ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উজিরপুর পৌর এলাকায় তিন ইটভাঁটি ॥ পরিবেশ দূষণ

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১০ জানুয়ারি ২০১৮

উজিরপুর পৌর এলাকায় তিন ইটভাঁটি ॥ পরিবেশ দূষণ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ উজিরপুর পৌর সদরে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে চলছে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা তিনটি ইটভাঁটির কার্যক্রম। পৌর নগরীর প্রাণকেন্দ্রের প্রায় দুই বর্গকিলোমিটারের মধ্যে এসব ইটভাঁটিগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ পৌর এলাকার ফসলি জমিতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ইটভাঁটিগুলোতে দেদার পোড়ানো হচ্ছে কয়লার পরিবর্তে কাঠ। সরকারী নিয়মনীতি উপেক্ষা করে এসব ইটভাঁটি স্থাপনে দেখা দিয়েছে পরিবেশ দূষণ ও জনদুর্ভোগ। সূত্রমতে, ২০১৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সরকারী গেজেট আকারে আনুষ্ঠানিকভাবে উজিরপুর পৌরসভার কার্যক্রম শুরু হলে ইটভাঁটিগুলো পৌর এলাকার মধ্যে পড়ে। সেই থেকে আজোবধি ভাঁটিগুলো আগের মতো চলে আসছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ আইন অনুযায়ী জনবসতি এলাকার তিন কিলোমিটারের মধ্যে (যেখানে আনুমানিক ৫০টি পরিবার বাস করে) ইটভাঁটি করার নিয়ম নেই। এছাড়া পৌর এলাকার মধ্যে কোন ইটভাঁটি করা যাবেনা। পাশাপাশি সংরক্ষিত আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা সদর, সরকারী বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বনভূমি, অভয়ারণ্য, জলাভূমি ও কৃষি প্রধান এলাকাসহ পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকায় ইটভাঁটি স্থাপন করা যাবেনা। সরকারী এ আইন অমান্য করলে পাঁচ বছরের জেল ও জরিমানার বিধান রেখে জাতীয় সংসদে ইট প্রস্তুত ও ভাঁটি স্থাপন বিল ২০১৩ পাস করা হয়েছে। তারপরেও এ আইন অমান্য করে উজিরপুর পৌরসভার ফসলি জমি ও ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে ইটভাঁটি তৈরি করে চালানো হচ্ছে কার্যক্রম। সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের পরমানন্দসাহা গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মাত্র একশ’ গজের মধ্যে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মেসার্স হাজী ব্রিকস নামের ইটভাঁটি জ্বালানি হিসেবে স্তূপ করে রাখা হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ মণ কাঠ। কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে এসব কাঠ দিয়েই পোড়ানো হচ্ছে ইট। পৌর এলাকার সবচেয়ে বড় ফসলি জমিতে গড়ে ওঠেছে ওই ভাঁটি। ইটভাঁটির কালো ধোঁয়ার কারণে ওই এলাকার গাছপালা ও লতাপাতা কালো-বিবর্ণ হয়ে গেছে। ওই গ্রামের দিনমজুর আবুল হোসেন বলেন, ইটভাঁটির কারণে গত কয়েক বছর ধরে গ্রামের ফলজ গাছগুলোতে ফল ধরা বন্ধ হয়ে গেছে। একইভাবে জনদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পৌর এলাকার ৫নং ওয়ার্ডের কালিরবাজার গ্রামের কয়েক শতাধিক বাসিন্দার। সেখানে জনবসতি এলাকার ২০০ গজের মধ্যে এবিএস ব্রিকস নামে একটি ইটভাঁটি রয়েছে। যদিও ওই ভাঁটিতে কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। তবুও পরিবেশ দূষণ থেকে শুরু করে জনদুর্ভোগের কমতি নেই। ওই গ্রামের সাইদুল ইসলাম বলেন, এই ভাঁটির কারণে গাছপালা ও মানুষের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। ভাঁটি সংলগ্ন একই এলাকার আবুল সরদার জানিয়েছেন, ইটভাঁটির কারণে প্রতিবছর তার ঘরে নতুন ঢেউটিন লাগাতে হয়। এছাড়া পৌরসভার উত্তর রাখালতলা গ্রামে অবৈধভাবে গড়ে ওঠেছে এসবিআই ব্রিকস। সেখানেও একই অবস্থা। উজিরপুর পৌরসভার মধ্যে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এই তিন ইটভাঁটির চারপাশে ঘনবসতিপূর্ণ গ্রামগুলোতে রয়েছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাট-বাজার ও সড়ক-মহাসড়ক। এসব ইটভাঁটির কালো ধোঁয়ার বিরূপ প্রভাবে মরে যাচ্ছে গ্রামগুলোর ফলজ, ঔষধি গাছ। ইতোমধ্যে ওইসব গ্রামের অধিকাংশ ফলদ গাছের ফল ধরাও বন্ধ হয়ে গেছে। পৌর এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সবগুলো ভাঁটি মালিকরা বলছেন, তারা ইটভাঁটির অনুমোদন চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক আহসান হাবিব বলেন, বরিশালে নীতিমালার বাইরে গড়ে ওঠা ইটভাঁটির সংখ্যাই বেশি। পরিবেশ আইন অনুযায়ী জনবসতির এক কিলোমিটারের মধ্যে কোন ইটভাঁটি স্থাপন করা যাবেনা। সে অর্থে পৌর সদরের মধ্যে গড়ে ওঠা সব ইটভাঁটিই অবৈধ। ওইসব ইটভাঁটির পরিবেশ বিভাগের কোন ছাড়পত্র নেই। পরিচালক আহসান হাবিব আরও জানান, খুব শীঘ্রই ওই এলাকায় গিয়ে অবৈধ ইটভাঁটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে।
×