ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রিদেশীয় সিরিজ

বাংলাদেশকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮

বাংলাদেশকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা

মিথুন আশরাফ ॥ শ্রীলঙ্কার কোচ হাতুরাসিংহের মুখে চওড়া হাসি। সেই হাসিতো থাকারই কথা। বাংলাদেশকে যে উড়িয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ১০ উইকেটের বড় জয় নিয়ে আবার ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালেও খেলা নিশ্চিত করে নিয়েছে লঙ্কানরা। শনিবার বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হবে হাতুরাসিংহের শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের বিপক্ষে লঙ্কানদের জয়ে বিদায় নিয়েছে সিরিজের আরেক দল জিম্বাবুইয়ে। জিম্বাবুইয়ের চেয়ে বেশি পয়েন্ট নিয়েই বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা ফাইনালে খেলবে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে টস জিতে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি ছাড়া সব ম্যাচেই আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। সর্বশেষ দুই ম্যাচে সাফল্য মিললেও এবার মিলেছে লজ্জা। যে শ্রীলঙ্কাকে এ সিরিজের ম্যাচে ১৬৩ রানে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ সেই লঙ্কানদের বিপক্ষেই কিনা লজ্জা পেয়ে হেরেছে। ২৪ ওভারে ৮২ রানেই অলআউট হয়েছে মাশরাফিবাহিনী। দুইজন ব্যাটসম্যান শুধু দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পেরেছেন (মুশফিকুর রহীম ২৬ রান ও সাব্বির রহমান রুম্মন ১০ রান)। সুরঙ্গ লাকমাল (৩/২১) শুরুতেই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মেরুদ- ভেঙ্গে দেন। এরপর ২ উইকেট করে নেয়া থিসারা পেরেরা, দুশমান্থা চামিরা ও স্পিনার লাকশান সান্দাকান মিলে বাংলাদেশের ইনিংসকে এক শ’ রানেও যেতে দেননি। এত কম রান যখন টার্গেট থাকে তখন প্রতিপক্ষ দলের টার্গেট থাকে একটিই। যত বড় ব্যবধানে জেতা যায়। বাংলাদেশকে এত কম রানে অলআউট করে দেয়ার পরই জিম্বাবুইয়েকে পেছনে ফেলে শ্রীলঙ্কার ফাইনালে খেলা নিশ্চিত হয়ে যায়। বাকি থাকে বড় ব্যবধানে জেতা। শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার দানুশকা গুনাথিলাকা (৩৫*) ও উপুল থারাঙ্গা (৩৯*) মিলে শুরু থেকেই ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করতে থাকেন। তাতে করে ১১.৫ ওভারেই ৮৩ রান করে জিতে যায় শ্রীলঙ্কা। ২২৯ বল হাতে রেখে জিতে। দিবারাত্রির ম্যাচ। অথচ সূর্য অস্ত যাওয়ার অনেক আগেই খেলা শেষ। খেলা ৫০ ওভারের। দুই দল মিলিয়ে ১০০ ওভারের খেলা। অথচ দুই দল মিলিয়ে কিনা ৩৬ ওভারেরও খেলা হয়নি। এক ইনিংসও খেলা হয়নি। এমনই জয় পায় শ্রীলঙ্কা, তাতে লজ্জা পায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ওয়ানডেতে ১০ উইকেটে হারা ম্যাচের সংখ্যা হলো ১২টি। তবে এবারই প্রথম দেশের মাটিতে এত বড় হার দেখল বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে ২০০ বল বাকি থাকতেই বাংলাদেশ ৫ ম্যাচে হারে। কিন্তু দেশের মাটিতে এবারই প্রথম এত বেশি বল বাকি থাকতে হারল বাংলাদেশ। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যে ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ৫৮ রানে গুটিয়ে গিয়ে ২২৬ বল বাকি থাকতে হেরেছিল বাংলাদেশ। সেই লজ্জার রেকর্ডকেও এবার পেছনে ফেলল বাংলাদেশ। এমন এক দলের বিপক্ষে লজ্জাটি মিলল যে দলটি এখন হাতুরাসিংহের দল। এ সিরিজ দিয়েই শ্রীলঙ্কা দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন চন্দিকা হাতুরাসিংহে। এ সিরিজের আগে ছিলেন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ। সেই পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে নিজ দেশ শ্রীলঙ্কার কোচ হয়েছেন হাতুরাসিংহে। হাতুরাসিংহের জন্যই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিতে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের দেখিয়ে দেয়ার ব্যাপার ছিল। সেই জিদও ক্রিকেটারদের মধ্যে ছিল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই সিরিজে প্রথম ম্যাচে তা দেখিয়েছেনও বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। শ্রীলঙ্কাকে ১৬৩ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ফাইনালের আগে সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে এসে সব ওলট-পালট হয়ে গেল। শ্রীলঙ্কা উল্টো জবাব দিয়ে দিল। হাতুরাসিংহের ছোঁয়া যেন লাগতে শুরু করে দিয়েছে। টানা দুই ম্যাচ হারের পর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে জিতে শ্রীলঙ্কা যেন মোমেন্টাম পেয়ে গেছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতে তো এখন ফাইনালেও বাংলাদেশকে হারানোর মতো দলে পরিণত হয়ে গেল। এত বড় জয় মিললে যে কোন দলই যে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারে। ক্রিকেটারদের মধ্যে আলাদা রকম আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়ে যেতে পারে। যা জয় পেতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ এমন বাজে সময় দেখল। সেই ২০১৪ সালের আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭০ রানে অলআউট হওয়ার পর এক শ’ রানের নিচে কখনই গুটিয়ে যায়নি বাংলাদেশ। এবার যেন সেই দুঃস্মৃতি ঘিরে ধরল। এমন ম্যাচ এখন ক্রিকেটাররা ভুলে গেলেই হয়। না হলে আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি দেখা দিলে ফাইনালে জেতার যে স্বপ্ন, তা বিপদগ্রস্ত হতে পারে। যে দলটি এখন দেশের মাটিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী দলে পরিণত হয়েছে। সেই দলটির সব ব্যাটসম্যান মিলে যখন এক শ’ রানও করতে পারেন না, তখন শঙ্কা জাগে। ফাইনালে না আবার কোন অঘটন ঘটে যায়। বাংলাদেশ এ সিরিজে ফেভারিট দল। দাপটের সঙ্গে টানা তিন ম্যাচ জিতেছে। চতুর্থ ম্যাচে এসে তামিম, সাকিব, মুশফিকরা যেভাবে ব্যাটিং ব্যর্থতা দেখালেন, এমন বজায় থাকলে বিপদই আছে। টপঅর্ডাররা সবসময়ই দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখাবেন এমন নয়। যেদিন টপঅর্ডাররা ব্যর্থ হবেন সেদিন মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের ওপরই সব দায়িত্ব পড়বে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যখন ৩৪ রানে ৪ উইকেটের পতন ঘটে যায় তখন মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা হাল ধরতে পারেননি। এই বিষয়টি বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। শুরুতে সৌম্য সরকারের পরিবর্তে এনামুল হক বিজয়কে নিয়ে অনেক ভরসা করা হয়েছে। ব্যর্থতাই শুধু তার পুঁজি। টপঅর্ডারে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না। মিডলঅর্ডারে নাসির হোসেনকে নিয়ে যে আশা দেখা হয়েছে তাও কাজে লাগছে না। সবসময় তো আর তামিম, সাকিব, মুশফিক ভাল ব্যাটিং করবেন না। বাকিদেরও তো কিছু করে দেখাতে হবে। দেখানোর দিন ছিল। কিন্তু পারেননি। এমন ম্যাচে না দেখালে আর কখন দেখাবেন তারা? এই প্রশ্নও উঠছে। এই বিষয়টি না আবার ফাইনালেও বাংলাদেশ দলকে ভোগায়। শ্রীলঙ্কা টানা দুই ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছে। এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস নেই। ওপেনার কুসাল পেরেরাও ইনজুরিতে। দুইজনকে ছাড়াই যেভাবে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা নৈপুণ্য দেখালেন তাতে শ্রীলঙ্কা না আবার ২০০৯ সালের মতো ত্রিদেশীয় সিরিজের চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায়। সেই শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তবে বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা যে বলেছেন, ‘আশা করছি এই ম্যাচের কোন প্রভাব ফাইনালে পড়বে না। ছেলেরা ফাইনালে করে দেখাবেন।’ তা এখন হলেই হয়।
×