ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সুপারমুন

রাতের আঁধারে স্বর্গের স্নিগ্ধতা, মায়াময় নিসর্গ...

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

রাতের আঁধারে স্বর্গের স্নিগ্ধতা, মায়াময় নিসর্গ...

সমুদ্র হক ॥ রাতে কুয়াশা। শিশির ঝরছে। স্থলে দৃষ্টি সীমা কম। আকাশপানে তাকালে ঘন কুয়াশার মেঘ। এর মধ্যেই সপ্তর্ষীর তারাগুলো জ্বলে উঠে মিটিমিট করছে। আমন্ত্রণ জানাচ্ছে- চারদিকে একটু ভালভাবে দেখবার। দৃষ্টি ডানদিকে দিলেই এ কি! বিশাল এক চাঁদ। অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল ও বড়। মনে হবে চাঁদ নেমে এসেছে ধরণীতে। রাতের আঁধারে স্বর্গের অপার স্নিগ্ধ আলোক। ভরা পূর্ণিমার এমন আলো ভুবনে এনেছে সৌন্দর্যের মায়াময় নিসর্গ। খুলে দিয়েছে প্রকৃতিপ্রেমীর কল্পনার দুয়ার। রচিত হচ্ছে কত কবিতা, কত সাহিত্য, কত গান। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এই চাঁদকে বলছেন সুপার মুন। খ্রিস্টীয় নববর্ষের শুরুতেই এই চাঁদ উঠেছে। বাংলাদেশে দৃশ্যমান হয়েছে ২ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাতে। সুপার মুনের এমন ভেসে যাওয়া মিষ্টি আলোয় রাতের প্রকৃতিও নেচে উঠছে মৃদু হাওয়ায়। অন্য সময়ের চেয়ে এই চাঁদকে দেখা যাচ্ছে ১৪ শতাংশ বড়। উজ্জ্বলতা বেড়ে গিয়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি। আকাশে বিশাল আকৃতির এই চাঁদের উপস্থিতি থাকবে অন্তত এক সপ্তাহ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এ্যারোনেটিকস এ্যান্ড স্পেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) জানাচ্ছে, চাঁদ নিজের কক্ষপথের আবর্তনে একটা সময় পৃথিবীর খুব কাছে চলে আসে। এই চাঁদ দৃশ্যমান হয় সুপার মুন হয়ে। মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য ॥ এই জানুয়ারি মাসের শেষ দিনেও এমন সুপার মুন দেখা যাবে। বিজ্ঞানীরা এই সুপার মুনের নাম দিয়েছেন ব্লু মুন। বাংলায়- নীল চাঁদ। তাই বলে সেই চাঁদের রং নীল নয়। উপমায় এই নামকরণ হয়েছে। শিল্পী শুভ্র দেব ও শম্পা রেজার কণ্ঠের একটি গান এমন “নীল চাঁদোয়া আকাশটাকে আজ লাগছে যেন, মাঝে মাঝে কিছু কিছু তারা গোনা, মিষ্টি হাওয়ায় মিষ্টি ছোঁয়ায়...”। এই চাঁদ নিয়ে মানব মানবীর রোমান্টিকতার অন্ত নেই। প্রণয়ে কোন না কোন সময়ে চাঁদ আসবেই। আবার শিশুদের ঘুম পাড়ানোর সুর আছে “আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা...”। চাঁদকে নিয়ে কতই না গল্পকথা! ছেলেবেলায় নানি দাদিরা চাঁদের দিকে তাকিয়ে গল্প শোনাতেন- চাঁদের মধ্যে এক বুড়ি চরকা কাটছে। ১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে নাসার এ্যাপোলো-১১ প্রকল্পের নভোযানে নীল আর্মস্ট্রং এডউইন অলড্রিন, মাইকেল কলিন্স চাঁদের মাটিতে পৌঁছলে বিশ্বজুড়ে সে কী তোলপাড়। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে একটা দূরত্ব কষেছেন। কক্ষপথে চাঁদের আবর্তে কখন কোন সময় পৃথিবীর কাছে চলে আসে তারও একটি হিসাব বের করেন। পূর্ণিমার চাঁদ যখন পৃথিবীর খুব নিকটে আসে এবং কক্ষপথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে তখন চাঁদকে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বড় ও অনেক উজ্জ্বল দেখায়। এই চাঁদকেই একবিংশ শতকে বলা হচ্ছে সুপার মুন। ২০১৩ সালের ২৩ জুন চাঁদ ও পৃথিবীর দূরত্ব ছিল ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৯শ’ ৯১ কিলোমিটার। ২০১৪ সালের ১০ আগস্টে এই দূরত্ব ছিল ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮শ’ ৯৬ কিলোমিটার। ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর চাঁদ-পৃথিবীর দূরত্ব ছিল ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮শ’ ৭৭ কিলোমিটার। ২০১৬ সালের ১৪ নবেম্বর এই দূরত্ব ছিল ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৫শ’ ৬ কিলোমিটার। ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর দূরত্ব ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কিলোমিটার। এই দূরত্ব আরও কমে এসেছে। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের কথা- জানুয়ারির শেষের সুপার মুন আরও কাছে আসবে। সুপার মুন মানুষের কাছে সৌন্দর্য উপভোগের চাঁদ। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই চাঁদকে নিয়ে ভবিষ্যত হিসেব করছেন। তারা বলছেন, এমন মহাজাগতিক বিষয়টি বিশ্বকে আরও ঘটনাবহুল করে তুলবে। সুপার মুন যাই করুক- মানুষের কাছে চাঁদ অপার নিসর্গের প্রকৃতি হয়েই থাকবে। কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাসে চাঁদ আসবে কত কল্পকথার গল্প নিয়ে। সুর বাজবে “চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙ্গেছে উছলে পড়ে আলো/ ও রজনীগন্ধা তুমি গন্ধ সুধা ঢালো...”।
×