ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-জাকার্তা সম্পর্কোন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ঢাকা-জাকার্তা সম্পর্কোন্নয়ন

ঢাকা ও জাকার্তা অর্থনৈতিক সম্পর্কের মোড়কে রাজনৈতিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে চায়। বন্ধুপ্রতিম দুটি দেশ পারস্পরিক সহযোগিতার হাতকে আরও প্রসারিত করতে চায়। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে দুটি দেশ। দু’দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ, পর্যটন ও বাণিজ্য উৎসাহিত করার জন্য আকাশপথে যোগাযোগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর বাইরেও কৃষি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা এবং পর্যটন খাতে সম্পর্ক জোরদারে ঐকমত্য পোষণ করছে। সব ধরনের সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ মোকাবেলায় একযোগে কাজ করার বিষয়েও উভয় দেশ সহমত পোষণ করছে। সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টিতে দুটি দেশ একমত পোষণ করে, তা হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর দুদিনের বাংলাদেশ সফরকালে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে উভয় দেশই লাভবান হবে। প্রেসিডেন্টের এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বসহ বৈকি। অন্যতম বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে ইন্দোনেশিয়া রোহিঙ্গাদের দুর্দশা লাঘবে এগিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ এই সমর্থন অব্যাহত রাখার পক্ষে। কারণ, এই সমর্থন মিয়ানমারের ওপর চাপ বজায় রাখতে সহায়ক। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে কূটনৈতিক সমর্থন চেয়ে আসছে। জাতিসংঘ ও জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে দেশটি রোহিঙ্গাদের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। যেসব বন্ধুপ্রতিমদেশকে রোহিঙ্গা সঙ্কটে বাংলাদেশ পাশে পেয়েছে, ইন্দোনেশিয়া তার অন্যতম। গত সেপ্টেম্বরে দেশটির বিদেশমন্ত্রী রেত্মো মারসুদি মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচি ও শীর্ষ জেনারেলদের সঙ্গে আলোচনা শেষে ঢাকা সফর করেন। তার এই সফর রোহিঙ্গা সঙ্কটের ওপর বিশেষভাবে বিশ্ব জনমত তৈরিতে সহায়ক হয়। রোহিঙ্গা সঙ্কট একটি আন্তর্জাতিক মানব বিপর্যয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গণহত্যার শিকার জনগোষ্ঠীর দশ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হলেও সরেজমিনে এ পর্যন্ত বিদেশী রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা সেভাবে আসেনি। সেদিক থেকে প্রেসিডেন্ট জোকোর সফর ও রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন অত্যন্ত ইতিবাচক ঘটনা। রোহিঙ্গা সঙ্কটের দ্রুত ও শান্তিপূর্ণ সমাধান চান জোকো। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে তার। আসিয়ানের সদস্য দেশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়া এই সমস্যা সমাধানে সদস্য দেশগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে। এজন্য জরুরী বৈঠক ডেকে সমস্যার সমাধানের পথ তৈরি করতে পারে। আসিয়ানের সঙ্গে আঞ্চলিক সংলাপে অংশীদারিত্বের জন্য বাংলাদেশের অনুরোধের পক্ষে জাকার্তার সমর্থন চেয়েছে বাংলাদেশ। ইন্দোনেশিয়া সমর্থন জানিয়ে বলেছে, এক্ষেত্রে ঢাকাকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবে জাকার্তা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসিয়ান দেশের সঙ্গে বাণিজ্য, অর্থনীতি, আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা জোরদার করতে তার সরকারের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন। জোকো বাংলাদেশের চলমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। দুই দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বৈঠকে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনায় সম্মতি প্রকাশ করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানিতে বিশেষ ছাড় দেয়া হবে। অপরদিকে ইন্দোনেশিয়াকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হওয়ার কথা বলা হয়েছে। পারস্পরিক আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে সম্পর্কের উন্নতি ঘটে এবং তা থেকে লাভবান হতে পারে উভয় দেশই। পাঁচটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্য দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উত্তরোত্তর এগিয়ে নিতে দুই দেশের মধ্যে চমৎকার রাজনৈতিক বোঝাপড়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ সফরের জন্য প্রেসিডেন্ট জোকাকে অভিবাদন আমাদেরও।
×