ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী দল যাতে বিএনপি ভাঙতে না পারে সেজন্যই তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮

সরকারী দল যাতে বিএনপি ভাঙতে না পারে সেজন্যই তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি নেত্রী খালেদার জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার রায়কে কেন্দ্র করেই রাতের অন্ধকারে বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্রের সাত ধারা নির্বাসনে পাঠিয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আদালতের রায়ে যদি খালেদা জিয়া দ-িত হন অথবা দুর্নীতি মামলায় সাজা হয়ে যায়, তখন সরকারী দল যাতে দল ভাঙতে না পারে সেজন্যই বিএনপি গঠনতন্ত্রের সাত ধারাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। সোমবার ধানম-ির ৩২ নম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে ঢাকা-১০ আসনের আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য নবায়ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। মামলার রায়ের আগে তড়িঘড়ি করে বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধনের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাতের অন্ধকারে বিএনপির সদস্য সংগ্রহের গঠনতান্ত্রিক নিয়ম পাল্টে গেছে, যা সত্যিই হাস্যকর। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন নিয়মের মধ্যে হয় জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ ফোরাম ২৫শ’ কাউন্সিলরের অনুমোদন ছাড়া একটা শব্দও আমরা পরিবর্তন করতে পারি না। কিন্তু যখন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুর্নীতির মামলার রায় হবে, তখন মিউ মিউ করে তাদের থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। রাতের অন্ধকারে এক কলমের খোঁচায় বিএনপির গঠনতন্ত্রের সাত ধারা নির্বাসনে চলে গেল। কি অদ্ভুত এ দেশ, কি অদ্ভুত বিএনপি, কি অদ্ভুত বিএনপির গণতন্ত্র, তাদের গঠনতন্ত্র। ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন রেখে বলেন, ঘরেই যাদের (বিএনপি) গণতন্ত্র নেই, তারা দেশে গণতন্ত্র কিভাবে প্রতিষ্ঠা করবে? এক বছর দশ মাসে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির একটা মিটিং হয় না। আমরা শক্তি আমরা বল, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল? এখন তাদের সাত ধারা কোথায়? মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেব বলুন, রাতের অন্ধকারে সাত ধারা কোথায় পাঠালেন? সকালে তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল ইসির কাছে পাঠালেন, তাহলে কি আদালতের রায় ইসির ইচ্ছা অনুযায়ী হবে? ইসি কি আদালতকে গিয়ে বলবে, যদি রায় তাদের পক্ষে না আসে তবে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না? নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো গঠনতন্ত্র সংশোধনী চিঠির মধ্যে সাত ধারা নেই জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে বাদ দেয়া ওই সাত ধারায় কী ছিল তা জনগণের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সিইসির কাছে বিএনপির পাঠানো ওই গঠনতন্ত্রে ৭ ধারা নেই। সাত ধারার প্রথমটি হচ্ছে- (ক) ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর এক- যেখানে দ-িত ব্যক্তি বিএনপির কোন নেতা হতে পারবেন না, সংসদ সদস্য মনোনয়ন পাবেন না, এমপি হতে পারবেন না। (খ) কেউ যদি দেউলিয়া হয় তাহলে বিএনপির সদস্য হতে পারবে না। (গ) কেউ যদি উন্মাদ হয় তাহলে বিএনপির সদস্য হতে পারবে না। (ঘ) কেউ যদি দুর্নীতিবাজ হয় তাহলে বিএনপির সদস্য হতে পারবে না। দুর্নীতিবাজ এই বিএনপিকে চিনে রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্রে থাকা এই সাত ধারায় যে চারটি বিষয় ছিল, সেই সাত ধারা রাতের অন্ধকারে কলমের খোঁচায় বাদ দিয়ে নতুন করে সংশোধিত গঠনতন্ত্র সম্মেলনের এক বছর দশ মাস পর নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে। তাহলে কি দাঁড়ায়? এই সাত ধারা আগে ছিল, কিন্তু এখন নেই। দেউলিয়া হলে, দ-িত হলেও তারা নির্বাচন করবে, দুর্নীতিবাজ হলেও বিএনপির সদস্য হতে পারবে। জনগণকে বলব- এই বিএনপিকে চিনে রাখুন, তাদের আসল রূপ প্রকাশিত হয়ে গেছে। বিএনপি ভাঙ্গার শঙ্কা থেকেই রাতের অন্ধকারে তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়েছে দাবি করে সেতুমন্ত্রী বলেন, যদি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া দ-িত হয়ে যান, দুর্নীতির মামলার সাজা হয়, সরকারী দল যাতে বিএনপিকে ভাঙতে না পারে সেজন্য তারা সাত ধারা নির্বাসনে পাঠিয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বিএনপি ভাঙ্গার জন্য আওয়ামী লীগের প্রয়োজন নেই। বিএনপি যেভাবে নেতিবাচক ও অগণতান্ত্রিক রাজনীতিকে আঁকড়ে ধরেছে, বিএনপিকে ভাঙ্গার জন্য বিএনপিই যথেষ্ট। বিএনপির ইমান দুর্বল বলে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, মামলা-হামলা সহ্য করে আওয়ামী লীগ দেশ স্বাধীন করেছে। মামলা-হামলা সহ্য করেই আমরা বিএনপিকে আন্দোলনে পরাজিত করেছি। অথচ মামলা-হামলার ভয়ে আজকে বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে ফেলেছে। বিএনপির ইমানের জোর এত হাল্কা, পালকের মতো হাল্কা তাদের ইমান। তিনি বলেন, সাজা হলে দুর্নীতিবাজরা আর নেতা হতে পারবে না, তাই গুডবাই সাত ধারা। এই হচ্ছে বিএনপি। এদের মুখোশ দেশের মানুষের সামনে উন্মোচন করা দরকার। ঢাকা-১০ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ। ৮ ফেব্রুয়ারি রাজপথ দখলে রাখার ঘোষণা মেয়র খোকনের ॥ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার দিন আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি রাজপথ দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, রায়ের দিন পরিস্থিতি তারা পর্যবেক্ষণ করবেন, বিশৃঙ্খলা হলেই রাজপথের দখল নেবেন। সেদিন জনগণের গায়ে কাউকে একটা আঁচড়ও কাটতে না দেয়ার ঘোষণাও দেন মেয়র খোকন। সোমবার রাধানীর গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্যপদ সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। সাঈদ খোকন বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারির রায়কে কেন্দ্র করে যদি সাধারণ মানুষের ওপর একটি আঁচড়ও আসে, তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধিসহ এই শহরের সর্বস্তরের জনগণ রাজপথে নেমে আসবে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথ দখল করে রাখব। সাঈদ খোকন বলেন, ৮ তারিখে কী রায় হবে সেটা বিচার বিভাগের ব্যাপার, রাজনৈতিকভাবে এটা আমাদের কোন বিষয় নয়। এখানে তিনি (খালেদা জিয়া) অব্যাহতি পেতে পারেন, আবার সাজাও পেতে পারেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারলে কী পরিণতি হবে সে বিষয়ে নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেন খোকন। এই পরিস্থিতি এড়াতে আগামী নির্বাচনে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হোক না কেন, তাকেই জয়ী করতে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
×