ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ৪ জানুয়ারি

ছাত্রলীগে সম্মেলনের দাবি জোরালো হচ্ছে, আজ ঘোষণা আসতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

ছাত্রলীগে সম্মেলনের দাবি জোরালো হচ্ছে, আজ ঘোষণা আসতে পারে

সোহেল তানভীর ॥ ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। হাঁটিহাঁটি পা পা করে ৭০ বছরে পা রাখতে যাচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ এই ছাত্রসংগঠনটি। ছাত্রলীগের এই সত্তর বছরের ইতিহাসে রয়েছে গৌরবের নানান স্বাক্ষর। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলন এবং পরবর্তীতে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এ ছাত্র সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। অহর্নিশ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড হয়ে রাজপথের আন্দোলনেও প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সামনে রেখে সম্মেলনের দাবি আবারও জোরালো হচ্ছে। সম্মেলনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে আজ নির্দেশনা আসতে পারে বলে ছাত্রলীগ নেতারা জানিয়েছেন। সম্মেলনের দাবিতে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেয় ছাত্রলীগের একাংশ। এর আগে একই দাবিতে ছাত্রলীগের সাধারণ সভায় হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলন না হওয়ায় অনেক নেতাই হতাশ। অনেকে আবার রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছেন। এদিকে, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মেয়াদ দুই বছর। কিন্তু বিগত কয়েকটি নির্বাহী সংসদ চার বছর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছে। সেই ধারাবাহিকতার দিকে এগোচ্ছে বর্তমান সংসদও। নতুন নির্বাহী সংসদের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২৬ জুলাই। কিন্তু সংবিধান লঙ্ঘনের এই ধারাবাহিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে চান ছাত্রলীগের তরুণ নেতারা। তারা বলছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগের একটি গঠনতন্ত্র রয়েছে। অথচ এই গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনই নিয়মে পরিণত করেছে ছাত্রলীগ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নিয়মিত সম্মেলন হচ্ছে না। এই গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলনের দাবিতে মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ক্যাফেটেরিয়ায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ছাত্রলীগের একাংশ। এর আগেই সম্মেলনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে আশ্বাস পাওয়ায় সম্মেলন স্থগিত করেন ছাত্রলীগের নেতারা। ছাত্রলীগের নেতারা জানান, ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের দাবিতে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সঙ্গে বৈঠকের পর ছাত্রলীগের সম্মেলনের ঘোষণা আসতে পারে। গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা মেনে সম্মেলনের দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম খান বলেন, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা বুধবার আমাদের ডেকেছেন। সেখানে আমাদের দাবির বিষয়ে তারা শুনবেন এবং আমাদের কথা নেত্রীকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) জানাবেন বলে জানিয়েছেন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করেছি। এই নেতা বলেন, ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগেই আমরা একটা নির্দেশনা চেয়েছিলাম। কাল যেহেতু সিনিয়র নেতারা আমাদের ডেকেছেন, আমরা আশা করছি সেখান থেকে একটা ইতিবাচক ফল পাব। তবে যে কোন বিষয়ে নেত্রীর (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা মানতে আমরা প্রস্তুত। তার কথাই আমাদের কাছে চূড়ান্ত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি আইনগতভাবে অবৈধ। যেহেতু সম্মেলনের বিষয়ে কোন নির্দেশনা পাইনি, তাই নৈতিকভাবে বর্তমান কমিটিই বহাল আছে বলে আমরা মনে করি। শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যারা জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ছাত্রলীগকে দেখভাল করেন তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আমাদের ডেকেছেন। তিনি আমাদের কথা শুনবেন। সহ-সভাপতি আরেফিন সিদ্দিক সুজন বলেন, জননেতা ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের নিয়মিত সম্মেলনের ওপর গুরুত্বারোপ করে কথা বলেছেন। আমরা তার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি। তিনি একসময় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সংগঠন পরিচালনার নানা দিক সম্পর্কে তিনি অবগত। আমরা আশা করছি তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে সম্মেলনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী নির্দেশনা দেবেন। কারও হুমকির মুখে সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আরেক সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান রনি বলেন, আমরা কারও হুমকি-ধমকিতে ভয় পাই না। কারও রক্তচক্ষুকে পরোয়া করি না। সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করার একমাত্র কারণ হলো আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। কারণ তারা আমাদের অগ্রজ। তাদের পরামর্শ ও নির্দেশনা আমাদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। একই কারণে গত ১২ জুলাই ছাত্রলীগের সাধারণ সভায় হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। কেন্দ্রীয় কমিটির এক সাংগঠনিক সম্পাদক কেন্দ্রীয় দুই নেতার উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘আগামী ২৬ জুলাই বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নতুন করে কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণের বিষয়ে কি হলো?’ এমন প্রশ্নের জবাবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর দায়ভার চাপিয়ে দেন। পরে সেই ছাত্রনেতা সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, ‘আমরা কি তবে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকব? বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তো একটি গঠনতন্ত্র মেনে চলে। যদি নির্দিষ্ট সময়ে কাউন্সিল না হয়, তবে নেত্রীর নির্দেশে তা সংশোধন করা উচিত।’ এ প্রশ্নে সেখানে সৃষ্টি হয় হট্টগোল। সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, সম্মেলনের সব প্রস্তুতি আমাদের আছে। আমাদের নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) যখন বলবেন তখনই আমরা সম্মেলন দেব। ক্ষমতা ধরে রাখার কোন ইচ্ছা আমাদের নেই। ১৯৪৮ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে জন্ম নেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৫-২৬ জুলাই সম্মেলনের মাধ্যমে বর্তমান কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে সোহাগ-জাকির প্যানেল নির্বাচিত হয়। সেই হিসেবে আরও পাঁচ মাস আগেই বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে।
×