ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

খন্দকার মাহবুবুল আলম

মানবিক সমাজের বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

মানবিক সমাজের বিকল্প নেই

মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকার যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার সঙ্গে এখন নিরাপত্তার প্রশ্নও যোগ হলো। মানুষের মৌলিক অধিকারের সংখ্যা ‘পাঁচ’-এর স্থলে এখন ‘ছয়’ নিরাপত্তার কথা বিবেচনার সময় এসেছে। এই ছয়টি অধিকারের ছাড়া যে কোন একটি ব্যতীত অন্যগুলো অর্থহীন। তন্মধ্যে নিরাপত্তার গুরুত্বও কম নয়। নিরাপত্তাই যদি না থাকে তাহলে বাকি পাঁচটি অধিকার নিয়ে কতটুকু এবং কিভাবে বাঁচা সম্ভব? নাগরিক নিরাপত্তা এখন একটি বড় প্রশ্ন। যে দেশে নাগরিক নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন থাকে সে দেশ কতটুকু সভ্য ও মানবিক হতে পারে? অভাব-অনটন, দারিদ্র্যতা মানুষের থাকতেই পারে, কিন্তু নাগরিক নিরাপত্তা না থাকলে সভ্যতার তালিকায় কি নাম লেখানো সম্ভব। নাগরিক নিরাপত্তার প্রশ্ন এই জন্যই দেখা দিয়েছে যে, মান্ধাতা আমলের চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ের পাশাপাশি সাম্প্রতিককালে অপহরণের শিকার হয়ে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাও বেড়ে চলছে। যা সচেতন নাগরিক মাত্রই ভাবিয়ে তোলে। দোলনার শিশু থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, সাংবাদিক, রাজনীতিক কেউই যেন অপহরণ আতঙ্ক থেকে মুক্ত নয়। কারণ এমন বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর লোকজন অপহরণের শিকার হয়েছে। অপহরণের পর কারও ক্ষেত্রে মুক্তিপণ দাবি করা হলেও কারও ক্ষেত্রে অপহরণের পুরো বিষয়টাই রহস্যাবৃত। এই সামাজিক অবক্ষয় হঠাৎ করে একদিনে শুরু হয়নি, দীর্ঘ সময় ধরে এক-আধটু করে এর বিস্তৃতি ঘটেছে। তার ওপর আরও লক্ষণীয় গত কয়েক বছর ধরে একটি ধর্মান্ধ চরমপন্থী গোষ্ঠী ভয়ঙ্করভাবে তৎপর হয়ে উঠেছে। যেই মুক্ত চিন্তা বিকাশের মাধ্যমে মানুষ যুক্তিবুদ্ধিসম্পন্নতায় সত্যাগ্রহী হয়ে নৈতিক মূল্যবোধের মাধ্যমে মানবিক সমাজ সৃষ্টি করবে, সেই মুক্ত চিন্তা চর্চাকে ধর্মান্ধ চরমপন্থী মৌলবাদী গোষ্ঠীরা নানাভাবে ব্যাহত করছে। সাম্প্রদায়িক বা গোত্রীক বিষবাষ্প যতদিন সমাজে টিকে থাকবে ততদিন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানবিক সমাজ গঠন হবে না। মুক্তবুদ্ধি বৃত্তিকে মানবিক সমাজ গঠিত না হলে নাগরিক নিরাপত্তা কখনও আসতে পারে না। সাম্প্রদায়িকতা মানুষের মধ্যে ঘৃণা, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি ছড়িয়ে থাকে। ফলে মানুষে মানুষে দূরত্ব, শত্রুতা, উস্কানি, পারস্পরিক ক্ষতিসাধন, খুন, অপহরণ ইত্যাদি বাড়তেই থাকবে। কবি লিখেছেনÑ ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’ এই মানুষকে সাম্প্রদায়িক বিভক্তির দেয়াল ভেঙ্গে একক সত্তায় নিতে পারলে মানবিক সমাজ রচিত হবে। আইন-প্রশাসন দ্বারা যে কোন সামাজিক ক্ষত সাময়িক দমন করা যায়, চিরতরে নির্মূল কঠিন হয়ে পড়ে। তাই অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে প্রত্যেক মানুষকে যুক্তিবুদ্ধি সম্পন্নতায় গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন মুক্তবুদ্ধি চর্চার অবাধ পরিবেশ গড়ে তোলা। পরিশেষে বলব এই অস্থির, দূষিত সমাজ থেকে বাঁচতে হলে আইনশৃঙ্খলার পাশাপাশি সমাজতাত্তিক ও মনস্তাত্ত্বিক কায়দায় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মানবিক সমাজ গঠনে সামাজিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নতুবা এসব মিথ্যার বেসাতি, চুরি-ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ, গুম-খুন, ধর্ষণ এ সমাজের পিছু ছাড়বে না। এ সত্যটি উপলব্ধি করতে না পারলে সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ। মধ্য হালিশহর, চট্টগ্রাম থেকে
×