ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে নব্য জেএমবির আত্মঘাতী ২ জঙ্গী গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

চট্টগ্রামে নব্য জেএমবির আত্মঘাতী ২ জঙ্গী গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব মাদারবাড়ী এলাকার একটি জঙ্গী আস্তানা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে নব্য জেএমবির আত্মঘাতী দলের সক্রিয় দুই সদস্যকে। উদ্ধার করেছে ১০টি তাজা গ্রেনেড, সুইসাইডাল ভেস্ট এবং তাদের টার্গেট করা এলাকার একটি ম্যাপ। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে ভীতি সঞ্চার করতে বন্দরনগরীর সদরঘাট থানা আক্রমণ করার পরিকল্পনা ছিল এদের। শেষ পর্যন্ত মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎপরতায় বড় ধরনের একটি নাশকতার পরিকল্পনা ভেস্তে গেল জঙ্গীদের। সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার হাসান মোহাম্মদ শওকত আলী জানান, জঙ্গীরা পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দিতে আতঙ্ক সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়েছিল। তাদের টার্গেট ছিল সদরঘাট থানা এবং ওই এলাকায় অবস্থিত ট্রাফিক পুলিশের অফিস। পরিকল্পনা নিয়ে তারা নিরাপদ ভেবে আশ্রয় নিয়েছিল পশ্চিম মাদারবাড়ী শুভপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি ভবনের ৫ম তলায়। গোপন সূত্রে তথ্য পেয়ে পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (পশ্চিম) এএএম হুমায়ুন কবির এবং অতিরিক্ত উপ কমিশনার (সিটিটিসি) পলাশ কান্তি দেবের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে এদের পাকড়াও করা হয়। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট অভিযানে যে দুই জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলো মোঃ আশফাকুর রহমান ওরফে আবু মাহির আল বাঙালী ওরফে রাসেল ওরফে সেলেবি তিতুশ (২২) এবং মোঃ রাকিবুল হাসান ওরফে জনি, ওরফে সালাহ উদ্দিন আয়ুবী ওরফে আবু তাইছির আল বাঙালী ওরফে হাসান (১৯)। নব্য জেএমবির এ সদস্যরা একেক সময় একেক নাম ধারণ করে সাংগঠনিক কর্মকা- পরিচালনা করে আসছিল। অভিযানে উদ্ধার হয় ১০টি অবিস্ফোরিত তাজা গ্রেনেড, একটি ‘টার্গেট-১ লেখা স্কেচম্যাপ, যা সদরঘাট থানাকে আক্রমণের মূল টার্গেট হিসেবে তৈরি করা, ২টি নেভি ব্লু রঙ্গের কাপড়ে তৈরি কোমরে বাধার সুইসাডাল ভেস্ট এবং ২টি মোবাইল ফোন। তাদের পরিকল্পনায় যে ছিল সদরঘাট থানা আক্রমণ সে প্রমাণ পাওয়া যায় থানাকে টার্গেট করে কাল ও লাল কালিতে চিহ্নিত ম্যাপে। গ্রেফতার দুজনের মধ্যে আশফাকুর ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার শিলাশী এলাকার আনিসুর রহমানের পুত্র। আর রাকিবুল হাসান কুমিল্লার মুরাদনগরের কোদালকাটা গ্রামের মোঃ জসিম উদ্দিনের পুত্র। তারা উভয়ই চট্টগ্রাম নগরীর বালুরমাঠ সংলগ্ন পোর্ট সিটি হাউজিং সোসাইটির মিনু ভবনের ৫ম তলায় ভাড়ায় বসবাস করে আসছিল। পুলিশ জানায়, দুইমাস পূর্বে তারা বাসাটি ভাড়া নেয়। তাদের বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল। সুইসাডাল বেল্ট পাওয়া যাওয়ায় নিশ্চিত যে, এরা আত্মঘাতী জঙ্গী। অর্থাৎ প্রয়োজনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দিতেও মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল তারা। জিজ্ঞাসাবাদে তারা কথিত আমির ‘ডন’ ভাইয়ের কথা উল্লেখ করে। দু’জঙ্গী জানায় যে, ডন ভাইয়ের নির্দেশে তারা চট্টগ্রাম শহরে পুলিশের স্থাপনা টার্গেট করে আক্রমণের পরিকল্পনা নিয়েছিল। বাসাটিও ভাড়া করা হয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। সংবাদ সম্মেলনে দুই জঙ্গীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানানো হয়, সদরঘাট থানা এলাকার ম্যাপটি তৈরি করে সে কথিত আমির ডনের নিকট প্রেরণ করে তার নির্দেশনা অনুযায়ী আত্মঘাতী হওয়ার জন্য বাসায় ফিরে আসে। তাদের রুম তল্লাশি করে ১০টি গ্রেনেড এবং সুইসাইডাল বেল্ট ছাড়াও বেশকিছু আলামত উদ্ধার হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার পাশাপাশি জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি। আঘাত এবং আক্রমণ করে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করতে আত্মঘাতী বোমা হামলার পরিকল্পনায় তারা বোমা মজুত রাখে। এছাড়া বিভিন্ন সরকারী ভবনে নাশকতার ছকও ছিল এ জঙ্গীদের। গ্রেফতার করা নব্য জেএমবির এই দুই জঙ্গীর বিরুদ্ধে সদরঘাট থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, গ্রেফতার দুজনই শিক্ষাগত যোগ্যতায় এসএসসি পাস। তাদের আস্তানা থেকে একটি ট্যাবও উদ্ধার করা হয়েছে। এদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। এ গ্রুপের সঙ্গে আর কারা কারা সংশ্লিষ্ট তা জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসবে।
×