ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৩২০ মেও’র প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে ’১৯ সালের এপ্রিলে

পায়রায় প্রথম কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রের ৩৪ ভাগ কাজ শেষ

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

পায়রায় প্রথম কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রের ৩৪ ভাগ কাজ শেষ

রশিদ মামুন, পায়রা থেকে ফিরে ॥ পটুয়াখালীর পায়রায় ১২ বিলিয়ন ডলার বা ৯৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে নয় হাজার মেগাওয়াটের বৃহৎ বিদ্যুত হাব। বিদ্যুত হাবে দেশের প্রথম এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রটি ২০১৯ সালে উৎপাদনে আসবে। ইতোমধ্যে বিদ্যুত কেন্দ্রটির ৩৪ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। জেলার কলাপাড়ায় বিদ্যুত কেন্দ্রটি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে বিশাল নির্মাণযজ্ঞ চলছে। বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু শুক্রবার পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে জানান, পদ্মা সেতুর নির্মাণ শেষ হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্প কারখানার বিস্তার ঘটবে। সরকারের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী এই এলাকায় ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত প্রয়োজন হবে। যার মধ্যে নয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত আসবে পায়রা থেকে। নির্মাণাধীন এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে ২০১৯-এর এপ্রিলে এবং অক্টোবরে উৎপাদনে আসবে আরও ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সমান দ্বিতীয় ইউনিট। উৎপাদনের এই লক্ষ্য সামনে রেখে বিদ্যুত কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ চলছে। এখন বিদ্যুত কেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। আর আগামী বছর শুরুতেই বিদ্যুত কেন্দ্রটির মূল যন্ত্রাংশ আসতে শুরু করবে। জুন থেকে শুরু হবে যন্ত্রাংশ সংযোজনের কাজ। নির্মাণাধীন বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে বাংলাদেশ এবং চীনের সমান অংশীদারিত্ব রয়েছে। দেশীয় নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি) গঠিত বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) কেন্দ্রটির মালিক। বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে চীনের এক্সিম ব্যাংক বিনিয়োগ করছে। এনডব্লিউপিজিসিএল এবং বিসিপিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.এম খোরশেদুল আলম জানান, কেন্দ্রটিকে আমরা নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আনার চেষ্টা করছি। চলতি মাসেই কেন্দ্র নির্মাণে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণের অর্থ ছাড় করবে। এতে কেন্দ্র নির্মাণ আরও গতিশীল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, কয়লার পাশাপাশি আমরা তরলীকৃত এলএনজিকেও প্রধান্য দিচ্ছি। এজন্য এখানে দেশের সবচেয়ে বড় তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই ওই কেন্দ্রের নির্মাণ কাজও শুরু হবে বলে জানান তিনি। পায়রা বিদ্যুত হাবে এনডব্লিউপিজিসিএল ছয় হাজার ২৪০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করবে। এর মধ্যে সিএমসির সঙ্গে সমান অংশীদারিত্বে দুটি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এবং জার্মানির সিমেন্স এজির সঙ্গে তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াট এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করবে। এছাড়াও রুরাল পাওয়ার কোম্পানি আরপিসিএল একটি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট এবং আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন লিমিটেড আরও একটি সমান ক্ষমতার বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি ঘুরে দেখা গেছে এর প্রথম ইউনিটের কাঠামো নির্মাণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়াও দ্বিতীয় ইউনিটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির জন্য অস্থায়ী জেটি নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া স্থায়ী জেটি নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়াও বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন এবং আবাসন প্রকল্প নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এনডব্লিউপিজিসিএল সূত্র বলছে এলএএনজি ভিত্তিক ৩৬০০ মেগাওয়াট এলএনজি চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রটির জমি উন্নয়নের কাজ চলছে। প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিদ্যুত কেন্দ্রটি পরিদর্শনে গিয়ে জানান, এখানে মোট ১২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। যা চারটি পদ্মা সেতুর বিনিয়োগের সমান। পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালিত হবে। এতে এই এলাকায় অন্তত ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হবে। পায়রা থেকেই নয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যাবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির কয়লা সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য কয়লা সংগ্রহ করব। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। তারা বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে কয়লা সরবরাহ করতে আগ্রহী। এক প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো নির্মাণে চীন এবং ইউরোপ থেকে ঋণ নেয়া হবে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সরাসরি ঋণ নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার একটি দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ভিশন ঠিক করেছে। সেই লক্ষ্য অর্জনে বিদ্যুত বিভাগ কাজ করছে। প্রসঙ্গত কয়লা চালিত কেন্দ্র নির্মাণে চীন থেকে সিএমসি এবং এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য জামার্র্নি থেকে সিমেন্স ঋণের সংস্থান করবে। কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রটি হবে সর্বাধুনিক আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির। সর্বাধুনিক এই প্রযুক্তিতে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রিত মাত্রার মধ্যে থাকবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল অর্থায়ন তা ভালভাবে সরকার অতিক্রম করছে। এছাড়াও এখানে রাস্তাঘাট না থাকা, জনশূন্যতা এবং বিদ্যুত পরিবহন একটি জটিল বিষয়। সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ ঠিকাদারকে ঋণ পাওয়ার আগেই ১৫ ভাগ অর্থ বিনিয়োগের শর্ত দেয়া হয়েছিল। এর বাইরে কেন্দ্র নির্মাণে এখন পর্যন্ত মোট নির্মাণ ব্যয়ের ২০ ভাগ বিনিয়োগ করছে। প্রসঙ্গত ২০১৪ সালের অক্টোবরে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বিসিপিসিএল গঠন করা হয়। এখানে আরও ১০০ মেগাওয়াট সৌর এবং ৫০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুত নির্মাণ করা হবে। কেন্দ্রটি পরিদর্শনের সময় পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালিদ মাহমুদসহ চীনের সিএসসি এবং এনইপিসির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×