ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাংবাদিকদের মুখোমুখি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম

বিদেশী কূটনীতিকরা আর নিষিদ্ধ দলগুলোর ভাষায় কথা বলবেন না

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

বিদেশী কূটনীতিকরা আর নিষিদ্ধ দলগুলোর ভাষায় কথা বলবেন না

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী জাতীয় নির্বাচনে কোন বিদেশী শক্তি বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করবে না বলে প্রত্যাশা করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তবে উন্নত নির্বাচনী কার্যক্রমের জন্য বিদেশী রাষ্ট্র সহায়তা দিতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তির সময়সীমা অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, অতীতের নির্বাচনে বিদেশী চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কোন বিদেশী শক্তি চাপ প্রয়োগ করবে না বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। আগামী নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল ও নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলোর অন্যায় কোন আবদার পূরণে বিদেশী কূটনীতিকরা এবং রাষ্ট্রগুলো অতীতের মতো এবার আর সময় নষ্ট করবে না। এর আগে আমরা নির্বাচন কেন্দ্রীক বিভিন্ন দেশের এক ধরনের তৎপরতা দেখেছি। এবার আর সেটি হবে বলেও আশাকরি না। এছাড়া জাতীয়তাবাদী শক্তি ও নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলো যে ভাষায় কথা বলে থাকে, সেই একই ভাষায় বিদেশী কূটনীতিকরা কথা বলবে না বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিগত জাতীয় নির্বাচনের পর অনেকেই মনে করেছিল সরকার হয়ত নির্দিষ্ট মেয়াদ পূরণ করতে পারবে না। কিন্তু সময় সেটা প্রমাণ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা কতটা পারি। সরকার বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যে ব্যাপক কার্যক্রম হতে নিয়েছে। অবশ্য চলতি বছর আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে রোহিঙ্গাদের সময়সীমার মধ্যে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। এ নিয়ে মঙ্গলবার জাতিসংঘের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে তিনি বলেন, গত ২৩ নবেম্বর রোহিঙ্গা ফেরাতে বাংলাদেশ মিয়ানমারের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে তার মধ্যে ছিল দুই মাসের মধ্যেই তাদের ফিরিয়ে নেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। আমরা এখনও এই সময়সীমার মধ্যেই রয়েছি। আমরা সেভাবেই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। অনেকে বলছে, ৫-৭ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে। তবে আমাদের হিসেবে এ সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। সোমবার পর্যন্ত ৯ লাখ ২৩ হাজার জনের নিবন্ধন করা হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের এই ঢল বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর কোন প্রভাব ফেলেনি। তবে স্থানীয় পর্যায়ে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। আর আমরা বিদেশীদের কাছ থেকে এই ইস্যুতে কোন প্রকার সুবিধা নিতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী শুধু মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই বলেছেন, ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে এই ১০ লাখ রোহিঙ্গাকেও খাওয়াতে পারবেন। তবে রোহিঙ্গাদের এই মানবিক বিপর্যয়ের জন্য পৃথিবীর শত ভাগ দেশ আমাদের পাশে আছে বলেও জানান তিনি। শাহরিয়ার আলম বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে এখনও কাক্সিক্ষত সেবা আমরা পৌঁছে দিতে পারিনি। প্রবাসীদের কাক্সিক্ষত সেবা পৌঁছে দিতে বেশ দ্রুত গতিতেই সমাধানের দিকে এগুচ্ছি। এ মুহূর্তে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে একটু চাপ যাচ্ছে। প্রতিদিন সেখানে প্রায় আট থেকে দশ হাজার প্রবাসীর সেবা দেয়া হচ্ছে। হাইকমিশনের পরিধি বাড়াতে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। দীর্ঘ আলাপচারিতায় তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার শুধু নিজেদের সরকারের আমলের কথা চিন্তা করে কাজ করে না। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য। এটা একটা দেশ-জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকারে যেই থাকুন দেশের উন্নয়নের স্বার্থে দীর্ঘমেয়াদী কাজ করার মানসিকতা জরুরী। চলতি বছর কূটনীতিতে কি কি চ্যালেঞ্জ রয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা এক কথায় বলা সম্ভব নয়। তবে আগামীতে যে চ্যালেঞ্জ আসুক না কেন, আমরা তা মোকাবেলা করতে সক্ষম। কোন সমস্যা হঠ্যাৎ করেই দেখা দেয়। সেটা সেই সময়েই মোকাবেলা করতে হয়। যেমন রোহিঙ্গা সমস্যাটি হঠাৎ করেই উদ্ভব হয়, আমরা সে সমস্যা মোকাবেলা করেছি। তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে আমাদের বেশ কিছু লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা, মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তার সমাধান করা ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দূতাবাসের সেবা উন্নত করা উল্লেখযোগ্য।
×