ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব আজ থেকে আবাহনী মাঠে শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব আজ থেকে আবাহনী মাঠে শুরু

মনোয়ার হোসেন ॥ শীতের রাতে জমাটবাঁধা সুরের আসর। সেই সুরের মোহময়তায় এক আঙিনায় জড়ো হবেন শহরের নানা প্রান্তের মানুষ। কণ্ঠসঙ্গীত বা যন্ত্রসঙ্গীতের মূর্ছনায় ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি চলবে স্বজন বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা। নৃত্যশিল্পীর নাচের মুদ্রায় জুড়াবে নয়ন। বিশ্বখ্যাত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পীদের বৈচিত্র্যময় পরিবেশনায় সন্ধ্যা থেকে ভোর অবধি কেটে যাবে অনাবিল আনন্দের সময়। নগরে প্রশান্তির বার্তা ছড়িয়ে এভাবেই আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে সুরের আবেশে রাতজাগার পালা। আজ সন্ধ্যা থেকে শুরু হচ্ছে পঞ্চরজনীর ষষ্ঠতম বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব। শিল্পীর সংখ্যা, দর্শকের অংশগ্রহণ ও সময়ের বিচারে এটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত উৎসব। এ উৎসবের গত পাঁচটি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে। ষষ্ঠতম আসরের আয়োজনে নেমে আসে উৎসব হওয়া না হওয়ার আশঙ্কা। অবশেষে কেটে যায় ভেন্যু না পাওয়ার সেই শঙ্কা। ষষ্ঠতম আসরটি বসবে ধানম-ির আবাহনী ক্রীড়াচক্র মাঠে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত স্কয়ার নিবেদিত এবারের উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতিজন অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে। বেঙ্গল উচ্চাসঙ্গীত উৎসবের ষষ্ঠতম আসর প্রসঙ্গে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, শুরু থেকেই এবারের উৎসব হওয়া নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল। এমনকি ভেন্যু জটিলতায় পড়ে উৎসব বাতিল ঘোষণাও করতে হয়েছে আমাদের। তবে শেষ পর্যন্ত সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ষষ্ঠতম উৎসবটি। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে উৎসবটির প্রতি সাধারণ মানুষের জনসমর্থন। সংস্কৃতিপ্রেমী মানুুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে এ উৎসব। আর তাদের ভালবাসার কারণেই সরকারসহ নীতিনির্ধারক পর্যায়ে উৎসব আয়োজনের বিষয়ে প্রভাবিত করেছে। আর্মি স্টেডিয়ামের পরিবর্তে আবাহনী মাঠে উৎসব হওয়ায় আয়োজনে কোন অসম্পূর্ণতা থাকবে কিনাÑএমন প্রশ্নের জবাবে লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, ষষ্ঠতম উৎসবের ভেন্যুটি নতুন হলেও আমাদের আয়োজন বা প্রস্তুতিতে ঘাটতি নেই। আশা করছি, অন্য বছরগুলোর মতো এবছরের উৎসবও একইরকমভাবে সফল হবে এবং শ্রোতা-দর্শকরাও নির্মল আনন্দ পাবে। ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে নিবন্ধনের মাধ্যমে এবারের উপভোগের দর্শক-শ্রোতার অংশগ্রহণের বিষয়টি। তবে এ বছর কত সংখ্যক দর্শক-শ্রোতা উৎসবের জন্য নিবন্ধন করেছেনÑসে বিষয়ে কোন তথ্য জানায়নি আয়োজক বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। বরাবরের মতো দেশের শিল্পীদের সঙ্গে উপমহাদেশের প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গসঙ্গীত সঙ্গীতশিল্পীরা আলোড়িত করবেন এ আসর। আজ ২৬ শুরু হয়ে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে পাঁচ দিনের এ উৎসব। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটা থেকে শুরু হবে উৎসব। চলবে পরদিন ভোর পাঁচটা পর্যন্ত। ষষ্ঠতম উৎসবে অংশ নেবেন বাংলাদেশ ও ভারতের আড়াই শতাধিক উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিল্পী। সেই সুবাদে তাদের কণ্ঠে ঝরবে খেয়ালের পরিবেশনাসহ নানা রাগ-রাগিনীর খেলা করবে। শোনা যাবে সেতার, সরোদ ও সন্তরের সুমধুর সুর। বাজবে বাঁশি, বেহালা ও ম্যান্ডোলিন। তবলার বোলে উদ্দীপ্ত হবে শ্রোতা-দর্শকের ইন্দ্রিয়। ভরতনাট্যম থেকে শুরু কত্থক আর মণিপুরি নৃত্যশৈলীতে প্রফুল্ল হবে দর্শকের অন্তর ও নয়ন। এবারই প্রথম উৎসবে প্রাচ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমা শাস্ত্রীয়সঙ্গীতের সুর। কাজাখস্তান থেকে আসা ৫৮ সদস্যের আসতানা সিম্ফনি ফিলহারমনিক অর্কেস্ট্রার পরিবেশনা করা যাবে উদ্বোধনী দিনে। আর এ দলের তাদের সঙ্গে বেহারার যুগলবন্দী উপস্থাপন করবেন পদ্মভূষণপ্রাপ্ত প্রখ্যাত বেহালাবাদক ড. এল সুব্রামানিয়াম। আজ মঙ্গলবার রাতে প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও আবাহনী লিমিটেডের সভাপতি সালমান এফ রহমান, স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা ও স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর। ড. এল সুব্রহ্মণ্যনের নেতৃত্বে কাজাখস্তানের আসতানা সিম্ফনি ফিলহারমোনিক অর্কেস্ট্রার পরিবেশনার এবারের উৎসবের সূচনা হবে। প্রথম দিনের আয়োজনে সরোদে সুর তুলবেন রাজরূপা চৌধুরী, খেয়াল পরিবেশন করবেন বিদুষী পদ্মা তালওয়ালকর, সেতার-বাদন পরিবেশন করবেন ফিরোজ খান ও খেয়াল পরিবেশন করবেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী সুপ্রিয়া দাস। রাকেশ চৌরাসিয়ার বাঁশি ও পূর্বায়ন চ্যাটার্জির সেতারের যুগলবন্দীতে শেষ হবে প্রথম দিনের আয়োজন। দ্বিতীয় দিনের আয়োজন ॥ আগামীকাল বুধবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনে কত্থক নৃত্য পরিবেশন করবেন অদিতি মঙ্গলদাস ড্যান্স কোম্পানির নৃত্যশিল্পীরা। তবলা বাদনে অংশ নেবেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এরপর সন্তুর নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হবেন গত আসরগুলোয় শ্রোতাকে মুগ্ধ করা প-িত শিবকুমার শর্মা। খেয়াল পরিবেশন করবেন প-িত উলহাস কশলকর, সেতার বাজিয়ে শোনাবেন ওস্তাদ শাহিদ পারভেজ খান। ধ্রুপদ পরিবেশন করবেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী অভিজিত কু-ু। সব শেষে থাকবে প-িত রনু মজুমদার বাঁশি এবং প-িত দেবজ্যোতি বোস সরোদে যুগলবন্দী পরিবেশনা। তৃতীয় দিনের উৎসব ॥ বৃহস্পতিবার উৎসবের তৃতীয় দিনের আয়োজন শুরু হবে বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীদের সেতারে সুরে। এরপর ঘাটম ও কঞ্জিরার যুগলবন্দী পরিবেশনা উপস্থাপন করবেন বিদ্বান ভিক্ষু বিনায়ক রাম ও সেলভাগণেশ বিনায়ক রাম। খেয়াল পরিবেশন করবেন সরকারী সঙ্গীত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সরোদ বাজাবেন আবির হোসেন। বাঁশিতে সুর ছড়াবেন বাঁশরিয়া গাজী আবদুল হাকিম। ধ্রুপদ পরিবেশন করবেন প-িত উদয় ভাওয়ালকর। বেহালা বাজিয়ে শোনাবেন বিদুষী কালা রামনাথ। প-িত অজয় চক্রবর্তীর খেয়াল পরিবেশনের মাধ্যমে শেষ হবে তৃতীয় দিনের আয়োজন। চতুর্থ দিনের উৎসব ॥ শুক্রবার উৎসবের চতুর্থ দিনের আয়োজন শুরু হবে তিন ঘরানার শাস্ত্রীয় নৃত্য পরিবেশনা মাধ্যমে। মনিপুরি, ভরতনাট্যম ও কত্থক নৃত্য পরিবেশন করবেন সুইটি দাস, অমিত চৌধুরী, ¯œাতা শাহরিন, সুদেষ্ণা স্বয়মপ্রভা, মেহরাজ হক ও জুয়াইরিয়াহ মৌলি। সরোদে সুর তুলবেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। কণ্ঠসঙ্গীতে খেয়াল পরিবেশন করবেন ওস্তাদ রাশিদ খান। সরোদ বাজাবেন প-িত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। বেহালায় সুর ঝরাবেন ড. মাইশুর মঞ্জুনাথ। খেয়াল পরিবেশন করবেন প-িত যশরাজ। চেলোর বাজনা শোনাবেন সাসকিয়া রাও দ্য-হাস। প-িত বুদ্ধাদিত্য মুখার্জির সেতারের সুরে শেষ হবে এ দিনের আয়োজন। সমাপনী দিনের উৎসব ॥ পঞ্চম ও শেষ দিন শনিবারের আয়োজন শুরু হবে ওড়িশি নৃত্যের আশ্রয়ে। পরিবেশন করবেন বিদুষী সুজাতা মহাপাত্র। এরপর মোহনবীণায় সুর তুলেন প-িত বিশ্বমোহন ভট্ট। খেয়াল পরিবেশন করবেন ব্রজেশ্বর মুখার্জি। যৌথভাবে সেতার বাজাবেন প-িত কুশল দাস ও কল্যাণজিত দাস। এককভাবে সেতারে সুর তুলবেন প-িত কৈবল্যকুমার। বিগত কয়েকটি উৎসবে শ্রোতাকে আলোড়িত করা প-িত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশির সুরে শেষ হবে ষষ্ঠতম বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব। উৎসব নিয়মকানুন ॥ অনলাইন নিবন্ধন করে যারা পাস সংগ্রহ করেছেন তারাই অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে পারবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে রাত বারোটার পর সবরকম প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। মাঠে ব্যাগ নিয়ে ঢোকা যাবে না ও মাঠে ব্যাগ রাখার কোন ব্যবস্থা থাকবে না। তবে নারীরা ৮ ইঞ্চি বাই ৬ ইঞ্চি সাইজের ছোট ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। উৎসবস্থলে প্রবেশের জন্য সঙ্গে যে কোন প্রকার শনাক্তকরণ পরিচয়পত্র রাখতে হবে। মাঠে একাধিকবার প্রবেশ ও প্রস্থান করা যাবে না। বারো বছরের কম বয়সী শিশুদের সঙ্গে আনা যাবে না। উৎসব আঙিনায় গাড়ি পার্কিংয়ের কোন ব্যবস্থা থাকছে না। এছাড়া এবার শ্রোতাদের আনা-নেয়ার জন্য থাকছে না কোন পরিবহন ব্যবস্থা। এবারের বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের সম্প্রচার সহযোগী চ্যানেল আই, মেডিক্যাল পার্টনার স্কয়ার হাসপাতাল, ইভেন্ট ব্যবস্থাপক ব্লুজ কমিউনিকেশনস এবং আয়োজন সহযোগী ইনডেক্স গ্রুপ, বেঙ্গল ডিজিটাল, বেঙ্গল বই ও বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়। সার্বিক সহযোগিতায় পারফেক্ট হারমনি, সিঙ্গাপুর।
×