদাসালাম তাদের ওপর যারা অনুসরণ করে সৎপথ। কুরআন মজিদে এরূপ সালামের উল্লেখ আছে সূরা তহার ৪৭ নম্বর আয়াতে কারিমায়। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু হযরত মূসা ও হারুন (আ)-কে ফেরাউনের নিকট গিয়ে বলতে ইরশাদ করেন : তোমরা তার নিকট যাও এবং বলো : আমরা তোমার রবের রসূল, সুতরাং আমাদের সঙ্গে বনী ইসরাঈলকে যেতে দাও এবং তাদের কষ্ট দিও না, আমরা তো তোমার নিকট এনেছি তোমার রবের নিকট থেকে নিদর্শন আর শান্তি (সালাম) তাদের ওপর যারা অনুসরণ করে সৎপথ। (সূরা তা-হা : আয়াত ৪৭)। সূরা নিসার ৮৬ নম্বর আয়াতে কারিমায় ইরশাদ হয়েছে : তোমাদের যখন অভিবাদন করা হয় তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম প্রত্যাভিবাদন করবে অথবা তারই অনুরূপ করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী। অন্য রকমের অভিবাদন কিংবা শুভ কামনামূলক মস্তিষ্কজাত বাক্য উচ্চারণ না করে আমাদের উচিত হবে আস্সালামু আলায়কুম বলা এবং জবাবে ওয়া আলায়কুমুস্ সালাম বলা। সমাপ্ত লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ, উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা)
×