ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষামন্ত্রীর ব্রিফিং

অতীত উদাহরণের বক্তব্য খন্ডিতভাবে প্রকাশ হওয়ায় বিভ্রান্তি

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

অতীত উদাহরণের বক্তব্য খন্ডিতভাবে প্রকাশ হওয়ায় বিভ্রান্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, অতীত উদাহরণ তুলে ধরে তার দেয়া একটি বক্তব্য কতিপয় গণমাধ্যমে খন্ডিতভাবে প্রকাশ হওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। আর এই বিভ্রান্তির ওপর ভিত্তি করে কতিপয় বিশিষ্ট ব্যক্তি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মতামত জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বুধবার সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বলেন। এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ঘুষ সংক্রান্ত একটি বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী। সেটি নিয়ে গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, ২০০৯ সালের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ওই মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু অতীতের বক্তব্য বা তুলনাকে বর্তমানের কথা ধরে সংবাদ পরিবেশন করা হয়, যা বিভ্রান্তিকর। ওইদিনের বক্তব্যের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বিশিষ্টজনদের উদ্দেশে বলেন, ‘বিশিষ্টজনদের কেউ কেউ কতিপয় মিডিয়ার খন্ডিত ও ভিত্তিহীন সংবাদের ওপর ভিত্তি করে আমার বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন তুলছেন। আমি তাদের উদ্দেশে সবিনয়ে বলতে চাই, সুদীর্ঘকাল ধরে আপনারা আমার সততার সংগ্রাম, নীতি, আদর্শ, দায়িত্ববোধ সম্পর্কে অবগত আছেন। মিডিয়ার খন্ডিত ও ভিত্তিহীন সংবাদের ওপর ভিত্তি করে কোন মন্তব্য করার আগে সরাসরি আমাকে প্রশ্ন করলে অনেক বেশি খুশি হতাম।’ এর মধ্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে তার পদত্যাগ দাবি করেছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তিনি আজ (গতকাল) তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাই এর বাইরে তিনি কিছু বলতে চান না। এদিকে প্রেস ব্রিফিং শুরুর আগ মুহূর্তে একজন উপসচিব মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এসএম ওয়াহিদুজ্জামানকে সম্মেলন কক্ষ থেকে চলে যেতে বললে সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সটকে পড়েন। ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘বর্তমান সরকারের নানামুখী ইতিবাচক পদক্ষেপের ফলে শিক্ষা খাতের দুর্নীতি বিশ্বের তুলনায় অনেক কম। বিশ্বে শিক্ষাক্ষেত্রে গড় দুর্নীতির হার ১৭ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে তা ১২ শতাংশ। আমরা এ হারকে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে কাজ করে চলেছি। বেশ কটি দফতর, পরিদফতরে ইতোমধ্যে স্বচ্ছতা এসেছে, দুর্নীতিমুক্ত হয়েছে।’ লিখিত বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের দায়িত্ব নেয়ার সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বিভিন্ন দফতর, অধিদফতর ও সংস্থার মধ্যে ভাবমূর্তির দিক থেকে সব চেয়ে পিছিয়ে ছিল পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর। দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের দুর্বলতা ছিল দৃশ্যমান। কর্মকর্তারা ঘুষ-দুর্নীতিতে ছিলেন আকণ্ঠ নিমজ্জিত। এসবই ছিল পূর্ববর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকারের অপশাসনের ফসল। সেই সময় ডিআইএ কর্মকর্তারা স্কুল-কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে অসহায় শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষের খাম গ্রহণ করার সময় বলত এর ভাগ ওপরেও দিতে হয়। তাতে শিক্ষক-কর্মচারীরা মনে করতে বাধ্য হতো তাদের প্রদত্ত ঘুষ শুধু পরিদর্শনকারী অফিসাররাই খায় না, উর্ধতন আমলারাও পায়, এমনকি মন্ত্রী হিসেবে আমিও পাই। স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষক-কর্মচারীরা মনে করত- ‘অফিসাররা চোর, মন্ত্রীও চোর’।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেই সময় তাদের ঘুষ-দুর্নীতি থেকে বিরত রাখার পরিবেশ তো ছিলই না। অনেক শিক্ষক এসে আমার কাছে কান্নাকাটি করে বলতেন, আমরা নিম্ন বেতনের চাকরি করি, এত টাকা আমরা কোথা থেকে দেব? এক মাসের স¤পূর্ণ বেতনের টাকা ঘুষ দিলে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমরা খাব কী? ঘুষের মাত্রা আরেকটু সহনীয় হলেও বাঁচতাম’। ‘২৪ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় অতীতের ওইসব ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরতে গিয়েই আমি উদ্ধৃতি দিয়েছিলাম- ‘ঘুষের সহনীয় মাত্রা’ এবং ‘অফিসাররা চোর’, ‘মন্ত্রী চোর’। মূলত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কুশাসনের উদাহরণ তুলে ধরতেই ওই মন্তব্য করেছিলাম।’ কিন্তু কিছু পত্রিকা ও অনলাইনে ওই বক্তব্য খ-িতভাবে প্রকাশিত হওয়ায় ‘বিভ্রান্তি’ সৃষ্টি হয়েছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘ওই বক্তৃতায় বা কোনখানেই আমি বিএনপি-জামায়াতের এই প্রসঙ্গটা বলি নাই। কিন্তু যাদের (বিএনপি-জামায়াত) এই কথাটা প্রচার হয়েছে তারাও এখন মাঠে নেমে পড়েছেন আমাকে অভিযুক্ত করবার জন্য। আসলে তাদের সময়েই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। বরং তাদের উচিত তাদের সময়ের ব্যাখ্যা দেয়া, তাদের কুশাসনের ফল হলো এটা।’ নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘কেউ কেউ আবার আমার অসহায়ত্বের কথা বলেন। শিক্ষকদের সঙ্গে আমি শ্রদ্ধাপূর্ণ ব্যবহার করে থাকি। কারও ত্রুটি-বিচ্যুতির কথাও ভদ্রভাবে তুলে ধরি। আমি মানুষের সঙ্গে ব্যবহারে অত্যন্ত নমনীয় হলেও নীতি-আদর্শ-সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমি দৃঢ় ও কঠোর। আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে আমি অবিচল। সততা, স্বচ্ছতা আর দেশপ্রেমের ভিত্তিতেই একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দেশ ও জাতির সেবায় সারা জীবন নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। এটিই আমার রাজনৈতিক শক্তি। আমার কোন কিছুর তো ভয় নেই, কোন কিছু হারানোর কোন ভয় নেই। যার জন্য আমি কখনও কারোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে আমি পিছপা হই না।’
×