ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাইয়ে চীন-মৈত্রী সেতুতে ফাটল

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

চাঁপাইয়ে চীন-মৈত্রী সেতুতে ফাটল

ডি.এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ জেলা শহর সংলগ্ন মহানন্দা নদীর উপর শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর বীরশ্রেষ্ঠ সেতু। তৃতীয় চীন-মৈত্রী এই সেতুর অস্তিত্ব নিয়ে বড় ধরনের টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। ৪৪৮.৩০ মিটার সেতুর উপর অসংখ্য ফাটল ধরা পড়ার পর আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। যে কোন মুহূর্তে সেতুর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশল শাখার কর্মকর্তাদের। যদিও এই মুহূর্তে সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কর্মস্থলের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে প্রকৌশল শাখার জনৈক কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যেই কোন ধরনের সংস্কার তাদের সাধ্যের বাইরে হওয়ার কারণে সেতু নির্মাণকালে চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছে এটি পুনঃ দেখভালের। ১৯৯০ সালের সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থলবন্দরকে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহরের সঙ্গে সংযোগ সাধন করে এই সেতুটি। সেতুটি প্রতিষ্ঠাকালীন টার্গেট ধরা হয়েছিল এটি শত বছর স্থায়ী হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে মাত্র তিন দশক পেরিয়ে আসার পর পরই সেতুর স্থায়িত্বকাল নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আর এর অন্যতম কারণ সেতু পথে অতিরিক্ত লোড নিয়ে যাববাহন চলাচল। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে সেতুর উজান ও ভাটিতে কোয়াটার কিলোর মধ্যে লাগাতার বালু উত্তোলন। সোনামসজিদ বন্দর থেকে ছেড়ে আসা অধিকাংশ ট্রাক অধিক ভার বহন করে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে ৩০ টনের অনেক বেশি ভার নিয়ে সেতু অতিক্রম করে। বিশেষ করে এই উপমহাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ পাথর উৎপাদনকারী এলাকা ভারতের বিহারের পাকুড়। সোনামসজিদ বন্দর থেকে পাকুড়ের দূরত্ব কম হওয়ার কারণে উন্নয়নমূলক কাজের সিংহভাগ পাথর এই পথে মহানন্দা সেতু পেরিয়ে দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে যায় আমদানিকারকরা। পাথর বহনকারী ট্রাক অনেক ক্ষেত্রেই ৫০ টনের অধিক মালামাল নিয়ে গন্তব্যে যায়। প্রতিদিন এই ধরনের ট্রাকের সংখ্যা সহস্রাধিক পেরিয়ে যায়। এই অতিরিক্ত লোড বহনে সক্ষম নয় মহানন্দার উপর প্রতিষ্ঠিত চীন মৈত্রী সেতুটি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেতুর উপর অতিরিক্ত লোডের কারণে একাধিক চিড় ধরেছে। সেতুর দুই ধারে কিংবা সেতুর টোল ঘরের কাছে মাপযন্ত্র থাকলে কোন ট্রাক অতিরিক্ত লোড নেয়ার সাহস করতনা। যদিও বন্দর এলাকায় একাধিক মাপযন্ত্র থাকলেও ম্যানেজ করে ড্রাইভাররা দিব্যি ট্রাক বের করে নিয়ে আসে। এই ধরনের অধিক রোড বহনকারী ট্রাকের কারণে শুধু বীরশ্রেষ্ঠ সেতু হুমকির মুখে পড়েনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোনামসজিদ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী সড়ক ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রতি বছর। সংস্কারের পর তিন মাস যেতে না যেতেই এই সব সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এই বিষয়ে এই অঞ্চলের সড়ক বিভাগের প্রকৌশল শাখা বার বার আপত্তি জানিয়েও অতিরিক্ত পণ্য বহন বন্ধ করতে পারেনি। তাই সর্বশেষ আঘাত হেনেছে শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বীরশ্রেষ্ঠ (তৃতীয় চীন মৈত্রী সেতু) সেতুর উপর।
×