ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা প্রথম টেস্ট শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা প্রথম টেস্ট শুরু আজ

মিথুন আশরাফ ॥ কী নিয়তি! যে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ টেস্টে, বাংলাদেশের শততম টেস্ট ম্যাচের দলেই ছিলেন না। বাদ পড়েছিলেন। সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যখন আবার বাংলাদেশ দল আজ চট্টগ্রামে খেলতে নামছে তখন মাহমুদুল্লাহ অধিনায়ক। তার নেতৃত্বেই আজ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল। ম্যাচটি সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হবে। টেস্টে বাংলাদেশ ২০১৬ সালের আগে ভাল দল ছিল না। ২০১৬ সাল থেকেই দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে। বছরটিতে দুটি টেস্ট খেলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। একটিতে আবার জেতে। এই যে বাংলাদেশকে টেস্টেও প্রতিপক্ষ দল সমীহ করা শুরু করল তা চলছেই। এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে তো দূরে থাক, টেস্ট খেলতে গেলেও প্রতিপক্ষ দল নিজেদের ফেবারিট বলতে পারে না। ইংল্যান্ডকে টেস্টে হারানোর পর যে অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কাকেও টেস্টে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আজ যে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা প্রথম টেস্ট শুরু হবে সেই টেস্টেও তো লঙ্কানরা নিজেদের ফেবারিট বলতে পারছে না। ‘আমরা জিতব’ অথবা ‘জিততে চাই’ এমন সুরও শ্রীলঙ্কানদের কণ্ঠে নেই। অথচ এই দলটিই কয়েকদিন আগে ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ দলও জেতার কথা বলতে পারছে না। আবার ইনজুরির জন্য দলে সাকিব আল হাসান না থাকাতে তো সেই লক্ষ্যের কথা বলাই যাচ্ছে না। তবে টেস্ট সিরিজ হচ্ছে দেশের মাটিতে। এ জন্য চট্টগ্রাম টেস্টে সাকিব না থাকায় নেতৃত্বের দায়ভার পড়া মাহমুদুল্লাহর কণ্ঠে এগিয়ে থাকার কথাই শোনা যাচ্ছে। তিনি বলেছেন, ‘ফেবারিট ঠিক বলতে পারব না। তারা (শ্রীলঙ্কা) টেস্টে ভাল করছে। আমাদের হোম কন্ডিশনে বিশ্বাস করি আমরা এগিয়ে থাকব। আমাদের যে টিম ব্যালেন্স, সাকিব নেই, তবুও বলব ভারসাম্যপূর্ণ দল হয়েছে। ভাল কিছুর আশা আমরা করতে পারি।’ বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দল নিজেদের সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচটি খেলেছে গত বছর অক্টোবরে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ভরাডুবি হয়েছে। এর আগে অবশ্য গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-১ ব্যবধানে ড্র করেছে। মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার মাটিতে হওয়া দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও ১-১ ড্র করেছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ কলম্বোতে খেলা বাংলাদেশের শততম টেস্টে জিতেছে বাংলাদেশই। এখন পর্যন্ত ১০৪টি টেস্ট খেলে ১০টি টেস্টে জিতেছে বাংলাদেশ। ৭৯টি টেস্টে হেরেছে। ১৫টি টেস্টে ড্র করেছে। শ্রীলঙ্কার টেস্টের অবস্থা অবশ্য খুবই ভাল। সর্বশেষ গত বছর নবেম্বর-ডিসেম্বরে ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে হেরেছে। এর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জিতেছে। টেস্টে সবসময়ই শ্রীলঙ্কা হুমকিস্বরূপ দল। দলটির টেস্ট ইতিহাসও সমৃদ্ধ। বাংলাদেশ যেখানে ১৭ বছর ধরে টেস্ট খেলছে, সেখানে ১৯৮২ সাল থেকে প্রায় ৩৬ বছর ধরে টেস্ট খেলছে শ্রীলঙ্কা। ২৬৭ টেস্ট খেলেছে। ৮৪টি টেস্টে জিতেছে। ১০০ টেস্টে হেরেছে। ৮৩ টেস্টে ড্র করেছে। ওয়ানডের পাশাপাশি টেস্টেও বাংলাদেশ অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী দল হয়ে উঠেছে। তা শ্রীলঙ্কা গত বছর নিজ মাটিতে বুঝেছে। এবার খেলা বাংলাদেশের মাটিতে। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ এগিয়ে থাকছে। তবে দুই দলের মধ্যে পার্থক্য হয়ে উঠতে পারেন সাকিবই। তার না থাকাই শেষ পর্যন্ত পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে দিতে পারে। দলটির কোচ আবার চন্দিকা হাতুরাসিংহে। যিনি এই সিরিজের আগেই বাংলাদেশ দলের কোচের দায়িত্ব ছেড়ে শ্রীলঙ্কার কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন। বাংলাদেশ দল সম্পর্কে তার সব জানা আছে। সাকিব নেই। আবার হাতুরাসিংহের বাংলাদেশ দলের শক্তি-দুর্বলতা সম্পর্কে সব জানা। এখানেই শ্রীলঙ্কার এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। হাতুরাসিংহেও মনে করছেন, নির্ধারিত ওভারের দলের চেয়ে টেস্টে শ্রীলঙ্কার দলটি অনেক গোছালো। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের টেস্ট দলটা ওয়ানডের চেয়ে বেশি গোছাল। খেলোয়াড়রা জানে তাদের কি করতে হবে।’ অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমাল অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলার কথাই ভাবছেন। ফেবারিট কে তা নিয়ে ভাবতে নারাজ, ‘আমরা এটা (ফেবারিট) নিয়ে কিছু বলতে পারব না। এখানে এসেছি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলতে। কে ফেবারিট এটা আপনারাই (সংবাদ মাধ্যম) ঠিক করুন। দল হিসেবে আমরা শুধু শুরুটা ভাল করতে চাই।’ সাকিব নেই। তাই মাহমুদুল্লাহ অধিনায়ক। কিন্তু নিজেকে এভাবে অধিনায়ক দেখতে চাননি মাহমুদুল্লাহ। তবে যেহেতু দায়িত্ব পড়েছে তা ভালভাবেই পালন করতে চান। নিজেই বলেছেন (অধিনায়কত্ব) যেভাবে পেয়েছি, সেভাবে পেতে চাইনি। সাকিব আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ওকে হারানোটা আমাদের দলের জন্য একটা বিপর্যয়ই বলতে হবে। ও টপ ক্লাস খেলোয়াড়। ওকে না পাওয়াটা দলের জন্য ক্ষতিকর দিক। তারপরও দিন শেষে সবাই আমরা বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করছি। সবার জন্যই একটা সুযোগ, বাংলাদেশের জন্য ভাল কিছু করা। সেদিক দিয়ে আমরা সবাই উজ্জীবিত। সঙ্গে যোগ করেন, আমি যখন আমার নিজের কাজে থাকব, তখন কোন কিছুতেই ছাড় দেব না। যেভাবেই হোক দলকে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করব। সেটি শক্তভাবেই হোক কিংবা যেভাবেই হোক। সবদিক দিয়েই চেষ্টা করব। প্রথম কথা হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। বাংলাদেশকে ভাল কিছু দিতে হবে। এটাই আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য। সেই দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং জেদ দেখানোর পালা শুরু আজ। আজ যে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা প্রথম টেস্ট শুরু হচ্ছে।
×