ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আমি ও আমার প্রশাসন দুর্নীতিমুক্ত অফিসের সামনে সাইনবোর্ড

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

আমি ও আমার প্রশাসন দুর্নীতিমুক্ত অফিসের সামনে সাইনবোর্ড

সমুদ্র হক ॥ জন প্রশাসনে সেবার মান নিশ্চিত, জবাবদিহিতা, সিটিজেন চার্টারসহ দফতরের সকল তথ্য হালনাগাদ, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ছবি ও পরিচয় তুলে ধরা এবং সর্বোপরি দুর্নীতিমুক্ত করতে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ‘আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত’ শীর্ষক ঘোষণা প্রতিটি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সামনে টাঙ্গানো শুরু হয়েছে। দেশে প্রথম এ ধরনের উদ্যোগে সাধারণ মানুষ সরাসরি উপকৃত হচ্ছে। দ্রুত দূর হচ্ছে প্রশাসনকে নিয়ে সাধারণের নেতিবাচক ধারণা। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুর্নীতি বিরোধী সমাজ প্রতিষ্ঠা ও সরকারী প্রশাসনে সেবার মান বৃদ্ধি করতে ১৪টি বিষয় বাস্তবায়নে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সকল দফতর, পরিদফতর ও অধিদফতরে বিষয়গুলো বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে বলেছে। বিষয়গুলো কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে তা সরেজমিনে দেখতে দুদকের কমিশনার দেশের বিভিন্ন অফিস পরিদর্শন করছেন। নতুন বছরের ৬ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ ও রাজশাহী সফর করবেন। পর্যায়ক্রমে সকল জেলায় জন প্রশাসনের সেবার মানসহ ১৪টি বিষয় বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা দেখে ও সাধারণের সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় আনবেন। উল্লেখ্য, দুদক দুর্নীতি প্রতিরোধে দেশে গণশুনানির আয়োজন করে। দুদক যে ১৪টি বিষয় বাস্তবায়ন করতে বলেছে তার মধ্যে প্রথমেই আছে- সাধারণের জন্য হেল্পডেস্ক সার্ভিসের উন্নয়ন। তারপরই আছে জনগণের সঙ্গে ভাল আচরণে উৎকর্ষ সাধন। এরপর যথাক্রমে সরাসরি দফতর প্রধানের সঙ্গে সেবা প্রার্থীদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা আরও সহজীকরণ। তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করে তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তার নাম পদবি সেল (মোবাইল) ফোন নম্বর দৃশ্যমান স্থানে টাঙ্গিয়ে রাখা। সিটিজেন চার্টারসহ দফতরের তথ্যাবলি নিয়মিত হালনাগাদ করে ওয়েবসাইটসহ ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের দৃশ্যমান স্থানে স্থাপন নিশ্চিতকরণ। ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে সাধারণের অধিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তথ্য মেলা ও সেবা সপ্তাহের নিয়মিত আয়োজন। ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে অধিকসংখ্যক জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে নিয়মিতভাবে গণশুনানির আয়োজন। দরকার হলে এই আয়োজন প্রতি সপ্তাহে করা। দালালদের হাত থেকে সেবা প্রার্থীদের রক্ষার জন্য দফতরের সামনে প্রত্যেক কর্মকর্তা কর্মচারীর নাম পদবি সেল ফোন নম্বর ও ছবি বিলবোর্ড স্থাপন নিশ্চিতকরণ। প্রত্যেক কর্মকর্তা কর্মচারীর পরিচয়পত্র পোশাকের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক। ‘দ্য টাউট এ্যাক্ট ১৮৭৯’ প্রয়োগের মাধ্যমে অফিসকে দালালমুক্ত করা। ‘আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত’ এমন ঘোষণা অফিস প্রধান কর্তৃক স্বাক্ষর করে দফতরের সামনে টাঙ্গিয়ে রাখা নিশ্চিত করা। সিটিজেন রিপোর্ট কার্ড প্রবর্তন করে তার ব্যবহার নিশ্চিতকরণ। সেবার নতুন নতুন ক্ষেত্র উদ্ভাবন করে সেল ফোন ও অনলাইনের মাধ্যমে সেবা সম্প্রসারণ। উর্ধতন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণের নিয়মিত অধঃস্তন অফিসসমূহের কার্যক্রম পরিদর্শন ও কার্যকর মনিটরিং নিশ্চিতকরণ। দুদক, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মনে করে দুদকের ১৪টি বিষয় অনুসরণ করলে সাধারণের হয়রানি অনেক কমে গিয়ে সেবা প্রাপ্তি আরও সহজ ও দ্রুত হবে। একই সঙ্গে সরকারী অফিসগুলোতে দুর্নীতি অনেক কমে যাবে। এই বিষয়ে বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী এই প্রতিবেদককে বলেন, জেলা প্রশাসনে বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে। ‘আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত’ ঘোষণা দেয়ার পর ভাল ফিডব্যক পাওয়া যাচ্ছে। তার (জেলা প্রশাসক) কাছে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত ফোন করে জানান কখন কোথায় কি হচ্ছে। এই অবস্থায় তিনি সরাসরি ও গোপনে বিষয়গুলো তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। বিষয়গুলো ‘গুড গবর্ন্যন্স (সুশাসনে) ভাল ভূমিকা রাখছে। যদিও সবগুলো বিষয় এত তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন সম্ভব নয় তারপরও বগুড়া জেলা প্রশাসন চেষ্টা করছে যতটা পাড়া যায় তা করে প্রশাসনে নতুন গতি আনা। বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বগুড়া জেলা প্রশাসকের কক্ষে কথা বলার সময় দেখা গেল সাধারণ লোকজন সরাসরি তার কাছে গিয়ে সেবার সহযোগিতা চাইছেন। তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছেন। জেলা প্রশাসক জানালেন এভাবে কাজ করলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। সাধারণের ভোগান্তি কমবে। বগুড়া জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক সুফিয়া নাজিম তার কক্ষের সামনে সিটিজেন চার্টার টাঙ্গিয়েছেন। একই সঙ্গে কোন বিষয়ে কোন কর্মকর্তার কাছে গেলে সেবা পাওয়া যাবে সেই কর্মকর্তার ছবি পরিচিতি সেল ফোন নম্বর দিয়েছেন। উপ পরিচালক জানালেন তিনিও ভাল সাড়া পাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে আগে সরাসরি সাক্ষাত করতে ইতস্তত বোধ করতেন তারা এখন স্বাচ্ছন্দ্যে সেবার জন্য আসেন। উর্ধতন কর্মকর্তাগণ সরাসরি তাদের সেবা দিতে পারছেন। বগুড়া জেলা প্রশাসনে সেবার জন্য আসা কয়েকজন বললেন, দেয়ালে টাঙ্গানো সিটিজেন চার্টারের বিল বোর্ড দেখেই বুঝতে পেরেছেন কিছু পরিবর্তন হয়েছে। তাছাড়া প্রবেশের সঙ্গেই যখন চোখে পড়ছে দুর্নীতিমুক্ত অফিস তখন সাহস করে অফিসারদের কাছে গেলে ভাল ব্যবহার ও সেবা পাচ্ছেন। এসব লোক নিজেদের এলাকায় বিষয়গুলো অন্যদের জানাচ্ছেন। বগুড়া জেলা প্রশাসনে এ ধরনের ব্যবস্থা ও বিলবোর্ড স্থাপিত দেখা গেছে ঠিকই তবে পুলিশ প্রশাসন ও অন্যান্য অফিসে পরিদফতর অধিদফতরগুলোতে এখনও এই বোর্ড ও সিটিজেন চার্টার চোখে পড়েনি। সূত্র জানায়, বিষয়টি গত সেপ্টেম্বর মাসেই সব সরকারী অফিসে পৌঁছানো হয়েছে।
×