ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল, ঢাকা আবাহনী ২-১ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ

পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্ত জয় ঢাকা আবাহনীর

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭

পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্ত জয় ঢাকা আবাহনীর

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শেষ দিকে এসে বড় দলগুলোর জন্য মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র। আগের ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনীকে হারিয়ে দেয়া দলটি মঙ্গলবার ঘাম ঝরিয়ে ছেড়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনীরও। তবে আপসোস লাল জার্সিধারীদের, এগিয়ে যেয়েও শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছে তাদের। অর্থাৎ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলে ১৯তম রাউন্ডের ম্যাচে মুক্তিযোদ্ধাকে ২-১ গোলে হারিয়ে স্বস্তির জয় পেয়েছে ঢাকা আবাহনী। আবাহনীর জয়ের নায়ক দুই নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড এমেকা ডার্লিংটন ও সানডে চিজোবা। দু’জন করেন একটি করে গোল। মুক্তির হয়ে একমাত্র গোলটি করেন তৌহিদুল আলম তৌহিদ। লীগের প্রথমপর্বে মুক্তিযোদ্ধাকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল ঢাকা আবাহনী। এই জয়ে ১৯ ম্যাচ শেষে ঢাকা আবাহনীর ভা-ারে জমা হয়েছে ৪৫ পয়েন্ট। গতকাল আরেক ম্যাচে ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে যদি চট্টগ্রাম আবাহনী জয় না পেয়ে থাকে তাহলে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকবে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। অন্যদিকে এই হারে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে আগের ১০ নম্বরেই আছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। আগের ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনীকে মাটিতে নামানো মুক্তিযোদ্ধা এ ম্যাচেও উজ্জীবিত হয়ে মাঠে নামে। শুরু থেকেই চ্যাম্পিয়নদের দুর্গে শানাতে থাকে ধারালো আক্রমণ। ফল পেতেও বিলম্ব হয়নি। ম্যাচের ১৬ মিনিটে ডি বক্সের মাথায় ফ্রিকিক পায় মুক্তিযোদ্ধা। আবাহনীর ঘানার ডিফেন্ডার সামাদি ইউসুফ বাজেভাবে ফেলে দেন মুক্তির ফরোয়ার্ড শাহ আলমগীর অনিককে। আর তাতেই বাজিমাত করে কোচ মাসুদ পারভেজের দল। পরের মিনিটে বাঁ পায়ের অসাধারণ ফ্রিকিকে লক্ষ্যভেদ করেন মুক্তিযোদ্ধার ফরোয়ার্ড তৌহিদুল আলম তৌহিদ। তৌহিদের শট ঢাকা আবাহনীর গোলরক্ষক ও অধিনায়ক শহিদুল আলম ফেরানোর চেষ্টা করেও পারেননি। বুলেটগতির শট তার হাত ছুঁয়ে পোস্টে লেগে জালে জড়ায় (১-০)। পিছিয়ে পড়ার পর ম্যাচে ফিরতে মুহুর্মুহু আক্রমণ শানাতে থাকে ঢাকা আবাহনী। ২২ মিনিটে গোলবঞ্চিত হয় তারা। সম্মিলিত আক্রমণে ওয়ালি ফয়সালের ক্রস থেকে নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবার হেড বারপোস্টে লেগে ফিরে এলে সমতা ফেরাতে পারেনি আকাশী জার্সিধারীরা। পরের মিনিটেই ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ আসে মুক্তির। কিন্তু পাল্টা আক্রমণে ফাঁকায় বল পেয়েও বাইরে মারেন নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড মাগালান আওয়ালা। ২৯ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে সানডের নেয়া ফ্রিকিক দক্ষতার সঙ্গে ফিরিয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক আজাদ হোসেন। ৩৫ মিনিটে আবারও দারুণ সেভ করে দলকে রক্ষা করেন মুক্তি গোলরক্ষক। কর্নার থেকে আসা বলে সানডের হেড ফিস্ট করেন আজাদ। ৩৯ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর ইনডাইরেক্ট ফ্রিকিক পায় আবাহনী। মুক্তি গোলরক্ষক বেশি সময় বল হাতে রাখায় ফ্রিকিক পায় আলী ইয়াকুবের দল। কিন্তু ওয়ালী ফয়সালের শট সহজেই তালুবন্দী করেন গোলরক্ষক। পিছিয়ে থাকায় ম্যাচের বিরতির সময় আবাহনী গ্যালারি রীতিমতো উত্তাল হয়ে যায়। খেলোয়াড় ও সংগঠকদের গালমন্দ করতে থাকেন গ্যালারিতে উপস্থিত শ পাঁচেক দর্শক। বিরতির পর ৪৯ মিনিটে আরও একটি গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা। আবাহনীর ডি বক্সের সামান্য বাইরে থেকে মাগালান আওয়ালার শট অল্পের জন্য সাইডপোস্ট ঘেঁষে বাইরে যায়। বাকি সময়টুকু শুধুই আবাহনীর গল্প। ম্যাচে ফিরতে প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকেন সানডে, ইমনরা। ৫৮ মিনিটে আবারও ম্যাচে ফেরার সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে আবাহনী। একক প্রচেষ্টায় মুক্তিযোদ্ধার ডি বক্সে ঢুকে সানডের নেয়া কোনাকুনি শট কর্নারের বিনিময়ে ফিরিয়ে দেন মুক্তি গোলরক্ষক। ৬৩ মিনিটে ডাবল খেলোয়াড় পরিবর্তন করেন আবাহনীর ভারপ্রাপ্ত কোচ আলী ইয়াকুব। দুই ডিফেন্ডার সামাদ ইউসুফ ও নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে উঠিয়ে মাঠে নামান ডিফেন্ডার রায়হান হাসান ও নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড এমেকা ডার্লিংটনকে। এতে আবাহনীর আক্রমণের ধার আরও বাড়ে। ৬৬ মিনিটে আরেকটি সুযোগ নষ্ট করে দলটি। জটলার মধ্যে ইমন মাহমুদের শট সরাসরি চলে যায় মুক্তি গোলরক্ষকের গ্লাভসে। পরের মিনিটেই স্বস্তির গোলে সমতা ফেরায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। মিডফিল্ডার ইমন মাহমুদের নেয়া কর্নার কিকে অসাধারণ হেডে লক্ষ্যভেদ করেন বদলি হিসেবে নামা এমেকা (১-১)। এরপর ৭৬ মিনিটে ইমন মাহমুদের ফ্রিকিক গোলরক্ষক পাঞ্চ করে প্রতিহত করেন। ৮৭ ও ৮৮ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার তিনটি সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে আবাহনী। প্রথমে এমেকার শট মুক্তি গোলরক্ষক আজাদ ফিরিয়ে দেন। এরপর ইমন মাহমুদের শট আবারও গোলরক্ষক কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। পর মুহূর্তে কর্নার থেকে সানডের হেড বারপোস্ট ছুঁয়ে বাইরে যায়। ম্যাচের শেষ মিনিটে আর শেষ রক্ষা করতে পারেনি মুক্তিযোদ্ধা। আবাহনীর ইমন মাহমুদের শট ডি বক্সের মধ্যে হাতে লাগে মুক্তিযোদ্ধার ঘানার মিডফিল্ডার আব্বাস ইনুসির। ফলে পেনাল্টি পায় চ্যাম্পিয়নরা। পরের মিনিটে স্পট কিক থেকে সানডে চিজোবা আবাহনীর হয়ে জয়সূচক গোল করেন (২-১)।
×