ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অম্লান ১০ জানুয়ারি

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ১০ জানুয়ারি ২০১৮

অম্লান ১০ জানুয়ারি

‘বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে তোমার স্বাধীন সোনার বাংলায়’- বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি বেতার থেকে বেজে উঠেছিল এই গান। কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠ থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি তাঁর প্রিয় জন্মভূমিতে সেই ৪৬ বছর আগে। বাঙালী জাতির ইতিহাসে তাই ১০ জানুয়ারি একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৭২ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তাঁর আগমনের মধ্য দিয়ে হানাদারমুক্ত দেশে মানুষের শুরু হয়েছিল এক নতুন অভিযাত্রা। বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী সেনাদের হাতে বন্দী হওয়ার আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তাঁকে থাকতে হয় পাকিস্তানের কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে। এ সময় প্রতি মুহূর্তে প্রহর গুনতে হয়েছে মৃত্যুর। তবে বাঙালী জাতি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পালনে বিন্দুমাত্র বিলম্ব করেনি। তারা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। সেদিন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সকলের স্বপ্ন ছিল একসূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধুই ছিলেন জাতির ঐক্যের প্রতীক। এই দিনে বঙ্গবন্ধুর আগমনে বদলে গিয়েছিল সবকিছু। মানুষ সব হতাশা ও দুর্ভোগ ভুলে দেশগড়ায় আত্মনিয়োগ করেছিল। বস্তুত খুব অল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের কল্যাণার্থে নানা উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। শিক্ষা, কৃষিসহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রকৃত ভিত্তি রচিত হয়েছিল সে সময়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর আগমন বাঙালী জাতির জন্য একটি বড় প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। তাঁর আগমনের দিনটি এখনও অনেকের মনে গভীর আনন্দের স্মৃতি হিসেবে বিরাজ করছে। এ দিনটি আমাদের দেশগড়ার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেরণা যোগায়। বর্তমান সময়ে জাতির উন্নতি ও অগ্রগতির এই লগ্নে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। দুর্ভিক্ষ তাড়িত দেশে দারিদ্র্যও হ্রাস পেয়েছে ব্যাপক। সর্বত্র এখন উন্নয়নের ছোঁয়া। যা সম্ভব হয়েছে তাঁর কন্যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে দেশে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও হয়েছে, এখনও হচ্ছে। যে বিচার বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন। এবারের ১০ জানুয়ারি আমাদের কাছে আলাদাভাবে গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্মারক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই স্বীকৃতিতে বাঙালীরা যেমন আনন্দিত তেমনি সম্মানীতও। এর ফলে বাঙালীর ইতিহাসের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রণোদনা সৃষ্টিকারী ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ মানবজাতির মূল্যবান ও ঐতিহ্যপূর্ণ সম্পদ হিসেবে স্বীকৃত ও গৃহীত হলো। স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকৃত ৩০ লাখ শহীদ আর সম্ভ্রম হারানো কয়েক লাখ মা-বোনসহ আমাদের সবার জন্য এটি এক মহা-আনন্দ ও বিরল সম্মানের বিষয়ে পরিণত হলো। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবন ও রাজনীতি থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে মোকাবেলায় আমাদের নতুনভাবে উজ্জীবিত হতে হবে। এদিন আমাদের অনেকেরই মনে হয়েছে, বঙ্গবন্ধু হয়ত আজ আবার আমাদের মধ্যে ফিরে এসেছেন। এই বোধটি জাতির অন্যতম বড় শক্তি। এই বোধই প্রেরণা দিচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ার। জঙ্গী ও দুর্নীতিমুক্ত-অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আজ আমাদের নতুনভাবে শপথ নিতে হবে। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের শত্রুদের নির্মূল করা ছাড়া এ দেশে সুস্থ পরিবেশ ফিরে আসবে নাÑ এ সত্যটি বিস্মৃত হলে চলবে না। জঙ্গী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করা জরুরী। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সবার চেতনায় উজ্জীবিত, এটা সব সময়ই অম্লান। এই চেতনা সর্বদা সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রেরণা যোগায়।
×