ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমাকে হত্যার জন্যই হামলা ॥ মেয়র আইভী গুলি করেছে বিএনপি সন্ত্রাসীরা ॥ শামীম

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮

আমাকে হত্যার জন্যই হামলা ॥ মেয়র আইভী গুলি করেছে বিএনপি সন্ত্রাসীরা ॥ শামীম

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জের নগরীতে ফুটপাথে হকার বসানো কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সিটি মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভীর সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হামলা ও সংর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি। তবে এ হামলা সংঘর্ষের ঘটনা তদন্ত করতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ আইভী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন তাকে হত্যা করার জন্যই হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনা তিনি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অপরদিকে শামীম ওসমান বলেছেন, এটা শামীম ওসমান বনাম আইভীর লড়াই না। এটা হকারদের সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের ঝামেলা। তিনি অভিযোগ করেন, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী বিএনপি যুবদলের ক্যাডার দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে চাষাঢ়া আসেন। সেই মিছিল থেকে বিএনপির সন্ত্রাসীরা গুলি করেছে। তিনি বলেন, আমার রাজনীতিটা গরিব মানুষের। গরিব মানুষের পাশ ছিলাম, আছি থাকব। অপরদিকে মঙ্গলবারের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের ১২ জন সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লার ও জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। আইগনত ব্যবস্থা নিব-আইভী ॥ আইভী বলেন, আমি আইগত ব্যবস্থা নিবে। কারণ এতগুলো মানুষকে আহত করা হয়েছে। প্রায় এক থেকে দেড় মানুষকে আহত করা হয়েছে। নিজেও আহত হয়েছি। অঝোরে বৃষ্টির মতো আমার লোককে ঢিল ছোড়েছে ও পিটিয়েছে। পত্রিকায়সহ গণমাধ্যমে দেখেছেন কিভাবে নিয়াজুল পিস্তল দিয়ে আমাকে গুলি করতে এসেছে। সেখানে কি একটি মামলাও হবে না? আমি তো নিরস্ত্র ছিলাম। আমার মানুষও নিরস্ত্র ছিল। আমি কারও সঙ্গে মারামারি করতে যাই নাই। ঝগড়া করতে যাই না। আমার উদ্দেশ্যে ছিল আমি ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে হেঁটে যাবে। সকলকে বলবে আর ফুটপাথ দিয়ে মানুষ হাঁটবে। হকারা হকার মার্কেটে ব্যবসা করব। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, আমাকে মারত। তাতে কোন দুঃখ ছিল না। কিন্তু চোখের সামনে নেতাকর্মীরা মার খেয়ে আমাকে রক্ষা করল। তারা প্রচ- মার খেয়ে রক্তাক্ত হয়েছে। আমি আমার কর্মীদের মাইর থেকে বাঁচাতে পারিনি। এটা আমার কাছে অনেক দুঃখের, অনেক কষ্টের। এক থেকে দেড়শ’ নেতাকর্মী, আত্মীয়-স্বজন, নগরভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হয়েছে। আর পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরো বিষয়টি দেখেছে। আমার কর্মীরা তো নিরস্ত্র ছিল, কেন তাদের ওপর এই ন্যক্কারজনক সশস্ত্র হামলা চালানো হলো? সন্ত্রাসী নিয়াজুলকে এখনও গ্রেফতার করা হয় নাই। এটা শামীম ওসমান বনাম আইভীর লড়াই না- শামীম ওসমান ॥ এদিকে বুধবার বিকেলে চাষঢ়ায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমি অবাক হয়ে দেখলাম মেয়র আইভী যুবদলের আহ্বায়ক মাকসুদুল আলম খোরশেদ যে একাধিক মামলার অসামি, বিএনপি ক্যাডার সুমন, যুবদলের ডাবল মার্ডারের আসামির স্ত্রী হাসান মজিদ যারা প্রকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশাসন তাদের ধরছে না। ওরা কার সেল্টারে থাকে। তিনি বলেন, কথায় কথায় প্রশাসনকে প্রত্যাহারের দাবি তোলা হয় এই নাটক আমরা বুুঝি। বলা হলো নিয়াজুল শামীম ওসমানের কর্মী নয়, সে আগে কর্মী ছিল। সে এখন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তাকে আইভী প্রিয় বন্ধু সুফিয়ানসহ বিএনপির ক্যাডাররা নিয়াজুলকে ধরে তিন দফা মারধর করেছে। চতুর্থ দফায় সে নিজেকে আত্মরক্ষার্থে পিস্তল বের করেছে। সরকার তাকে অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েছে তো আত্মরক্ষার্থে। তিনি বলেন কে এই নিয়াজুল, কারা তাকে মারলও তার ওপর এত ক্ষোভ কেন? নিয়াজুল আওয়ামী লীগের সাহসী নেতা নজরুল ইসলাম সুইটের ছোট ভাই। যে সুইট বিএনপি শাসন আমলে খালেদা জিয়াকে কালা পতাকা দেখিয়েছিল। সেই ঘটনায় নিয়মিত মামলা করে সুইটকে জেলা খানা থেকে বের করে এনে র‌্যাব দিয়ে রাস্তার ওপর গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সেইদিন খোরশেদ গং, বিএনপি গং, তৈমুল গং প্রভাব বিস্তার করে সুইটকে হত্যা করেছে। নিয়াজুল ভাই হত্যার বিচার পায় নাই। তাদের পরিবারের কেউ রাজনীতিতে নাই। সে বিশাল মার্কেটের মালিক ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। আর এখন বলা হচ্ছে সে নাকি আইভীকে মারতে সেখানে গিয়েছিল। তিনি তিনি বলেন, নিয়াজুলের বিষয়ে আমি ডিফেন্ট করতে চাই না। সে যদি অস্ত্র বের করে গুলি করে থাকে তা পরীক্ষা করা হোক। সে দোষী হলে শাস্তি দেয়া হোক। সন্ত্রাসী নিয়াজুল ইসলামসহ দায়ীদের গ্রেফতারের প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম ॥ নারায়ণগঞ্জে ফুটপাথে হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর সন্ত্রাসী নিয়াজুল ইসলামসহ দায়ীদের গ্রেফতারে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজের নেতৃবৃন্দসহ সাংবাদিক সমাজ। বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের নগরীর চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ও নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানানো হয়। তদন্ত কমিটি গঠন ॥ নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, উভয় পক্ষের কিছু সমর্থকদের ইট পাটকেলের মাধ্যমে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পুলিশ অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে এ ঘটনা তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
×