ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিশু চলচ্চিত্র উৎসব

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮

শিশু চলচ্চিত্র উৎসব

‘ফ্রেমে ফ্রেমে আগামী স্বপ্ন’কে সামনে রেখে রাজধানীর ৬টি ভেন্যুতে ২৭ জানুয়ারি থেকে ১১তম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। উৎসবে বিশ্বের ৫৮টি দেশের দুই শতাধিক চলচ্চিত্র বিনা প্রবেশমূল্যে দেখার সুযোগ পাবে শিশুরা। অভিভাবক, চলচ্চিত্রামোদী এবং কলাকুশলীরাও বাদ যাবেন না নিশ্চয়ই। এই উৎসব থেকে প্রভূত বিনোদনের পাশাপাশি তারা বিশেষ করে বাংলাদেশে শিশু চলচ্চিত্রের অবস্থা জানার সম্যক সুযোগ পাবেন। একথা সর্বজনবিদিত সত্য যে, চলচ্চিত্র শিল্প একটি অতিউত্তম বিনোদনের মাধ্যম, একই সঙ্গে শিক্ষামূলকও বটে। বিশ্বের যে কটি দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ, তাদের চলচ্চিত্রশিল্পও তত উন্নত ও সুরুচিসম্পন্ন। এও সত্য যে, চলচ্চিত্র শিল্প সর্বদাই বৃহৎ পুঁজি দাবি করে বিধায় তা একই সঙ্গে বাণিজ্যিকও বটে। সে জন্য এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা সর্বদাই বিনোদন ও বাণিজ্যকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। সে অবস্থায় সর্বদাই ভাল, উন্নত, সমৃদ্ধ ও রুচিশীল ছবি নির্মাণ সম্ভব না হলেও অন্তত অধিকাংশ ছবি যে দর্শকপ্রিয় ও ব্যবসাসফল হয়, তাতে সন্দেহ নেই। আর সেজন্যই অধিকাংশ ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু বয়স্ক দর্শকদের বিনোদনদান ও রুচিকে ঘিরে নির্মিত হয়ে থাকে। তাই বলে শিশুদের জন্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র যে নির্মিত হয় না তাও নয়। এসব চলচ্চিত্র আবার বড়দের কাছেও সমান আদরণীয় ও পছন্দের, ব্যবসাসফলও বটে। হ্যারি পটার, বেবিজ ডে আউট, হোম এ্যালোন- এর কথা নাই বা বললাম, সাহিত্যে নোবেলপ্রাপ্ত ঔপন্যাসিক উইলিয়াম গোল্ডিংয়ের উপন্যাস ‘লড অব দ্য ফ্লাইজ’ Ñ চলচ্চিত্রটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও অনবদ্য, যেটি একটি ছোট দ্বীপে আটকে পড়া শিশুদের কা-কারখানা নিয়ে নির্মিত। এসব ছবিই অত্যন্ত ব্যবসাসফল ও দর্শকধন্য, সর্বোপরি শিশুদের পাশাপাশি বড়দের কাছেও দারুণ উপভোগ্য। সে তুলনায় উপমহাদেশের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। এমনকি হলিউডের সঙ্গে প্রায় পাল্লা দিয়ে চলা বলিউডেও শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মিত হয় না বললেই চলে। বিশ্বখ্যাত বাঙালী চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় কয়েকটি শিশুবিষয়ক চলচ্চিত্র নির্মাণ করলেও বলতে হয় এই ধারাটি বিশীর্ণ প্রায়। বাংলাদেশের অবস্থা তো আরও করুণ ও প্রায় অনুল্লেখ্য। কালেভদ্রে দু’একটি শিশুবিষয়ক ও শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মিত হলেও সেগুলো না হয়েছে ব্যবসা সফল, না হয়েছে দর্শকধন্য। এমনকি সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত ছবিগুলোও তেমন ভাল হয় না। অবশ্য সার্বিকভাবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের অবস্থাই অত্যন্ত শোচনীয় ও দুর্দশাগ্রস্ত। চলচ্চিত্র জীবনঘনিষ্ঠ শিল্প। শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যমের মধ্যে চলচ্চিত্রই সর্বাধিক দর্শক-শ্রোতার সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলে। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মানুষকে যতটা জীবন ও বাস্তবমুখী করে তোলা যায়, অন্য কোন শিল্পমাধ্যমে তা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে চলচ্চিত্র শিল্পের একটি বাণিজ্যিক দিকও রয়েছে। এ দুইয়ের মেলবন্ধন না হলে সার্থক ও সফল চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্ভব হয় না। এ কথা সত্য যে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প একদা কৃতী পরিচালক সুভাষ দত্ত, জহির রায়হান, খান আতাউর রহমান, এহতেশাম, মুস্তাফিজ, কাজী জহির, নারায়ণ ঘোষ, মিতা, আমজাদ হোসেন, এম এ সামাদ, চাষী নজরুল ইসলাম প্রমুখের ছত্রছায়ায় পরিপুষ্ট ও সমৃদ্ধ হয়েছে। তারা একের পর এক ভাল ও দর্শকধন্য বাণিজ্য সফল ছবি উপহার দিয়েছেন। কিন্তু কেন যেন সেই পরিপুষ্ট ধারাটি এখন প্রায় শুকিয়ে গেছে যথাযথ পরিচর্যা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে। সরকারী উদ্যোগে চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা এফডিসি এবং বেসরকারী দু-একটি স্টুডিও চলচ্চিত্র নির্মাণের সহায়তা করলেও যুগ ও সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে ব্যর্থ হয়েছে চরমভাবে। তদুপরি অযোগ্য-অদক্ষ লোকজনের হাতে পড়ে চলচ্চিত্র শিল্পটি অচিরেই হয়ে উঠেছে বিদেশী গল্প ও সিনেমার অন্ধ অনুকরণ এবং নাচ-গানসহ অশ্লীলতায় ভরপুর। ফলে দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এ থেকে এবং দেশের সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে একে একে। এহেন দুরবস্থা থেকে দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পকে টেনে তোলা দুরূহ হলেও অসম্ভব নয়। আশার কথা এই যে, অধুনা দু-চারটি বাণিজ্যসফল ছবি নির্মিত হচ্ছে এবং মানুষ আবার ফিরে আসতে শুরু করেছে সিনেমা হলে। ইতিবাচক এই অবস্থাটি যদি ধরে রাখার সর্বতোমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় সব মহল থেকে, তাহলে দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পে সুদিন ফিরে আসতেও পারে।
×