ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

থার্ড টার্মিনালের জন্য ১৪ হাজার কোটি টাকা অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

থার্ড টার্মিনালের জন্য ১৪ হাজার কোটি টাকা অনুমোদন

আজাদ সুলায়মান ॥ যুগান্তকারী আইন, কার্গোর চোখ ধাঁধানো সাজ, নতুন বিমানবন্দরের প্রকল্প চূড়ান্ত, নজীরবিহীন নিরাপত্তা বলয় ও রেকর্ডসংখ্যক যাত্রী পরিবহন ও রাজস্ব আদায়ের স্বাক্ষর রেখেছে সিভিল এভিয়েশন। এ জন্য ২০১৭ সালকে বিশেষ সফলতার বছর হিসেবে উল্লেখ করছে বেবিচক। সবচেয়ে বিস্ময়কর ছিল- দেশের সব কটি বিমানবন্দর দিয়ে ৬০ লাখেরও বেশি যাত্রীর যাতায়াত। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতায় এখন শাহজালাল বিমানবন্দরের অবয়ব বদলে যাচ্ছে। সমাপ্তির পথে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রকল্পের কাজ। চূড়ান্ত করার পথে বঙ্গবন্ধু এয়ারপোর্টের স্থান নির্ধারণের কাজ। থার্ড টার্মিনালের দরপত্র ডাকার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন। একইভাবে বাগেরহাটে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ শুরু ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজও চলছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রণয়ন করা হয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল আইন ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আইন। বহুল আলোচিত কার্গো নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও এখন প্রায় প্রত্যাহারের পথে। যে কোন সময় যুক্তরাজ্য থেকে আসতে পারে শুভ সংবাদ। ইতোমধ্যে সব শর্ত মেনে সব প্রস্তুতি শেষ করে এখন ডিএফটির কাছ থেকে নতুন বছরে একটি আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। বলেছেন, “এসব অর্জনের পথ মসৃণ ছিল না। দায়িত্ব নেয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ডুবন্ত জাহাজকে টেনে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আজ একটা বিশেষ জায়গায় পৌঁছা সম্ভব হয়েছে। সিভিল এভিয়েশান ছাড়া দেশ-বিদেশে পর্যটন খাতের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও পরপর তিন বছর বিমানে লাভের ধারা অব্যাহত রাখতে পারাটা ছিল খুবই চ্যালেঞ্জিং। এখন আমাদের একটাই টার্গেট, বেবিচক-কে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করে নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু করা। আশা করছি নতুন বছরেই সেটা সম্ভব হবে। আমার দৃষ্টিতে সেটাই হবে সেরা অর্জন। থার্ড টার্মিনাল ॥ বিদায়ী বছরের শেষ প্রান্তে এসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণ প্রান্তে থার্ড টার্মিনালের জন্য ১৪ হাজার কোটি টাকার আর্থিক অনুমোদন ছিল এই মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বড় অর্জনের স্বাক্ষর। বহুল প্রতীক্ষিত এই প্রকল্পের অগ্রগতি হিসেবে এখন চলছে দরপত্র তৈরির কাজ। সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ারমার্শাল নাইম হাসান দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, জানুয়ারি মাসেই দরপত্র ডাকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে। মার্চের মধ্যেই দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কার্যাদেশ দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে চলছে দৌড়ঝাপ। প্রায় ত্রিশ লাখ বর্গফুটের এই থার্ড টার্মিনাল তৈরির জন্য ইতোমধ্যে বর্তমানের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ও জেনারেল এভিয়েশনের হ্যাঙ্গার সরানোর কাজে কিছুটা জটিলতা দেখা দিলেও সেটা এখন উত্তরণের পথে। এজন্য প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামীর নেতৃত্বে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে একদল দক্ষ প্রকৌশলী ও কারিগরি জনবল। এ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে সভাপতি কর্নেল ফারুক খান কড়া নির্দেশ দিয়েছেন যে করেই হোক অবিলম্বে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হ্যাঙ্গার নির্মাণের জটিলতা দূর করে অবিলম্বে দরপত্র তৈরির কাজ সম্পন্ন করার। কমিটি সব ধরনের আইনী জটিলতা ও কারিগরি সমস্যা কাটিয়ে দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্প দুটির কাজ শেষ করার সুপারিশ করেছে। এ সম্পর্কে ফারুক খান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘বিমানবন্দরে প্রাইভেট হেলিকপ্টারের যে হ্যাঙ্গার রয়েছে, সেটা সরিয়ে নতুন করে হ্যাঙ্গার করতে হবে। এই কাজটি এখনও শুরু হয়নি। তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণেও বেশকিছু আইনী জটিলতা আছে। কমিটি আইনী জটিলতাগুলো সুরাহার মাধ্যমে নির্মাণ কাজ শেষ করতে বলেছে। বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের অনেক কাজ শেষ করতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। কমিটি তাদের সতর্ক হতে বলেছে। বঙ্গবন্ধু এয়ারপোর্ট ॥ থার্ড টার্মিনালের চেয়েও বড় প্রকল্প বঙ্গবন্ধু এয়ারপোর্ট। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য মাদারীপুরে স্থান নির্ধারণ হলেও স্থানীয় সংসদ সদস্যের আপত্তির কারণে বিষয়টি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, শিগগির এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। আগামী নির্বাচনের আগেই নতুন বিমানবন্দর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের চেষ্টা চলছে। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে গত বছর জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোই কোম্পানি লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেয় সরকার। নিপ্পন কোই এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত স্থানগুলোতে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করে। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চর জানাজাত এবং মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের মাঝামাঝি স্থানের একটি চরসহ মোট তিনটি স্থান চিহ্নিত করে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য সম্প্রতি একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয় বিমান মন্ত্রণালয়কে। যার মধ্যে চর জানাজাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। পরবর্তীতে এই প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হলে গত ২৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত স্থানগুলো নিয়ে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেননসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে মাদারীপুরের সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারদলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। তবে বৈঠকে চর জানাজাত নিয়ে স্থানীয় এমপি জোরালো আপত্তি জানান। তিনি বলেন, চর জানাজাতে বিমানবন্দর নির্মাণ করতে গেলে বহুমুখী সমস্যায় পড়তে হবে। সেখানে বহু জনবসতি রয়েছে। বিপুল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। অধিগ্রহণের জন্যই সরকারকে অনেক বেশি আর্থিক মূল্য গুনতে হবে। এছাড়া আড়িয়ল বিলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সে রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আগামী নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দল এবং সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্থানীয় এমপির এমন বক্তব্যের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্ভাব্যতা যাচাই করা তিনটি স্থানের ওপর আরেক দফা সমীক্ষা চালানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর বিমান মন্ত্রণালয় গত ৩১ অক্টোবর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোই প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করে। মন্ত্রি রাশেদ খান মেনন জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর আমরা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেছি। নতুন করে আরেক দফা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য নিপ্পন কোইকে নির্দেশ দিয়েছি। তারাও ১৫ কর্ম দিবসের মধ্যে একটি প্রতিবেদনও দিয়েছে। এটি আবারও প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হবে। আগামী ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত মতামত ও অনুমোদন পাওয়া যাবে। জানা যায়, বিমানবন্দরের জন্য কেয়াইন, চর বিলাসপুর, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চর জানাজাত ও রাজৈর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা এবং গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার বাঘিয়ার বিল, এই আটটি স্থান চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পরিদর্শন ও পর্যালোচনা করা হয়। তবে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চর জানাজাত সম্পর্কে স্থান নির্ধারণ সংক্রান্ত সার সংক্ষেপে বলা হয়, পদ্মানদীর তীরের এই চরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল নয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এর দূরত্ব ৬৮ কিলোমিটার। বিমান চলাচল খাতে ভবিষ্যতের বর্ধিত চাহিদা পূরণের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে রাজধানীর অদূরে একটি নতুন বিশ্বমানের বিমানবন্দর করা দরকার। বর্তমান সরকার একে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করছে। দ্রুততার সঙ্গে এর সফল বাস্তবায়নে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। এ বিমানবন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে বিমান চলাচলের একটি হাব হিসেবে গড়ে তোলারও পরিকল্পনা করছে সরকার। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে এ প্রকল্পের বিস্তারিত সমীক্ষা সম্পাদনের জন্য জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোই কোম্পানি লিমিটেডকে নিয়োগ দিয়ে গত বছরের ৩১ আগস্ট নিপ্পনের অনুকূলে কার্যাদেশ প্রদান করে বেবিচক। ২৯ সেপ্টেম্বর নিপ্পনের সঙ্গে বেবিচকের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। আর ১ অক্টোবর থেকে প্রতিষ্ঠানটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণের লক্ষ্যে সমীক্ষার কাজ শুর করেছিল। এই সমীক্ষার জন্য ১৩৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল। এক বছর সমীক্ষা চালানোর পর নবেম্বরের শেষ দিকে তারা প্রতিবেদন জমা দেয়। এ সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি ফারুক খান বলেন, ‘বিমানবন্দরটি নির্মাণের জন্য দুটি জায়গা বিবেচনায় আছে। আগামী ৯ জানুয়ারি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে তিনটি স্থানের মধ্যে দুটি স্থান নির্বাচন করে এগুলোর সুবিধা-অসুবিধাসহ সাইট সিলেকশনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। চোখ ধাঁধানো সাজে কার্গো ॥ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যেই কার্গোর হ-য-ব-র-ল চিত্রের জন্য নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে যুক্তরাজ্য ঢাকা বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কার্গো রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল- তা আজ বদলে গেছে। যুক্তরাজ্যের চাপিয়ে দেয়া যৌক্তিক অযৌক্তিক সব শর্ত মেনে নিয়ে সিভিল এভিয়েশন গত দুবছরে চোখ ধাঁধানো সাজে সজ্জিত করেছে এই কার্গো হাউস। এক সময় কার্গোর ভেতর ও বাইরে যত্রতত্র কার্টুন পড়ে থাকতো এলোপাতাড়ি। কোন শৃঙ্খলা ছিল না, নিয়মনীতি ছিল না। এখন সেই চিত্র পাল্টে ফেলা হয়েছে। ঢেলে সাজানো হয়েছে কার্গোর অবকাঠানো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বসানো হয়েছে বর্তমান বিশ্বের অত্যাধুনিক ইডিএস ও ইডিটি। আছে ডুয়েল ভিউ এক্সরে। সঙ্গে ডগ স্কয়াড। যাতে কখনো অন্য দুটো বিকল হলেও ডগ স্কোয়াড দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়। এভাবে বিভিন্ন স্তরে সাজানো হয়েছে কার্গো স্ক্যানিং ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সিভিল এভিয়েশনের বর্তমান মেম্বার অপারেশন এয়ার কমোডর মুস্তাফিজুর রহমানের দিবারাত্রি অক্লান্ত প্রচেষ্টার দরুন নির্ধারিত সময়ের আগেই সম্পন্ন করা হয়েছে ইডিএস প্রক্রিয়ার সব কাজ। তিনি বিশেষ উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্র নৌপথে পরিবর্তের আকাশপথে বিনাভাড়ায় ইডিএস মেশিন এনে বিপুল অংকের সাশ্রয় করেছেন। ইডিএস স্থাপনের পর ইতোমধ্যে আরএস-৩ এর স্বীকৃতি মিলেছে। নবেম্বরের পরিদর্শন করে গেছে য্ক্তুরাজ্যের ডিএফটি-এর বিশেষ টিম। তারা সরেজমিনে কার্গো হাউজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনের পর সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২০১৬ সালের মার্চে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর যুক্তরাজ্যের পরামর্শে শাহজালালের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয় ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেড লাইনকে। প্রতিষ্ঠানটি সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা কর্মীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশিসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের পরামর্শ দেয়। যুক্তরাজ্যের পরামর্শে রফতানি কার্গো জোনে বসানো হয়েছে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস)। এছাড়া, এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এএপিবিএন) ডগ স্কোয়াডে যুক্ত হয়েছে ৮টি কুকুর। কুকুরগুলো মাদক, অস্ত্র, বিস্ফোরকসহ ক্ষতিকর বস্তু শনাক্তে পারদর্শী। যুক্তরাজ্যের পরামর্শ অনুযায়ী বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের হোল্ডে রাখার মতো ভারি ব্যাগ তল্লাশির জন্য ডুয়েল ভিউ এক্স-রে স্ক্যানিং মেশিন, হ্যান্ডব্যাগ তল্লাশির জন্য ডুয়েল ভিউ স্ক্যানিং মেশিন, লিকুইড এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (এলইডিএস), আন্ডার ভেহিক্যাল স্ক্যানিং সিস্টেম (ইউ ভি এস এস), ফ্যাপ ব্যারিয়ার গেট উইথ কার্ড রিডার, ব্যারিয়ার গেট উইথ আরএফআইডি কার্ড রিডার, এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস), এক্সপোসিভ ট্রেস ডিটেকশন (ইটিডি) যন্ত্রপাতি বসানোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এদিকে সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে সরাসরি আকাশপথে কার্গো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে ফের ১০টি শর্ত দিয়েছে যুক্তরাজ্য। যদিও ডিসেম্বর মাসেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা আসতে পারে-এমন প্রত্যাশা ছিল মন্ত্রির। এ অবস্থায় সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে ১০টি শর্ত দিয়েছে ইউকে ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি)। এরমধ্যে রয়েছে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদে দুজন পরামর্শক নিয়োগ, এভিয়েশন সিকিউরিটিতে ইউকে মডেল অনুসরণ করা, ইউকের একক নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি। আগামীকাল রবিবার যুক্তরাজ্যের শর্তের বিষয়ে জবাব দেবে মন্ত্রণালয়। তবে এত শর্তের পরও এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদ ব্যক্ত করে মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘শর্ত না; কিছু অবজারভেশন দিয়েছে। যুক্তরাজ্য মনে করে এগুলো মিট-আপ করা দরকার। সেভাবে আমরা তাদের জবাব দিচ্ছি। আমরা তাদের কাছে কিছু ক্ল্যারিফিকেশন চেয়েছি। তাদের বলেছি আগে এম্বার্গো তুলে নাও। এছাড়া, যুক্তরাজ্যে আমার সফরের সময় ডিএফটিকে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়ন বিষয়ে অবহিত করা হয়েছিল। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। ক্রিসমাসে না পেলেও নিউ ইয়ারে পেয়ে যাবেন। উল্লেখ্য, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকার অজুহাতে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সে দেশে সরাসরি পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাজ্য। বদলে যাচ্ছে শাহজালাল ॥ অনেক বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে বছরের শেষ প্রান্তে এসে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে শাহজালাল বিমানবন্দরের সংস্কার কাজের। প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সংস্কারে রয়েছে গোলচক্কর থেকে টার্মিনালে প্রবেশের মুখে ৪টি লেন, একটি কার পার্কিং শেড, একটি ফুড কোর্ট, একটি ওয়েটিং শেড, একটি সৌন্দর্যম-িত চারুকর্ম, একটি সুপরিসর টয়লেট কাম বাথুরুম ও নিরাপত্তা চৌকি। এ মাসের শেষের দিকে এসব কাজ শুরু হওয়ার প্রস্তুতি থাকলেও শেষ মুহূর্তে জমি সংক্রান্ত সামান্য জটিলতার মুখে আরও কিছুটা সময় বিলম্ব হতে পারে। তবে প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, জানুয়ারিতেই কাজ উদ্বোধনের লক্ষ্য নিয়ে তৎপর রয়েছে কর্তৃপক্ষ। এই প্রকল্প শুরু হলে ৯ মাসের মধ্যেই শাহজালাল পাবে দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য। এতে মানুষের ভোগান্তি কমবে। বিমানবন্দরে প্রবেশ ও বাহির পথে আর যানজটের মুখে পড়তে হবে না। যুক্তরাজ্যের মানদন্ডে লাইসেন্স ॥ বছরের শেষ ভাগে যুক্তরাজ্যের মানদন্ডে বাংলাদেশের বৈমানিক ও উড়োজাহাজ প্রকৌশলীদের পরীক্ষা ও লাইসেন্স প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটি। পরিচালক (এফএসআর) উইং কমান্ডার জিয়াউল কবির জানান, এতে বিশ্ববাজারে তাদের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশনকে নিজেদের মানদন্ডে পরীক্ষা ও সার্টিফিকেট প্রদান সংক্রান্ত প্রস্তাবনা দিয়েছে যুক্তরাজ্যের সিভিল এভিয়েশন অথরিটির ইন্টারন্যাশনাল ডিভিশন। এটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে বসেই অনলাইনে লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দেয়া যাবে। পাস করলেই মিলবে যুক্তরাজ্যের সিভিল এভিয়েশন অথরিটির মানদ-ের লাইসেন্স। ওই প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে-বাংলাদেশ থেকে প্রফেশনাল ফ্লাইট ক্রু (উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার) ও এয়ারক্রাফট মেইনট্যানেন্স কাজের লাইসেন্স পেতে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন আগ্রহীরা। জানা যায়, যুক্তরাজ্যের মানদন্ডে লাইসেন্স পরীক্ষার জন্য তৈরি করা হবে ই-এক্সাম সিস্টেম। এর অংশ হিসেবে কম্পিউটার, ল্যাব ও অন্যান্য স্থাপনার জন্য ব্যয় হবে ৫২ হাজার ২৫০ ইউরো। আর প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে গুনতে হবে ৭৫ ইউরো করে। নিরাপত্তা সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত থাকবে কম্পিউটার। ফলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ছাড়া পরীক্ষার্থী অন্যকিছু দেখতে বা করতে পারবেন না। পরীক্ষা শেষ হওয়ার দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফল প্রকাশ হবে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন গ্রহণ, ব্যবস্থাপনা, পেমেন্ট গ্রহণ ও পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা যাবে ই-এক্সাম সিস্টেমের মাধ্যমে। বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশনের কার্যালয়ে বসে অনলাইনে পরীক্ষা দিতে পারবেন আগ্রহীরা। এসব পরীক্ষার জন্য ইএসএএস মানদন্ডে প্রশ্নপত্র তৈরি করবে যুক্তরাজ্যের সিভিল এভিয়েশন। এটি বাস্তবায়ন হলে সিভিল এভিয়েশনের অর্জন হবে যুগান্তকারী। এটির উদ্যোক্তা সিভিল এভিয়েশানের পরিচালক (এফএসআর) উইং কমান্ডার চৌধুরি জিয়াউল কবির জনক-কে বলেন, এ বিষয়ে করেসপন্ডিং চলছে। যুক্তরাজ্যের মানদন্ডে পরীক্ষা গ্রহণ ও লাইসেন্স দেয়ার জন্য আমরা যুক্তরাজ্যের সিভিল এভিয়েশনের প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছি। এতে বাংলাদেশি পাইলট ও উড়োজাহাজ প্রকৌশলীদের বিদেশে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে আরও বেশি। তবে সার্টিফিকেট প্রদানসহ অন্যান্য বিষয় কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। বেড়েছে আইকাও র‌্যাঙ্কিং ॥ মান্ধাতা আমলের সেই পুরনো আইন বাতিল করে বছরের মাঝামাঝি সিভিল এভিয়েশন এ্যাক্ট ও সিভিল এভিয়েশন অথরিটি এ্যাক্ট প্রণয়ণ করাটা ছিল যুগান্তকারী অর্জন। এ দুটো আইন প্রণয়ন হওয়ায় দেশ-বিদেশে বেড়েছে বেবিচকের মানদন্ড। পরিচালক উইং কমান্ডার চৌধুরি জিয়াউল কবিরের দৃষ্টিতে মূলত এই আইন দুটো প্রণয়নের ফলে আইকাও-এর কাছে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা ও ভাবমূর্তি বেড়েছে আশাতীত। সিভিল এভিয়েশনের র‌্যাঙ্কিং বেড়েছে ৭৭ এর চেয়েও বেশি যা দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের চেয়েই বেশি। এটি নিঃসন্দেহে ঈর্ষণীয় অর্জন। কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিকীকরণ ॥ এ বছরের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানের বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ অবতরণের মাধ্যমে শুভ যাত্রা করেছে কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিকীকরণ। প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামীর সার্বিক তদারকিতে পিডি আমিনুল হাসিবের নেতৃত্বে দেশী-বিদেশী প্রকৌশলীদের দিবারাত্রি কর্মযজ্ঞের ফলে ৫৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ প্রায় শেষ। আগামী মার্চে এর আনুষ্ঠানিক সমাপনী ঘোষণা দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। এরই মধ্যে অত্যাধুনিক স্থাপত্যরীতিতে একটি টার্মিনাল ভবন তৈরিরও দরপত্র ডাকা হয়েছে। সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব অর্থায়নের ২৬৫ কোটি টাকার টার্মিনাল প্রকল্পের দরপত্রে ইতোমধ্যে দেশী-বিদেশী ৫টি কোম্পানী অংশগ্রহণ করেছে। এসব দরপত্রের মূল্যায়ন চলছে। মূল্যায়ন শেষে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে কার্যাদেশ দেয়ার তোড়জোড় চলছে। এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, কক্সাবাজার ছাড়াও সৈয়দপুর এয়ারপোর্ট সম্প্রসারণ ও বাগেরহাটে একটি বিমানবন্দর প্রকল্পের কাজও অনেকটা অগ্রসরের পথে। বাগেরহাটে চলছে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ। নতুন বছরে নতুন মোড় নেবে এই এ দুটো প্রকল্প।
×