ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী অঞ্চলে টানা শৈত্যপ্রবাহ

জনজীবন স্থবির ॥ কৃষিতে বিরূপ প্রভাব

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮

জনজীবন স্থবির ॥ কৃষিতে বিরূপ প্রভাব

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ এবার প্রলম্বিত শীতের কবলে পড়েছে উত্তরের রাজশাহী অঞ্চল। শীতকালে সাধারণত কয়েকদিন শৈত্যপ্রবাহ স্থায়ী হলেও এবারের চিত্র পুরো পাল্টে গেছে। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে শৈত্যপ্রবাহ স্থায়ী রয়েছে এ অঞ্চলে। ফলে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ। টানা শীতে প্রভাব পড়েছে কৃষি ক্ষেত্রেও। দীর্ঘ মেয়াদী শৈত্যপ্রবাহে এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে লাখ লাখ টাকার পান। বোরোর বীজতলায় দেখা দিয়েছে কোল্ড ইনজুরি। এমন টানা শীত এর আগে পার করেনি এ অঞ্চলের মানুষ। টানা শীতে পুরো এলাকা যেন পরিণত হয়েছে হিমাগার। রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ষাটোর্ধ রিক্সাচালক আবুল কাশেমের ভাষ্য ‘এমন শীত আগে দেখি নাইরে বাপু। ঠা-া মনে হচ্ছে হাড়ত যায়ি লাগিছে।’ সকাল ১০টার পর প্রতিদিনই ঝলমলে রোদ উঠছে তবে তাপমাত্রা বাড়ছে না। এ অবস্থায় শুধু রিক্সাচালক কাশেম নয় তার মতো হাজারো কর্মজীবী মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। আবহাওয়ার অফিসের তথ্য অনুযায়ী রাজশাহী অঞ্চলে ১০ দিনের বেশি সময় ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রীর নিচে রয়েছে। টানা শৈতপ্রবাহ বিরাজ করছে এ অঞ্চলে। শনিবারও রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এর আগে শুক্রবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আর গত ৬ জানুয়ারি রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। পরের দিন সেই তাপমাত্রা আরও কমে ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নামে। এদিকে টানান প্রচ- শীতে কাবু হয়ে পড়েছে রাজশাহীর মানুষ। এর মধ্যে সবচেয়ে কষ্টের শিকার শিশু ও বৃদ্ধরা। অতিদরিদ্র পরিবারগুলোর শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্য নেই। ফলে খড়কুটো জ্বালিয়ে তারা শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। এছাড়া শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ঠা-া থেকে সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশি ছাপিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, এ্যাজমাসহ নানা ধরনের শ্বাসতন্ত্রের রোগ। পর্যাপ্ত তাপের অভাব ও ঘন কুয়াশায় ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে বিভিন্ন মৌসুমি ফসল। শীতকালীন সবজির চাষ নিয়ে কৃষকরা চিন্তায় পড়েছে। তাদের আশঙ্কা, আবহাওয়া অনুকূলে না এলে তারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে, বোরো বীজতলা ও আলুর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলের অন্যতম অর্থকরি ফসল পানে কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছে পান চাষিরা। তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহে ঠা-াজনিত কারণে পানের বাজারে ধস নেমেছে। চারদিনের ব্যবধানেই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পান চাষিদের কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে। পাশাপাশি লোকসানের মুখে পড়েছে স্থানীয় পান ব্যবসায়ীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ মেয়াদী শৈত্যপ্রবাহের কারণে বরজ থেকে ভেঙ্গে গোছানোর পরে দেখা দিচ্ছে পানে কালো দাগ ও পচন রোগ। এতেই ভাগ্য টলে গেছে চাষিদের। ঠা-ায় গত চারদিনে প্রকার ভেদে পানের দাম তিন হাজার থেকে থেকে নেমে ৮শ’ টাকায় পৌঁছেছে। বিভিন্ন মোকামে দাম কমে যাওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও সর্বস্বান্ত হয়েছে। মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি পানহাটের বড় ব্যবসায়ী ইসলাম আলী জানান তিনি সম্প্রতি ১২ লাখ টাকার পান কিনেছেন। মৌগাছি হাট থেকে সেদিনই তিনি ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, ঠাকুরগাঁ, নীলফামারীসহ বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ করেন। তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহে প্রচ- ঠা-ায় পানের ওপর কালো দাগ পড়া ও পচে নষ্ট হওয়ায় মাত্র ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে তার পান। আরেক পান ব্যবসায়ী আকতার হোসেন জানান গত রবিবার তারা ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার পান কিনেছিলেন। নিলফামারী ও পীরগঞ্জে পাঠিয়ে মাত্র ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ বছরে কোন মতেই এই লোকসান উঠানো সম্ভব নয়। জেলার মৌগাছি বাজারে পানচাষি ইব্রাহীম খন্দকার, ফজলুর রহমান ও মাহবুব আলম বলেন বরজ থেকে ভাল পান সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে একদিনের মধ্যে কালোদাগ পড়ছে। পচেও যাচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে সর্বস্বান্ত হবে এবার পান চাষিরা বলে মনে করেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানায়, জেলার পবা, মোহনপুর, বাগমারা, পুঠিয়া ও দুর্গাপুরে এবার ২ হাজার ১৯৬ হেক্টর (১৬ হাজার ৩৪০ বিঘা) জমিতে পানের আবাদ রয়েছে। যার মধ্যে পবায় ১০৫ হেক্টর, মোহনপুরে ৮৯০ হেক্টর, বাগমারায় ৬৬০ হেক্টর, দুর্গাপুরে ৪৭০ হেক্টর এবং পুঠিয়ায় ৭০ হেক্টর। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, পানের রোগ-বালাই সম্পর্কে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
×