ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবেশ রক্ষায় প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ নয়, সহ অবস্থানের তাগিদ

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮

পরিবেশ রক্ষায় প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ নয়, সহ অবস্থানের তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বন্যা, জলাবদ্ধতা, ভূমিধসের জন্য শুধুই প্রাকৃতিক কারণ দায়ী নয়। মনুষ্যসৃষ্ট কারণও এই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে আরও ভয়াবহ করছে। এক সময় পুরো বাংলাদেশেই ছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। উন্নয়ন সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণার ফলে প্রকৃতি বিরোধী অবকাঠামো তৈরি করে তা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। প্রকৃতি বিরোধী এই অবকাঠামো সাময়িক সমস্যার সমাধান দিলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা ভয়াবহ সমস্যার সৃষ্টি করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে পরিবেশ রক্ষায় আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান। শুক্রবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্কের (বেন) উদ্যোগে আয়োজিত ‘বন্যা, জলাবদ্ধতা ও ভূমিধস’ বিষয়ক বিশেষ সম্মেলনে তারা এসব মন্তব্য করেন। দেশের সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা ও জাতীয় পেশাজীবী, সামাজিক সংগঠন এবং ৩৮টি বিষয় সংশ্লিষ্ট প্রখ্যাত বেসরকারী সামাজিক আন্দোলনের সহযোগে অনুষ্ঠিত হয় এই সম্মেলন। সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিদেশী পরামর্শক ও প্রকল্প নির্ভর পরিকল্পনা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় স্থানীয় জ্ঞান ও প্রযুক্তিকে প্রাধান্য দেয়ার তাগিদ দেন বক্তারা। সম্মেলনে অংশ নিয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিল বাংলাদেশে। আমরাই তা ধ্বংস করেছি। উন্নয়ন সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণার ফলে প্রকৃতি বিরোধী অবকাঠামো তৈরি করেছি। প্রকৃতি বিরোধী এই অবকাঠামো সাময়িক সমস্যার সমাধান দিলেও দীর্ঘমেয়াদে তা ভয়াবহ সমস্যার সৃষ্টি করছে। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ নয়, সহাবস্থান করতে হবে। সমস্যার স্থায়ী সমাধানে স্থানীয় জ্ঞানকে প্রাধান্য দিয়ে উন্নয়ন করতে হবে উল্লেখ করেন। ড. এম ফিরোজ আহ্মেদ বলেন বন্যা, জলাবদ্ধতা, ভূমিধসের জন্য শুধুই প্রাকৃতিক কারণ দায়ী নয়, মনুষ্যসৃষ্ট কারণও এই প্রাকৃতি দুর্যোগকে আরও ভয়াবহ করছে। ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের পরিবেশ রক্ষায় আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। ড. নজরুল ইসলাম বলেন বাংলাদেশের গঠন, বৃষ্টিপাতের ধরনের সঙ্গে অন্যান্য দেশের অবস্থা এক নয়, বিধায় পরিকল্পনায় অন্যদেশের অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য যথাযথ নয়। বিগত দিনগুলোতে পরিবেশবিরোধী ভ্রান্ত বিদেশী পরামর্শে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো বর্তমানে বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের অর্থে বাস্তবায়িত এই সকল প্রকল্প জনদুর্ভোগ বাড়িয়েছে। তাই দেশের স্থানীয় জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে উন্নয়ন ও পরিকল্পনায়। বাপার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন বলেন, দেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, ভৌগোলিক অবস্থান থেকে সুস্পষ্ট ধারণাবিহীন বিদেশী পরামর্শক ও তাদের করা প্রকল্প এদেশের প্রাকৃতিক সমস্যার সমাধান দেয়নি। বরং সমস্যা বৃদ্ধি করেছে বহুগুণে। ধ্বংস করেছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীবন-জীবিকা। আমরা দেশের বিজ্ঞানীদের সক্ষমতার ওপর পূর্ণ আস্থাশীল। বিশ^াস করি বন্যা, জলাবদ্ধতা, ভূমিধস মোকাবেলার জন্য তাদের গবেষণা ও স্থানীয় জ্ঞান সমস্যার স্থায়ী সমাধানে প্রয়োগ করতে হবে। স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ভবিষ্যত বাংলাদেশ হবে পৃৃৃৃথিবীর পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের উদাহরণ। স্থানীয় মানুষের জ্ঞান বৈজ্ঞানিক বিচার-বিশ্লেষণের সমন্বয়ে সমস্যার কার্যকর সমাধান করা সম্ভব। তাই সমস্যার পরিবেশবান্ধব ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে কাজ করতে হবে। আয়োজকরা জানান সম্মেলনের প্রথম দিনে ১০টি বৈজ্ঞানিক অধিবেশন, ২টি সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ সকল অধিবেশনে এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ড. আইনুন নিশাত, অধ্যাপক বদরুল ইমামসহ বাপা, বেন, সহআয়োজকবৃন্দের সদস্য, শিক্ষাবিদ, গবেষক, বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী, পরিবেশ ও সামাজিক আন্দোলনের প্রতিনিধি, পেশাজীবী, উন্নয়ন ও মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষার্থী, তরুণ-যুবা, গণমাধ্যম সদস্য ও পরিবেশ বিপর্যস্ত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, সংশ্লিষ্ট সরকারী সংস্থার প্রতিনিধিসহ চার শতাধিক প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
×