ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমিদস্যুদের থাবা এবার কেরানীগঞ্জে আমিনপাড়া খালে

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৬ জানুয়ারি ২০১৮

ভূমিদস্যুদের থাবা এবার কেরানীগঞ্জে আমিনপাড়া খালে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ৫ জানুয়ারি ॥ কেরানীগঞ্জের এবার ভূমিদস্যুদের থাবায় পড়েছে আমিনপাড়া শাখা খাল। দূষণ ও দখলের শিকার বুড়িগঙ্গার খাল ও শাখা খালগুলো। বুড়িগঙ্গা নদী দখলের পাশাপাশি এর শাখা খালগুলো ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। ফলে অনেক খালের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এসব এলাকার কিছু খাল সম্পূর্ণ ভরাট করে ফেলেছে ভূমিদস্যুরা। আবার কিছু খাল অর্ধেক ভরাট করে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। বাকি খালগুলো ধীরে ধীরে দখলের পাঁয়তারা চলছে। বুড়িগঙ্গার এসব শাখা খাল বেশিরভাগই বয়ে গেছে কেরানীগঞ্জের ভেতর দিয়ে। সর্বত্র ভরাটের ফলে ঐতিহ্যবাহী কেরানীগঞ্জ মারাত্মক পরিবেশ দূষণের কবলে পড়েছে। খালগুলো এমনভাবে ভরাট করা হয়েছে বর্ষায় এসব খালের পানি উপচে পড়ে। সামান্য বৃষ্টি অথবা অতিবৃষ্টি হলেই দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা থেকে পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছে এলাকাবাসী। নদ-নদীর নাব্য রক্ষা ও গতিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে গঠিত জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের এক সভায় শুভাঢ্যার খাল দখলমুক্ত করার জন্য শীঘ্রই অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। এ উপলক্ষে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট শুভাঢ্যার খাল খনন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ইতোমধ্যে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। শুভাঢ্যার খাল ও শাখা খালগুলো দখল মুক্ত করা ও সীমানা চিহ্নিতের ক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যায় সে ব্যাপারে করণীয় ঠিক করা হয়েছে ইতোমধ্যে। পানি উন্নয়ন বাস্তবায়ন সংস্থা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচিত বিষয়ের মধ্যে ছিল নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও সীমানা চিহ্নিত করা। যেহেতু খালের সীমানা চিহ্নিতকরণের কাজ শেষ হয়নি। তাই প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। আমিনপাড়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ডিপটি মিয়া বলেন, ছোটবেলায় এ খালে সাঁতার কেটে গোসল করতাম। জাল ও পলো দিয়ে বিভিন্ন পদের মাছ ধরতাম। এখন মাছ ধরা তো দূরের কথা পলিথিন ব্যাগ ও বর্জ্যরে পাহাড় জমে গেছে। তাছাড়া শত শত একর কৃষিজমিতে একফোঁটা পানিও প্রবাহিত হচ্ছে না। ওই এলাকার কৃষক সেচের পানির অভাবে ভোগান্তি পোহাচ্ছে। এছাড়া প্রাথমিক তালিকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পর যে সব এলাকা পুনরায় দখল করা হয়েছে সেগুলোও উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরপর সীমানা চিহ্নিত করার পর চালানো হবে চূড়ান্ত উচ্ছেদ অভিযান। এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ বলেন, প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী ডিসেম্বরের শেষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। তিনি আরও বলেন, শুভাঢ্যা খালের তীরবর্তী স্থানে এখনও ৬৪টি অবৈধ স্থাপনা রয়ে গেছে। শীঘ্রই এই সমস্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। বুড়িগঙ্গার কেরানীগঞ্জ এলাকার হাজারীবাগ, বেয়ারা, পানগাঁও, ঢাকা জুট মিল, পার গেন্ডারিয়া, মৌলভীর পুকুরপাড়, গেন্ডারিয়া, গোলাম বাজার, চ-ীতলা, নজরগঞ্জ, মনু ব্যাপারীর ঢাল, নেকরোজবাগ, রোহিতপুর ও হযরতপুর ইউনিয়নের শাখা খালগুলো অধিকাংশই দখল আর দূষণের শিকারে পরিণত হয়েছে। তিন যুগ ধরে ভূমিদস্যুরা ডোবানালা ও খালগুলো ভরাট করে গড়ে তুলেছে অবৈধ স্থাপনা। প্রশাসনের নীরবতার সুযোগ নিচ্ছে এসব ভূমিদস্যু। এ ব্যাপারে পরিবেশবিদ আবু নাসের খান জনকণ্ঠকে বলেন, ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকেই কেরানীগঞ্জ একটি ঐতিহ্যবাহী এলাকা ছিল। খাল, শাখা খাল ও ডোবানালায় ভরপুর ছিল এলাকাটি। দিনের পর দিন ভূমিদস্যুরা অপরিকল্পিতভাবে বালু ভরাট করে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ঢাকা শহরে তীব্র পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কেরানীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ সার্কেল) বলেন, অপরিকল্পিতভাবে মাটি ভরাট করার কারণে এই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে পরিবেশ দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সহযোগিতায় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষকে শুভাঢ্যা খাল খনন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে শুভাঢ্যার খাল খনন, দূষণমুক্ত ও অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
×