ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমিনুল ইসলাম মিলন

উন্নয়নের সুফল নির্বিঘ্ন হোক

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭

উন্নয়নের সুফল নির্বিঘ্ন হোক

নৈরাজ্য একটি বাংলা শব্দ। সাধারণত অনিয়ম, অশান্তি, বিশৃঙ্খলার চরম পর্যায় বোঝাতে নৈরাজ্য শব্দটি ব্যবহৃত হয়। বিশৃঙ্খলা ক্ষণস্থায়ী কিন্তু নৈরাজ্য দীর্ঘস্থায়ী। মানব সভ্যতা বিকাশের এক পর্যায়ে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা-অনিয়ম দূর করে সমাজকে মানুষের বাস উপযোগী করে তোলার জন্য রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। একই সঙ্গে, সমাজে হয় সমাজপতি, গোত্রে গোত্রপতি, রাজ্যে রাজা, রাষ্ট্রে সরকার প্রভৃতির জন্ম হয় একটি নির্দিষ্ট ভূ-খন্ডের মানুষের ব্যক্তিগত-পারিবারিক-সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তাকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য তার উন্নয়নের জন্য। এ জন্যেই রাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকে বহিঃশত্রু হতে রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য, থাকে প্রতিরক্ষা বাহিনী। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলার অবনতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে কিছু নৈরাজ্যকর অবস্থা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে রাজনৈতিক কিছু বিষয়, বাদ-বাদানুবাদ বাদ দিলে অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় বাংলাদেশ একটি দ্রুত অগ্রসরমান দেশ হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। একটি সবল অর্থনীতি ও একটি বেগবান উন্নয়নধারায় বাংলাদেশের অর্জন আজ সারা বিশ্বে প্রশংসিত। বিগত ৪৬ বছরে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু গড় আয় বার গুণ বেড়েছে। ১৯৭২-১৯৭৩ সালে যা ছিলো ১২৯ মার্কিন ডলার। আজ ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে তা ১৬২০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বিশ^ব্যাংকের মতে বাংলাদেশে ২০১১ সাল থেকে মাথাপিছু আয় বড় দাগে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০১১ সালে ৮৭০ ডলার, ২০১২ সালে ৯৫০ ডলার, ২০১৩ সালে ১০১০ ডলার, ২০১৪ সালে ১০৮০ ডলার, ২০১৫ সালে ১১৯০ ডলার। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ১৪৬৫ ডলার। শুধু ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সালের মাথাপিছু আয়ের ক্রমবৃদ্ধি প্রমাণ করে দেশটি দিন দিন অর্থনৈতিকভাবে সবল হচ্ছে। ২০১৭ সালের অকাল বন্যা, ব্যাপক বৃষ্টিপাতসহ বিবিধ কারণে চাল, ডাল, পেঁয়াজ-রসুন, শাক-সবজি, তরি-তরকারিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে জনজীবনে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এটি অস্বীকার করার জো নেই। কিন্তু চাল নিয়ে যে চালাচালি চাল মুজদদাররা করেছে এবং চালের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। একদিন টেলিভিশনে দেখলাম- চাল সংক্রান্ত এক সভায় চালকল মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ সভার সভাপতি, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের দিকে তর্জনী উঁচিয়ে কথা বলছেন। খুব খারাপ লাগল। এত সাহস ব্যবসায়ীদের হয় কীভাবে? তোফায়েল আহমেদ আর দশজন মন্ত্রীর মতো একজন মন্ত্রী নয়, তিনি বাংলাদেশ সৃষ্টির কারিগরদের মধ্যে অন্যতম একজন সফল কারিগর। তোফায়েল আহমেদ ঠা-া মেজাজের মানুষ, তাই হয়তো সহ্য করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ সৃষ্টির আরেক কারিগর আ স ম রব কিন্তু সহ্য করেননি। সেটা ১৯৯৮ সালের কথা। তিনি তখন নৌ পরিবহনমন্ত্রী। সাবের হোসেন চৌধুরী নৌপরিবহন উপমন্ত্রী। বন্দর শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া সংক্রান্ত বিষয় আলোচনার জন্য সাবের হোসেন চৌধুরী দাফতারিক দায়িত্বে চট্টগ্রাম গিয়েছেন। বন্দর শ্রমিকরা তাঁর কথা শুনছেন না বরং পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছিল। সন্ধ্যের ফ্লাইটে জরুরীভাবে মন্ত্রী আ স ম রব চট্টগ্রাম গেলেন, আমি তখন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা। তাই সঙ্গে যেতে হলো। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বন্দর কার্যালয়ের সভাকক্ষ। সভা চলতেই থাকল। তর্ক-পাল্টা তর্ক-যুক্তি-পাল্টা যুক্তি এভাবে সময় গড়িয়ে চলে। কোন সমাধানে আসা যাচ্ছে না। এমন সময়ে এক বন্দর-শ্রমিক নেতা উচ্চকণ্ঠে তর্জনী উঁচিয়ে কি যেন বললেন আর যায় কোথায়! বাঘের মতো গর্জে উঠলেন আ স ম রব। এত বড় সাহস! আ স ম রবের দিকে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলে! মুহূর্তেই সব নীরব হয়ে গেল। যাক শেষ পর্যন্ত সর্বসম্মতভাবে একটা ঐকমত্যে পৌঁছানো গেল। ধর্মঘট প্রত্যাহার, সকাল ৭টা থেকেই বন্দরের সকল বিভাগের কাজ-কর্ম শুরু হবে। তখন মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। প্রসঙ্গটি টানলাম এই জন্য যে, বাজারে চাল-ডাল-তেল-নুন-শাক-সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অকারণ মূল্য বৃদ্ধির পেছনে যে সিন্ডিকেট কাজ করছে তারা এখন ধরাকে সরা জ্ঞান করেছে। সিন্ডিকেট নামক বাজার এবং নৈরাজ্যের নায়কদের কঠোরভাবে দমন না করলে জনদুর্ভোগ যেমন বাড়বে, তেমনি সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি-অনিয়মের এ সিন্ডিকেশন পদ্ধতি হচ্ছে রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের অধিকহারে অংশগ্রহণের একটি মারাত্মক কুফল। এ সব ব্যবসায়ী রাজনীতিকে ব্যবসায়ীর তরক্কি লাভের জুৎসই মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে। তাই এরা জনসেবক না হয়ে অনেক্ষ ক্ষেত্রে জনশোষক হয়ে যাচ্ছে। আমরা ভুলে যাইনি- এ দেশে এক সময় সিটি সেল নামক মোবাইল ফোনের একচেটিয়া কারবার ছিল। যেতে কাটে টাকা আসতেও কাটে, তখন হাতেগোনা লোকের হাতে মোবাইল ফোন। ১৯৯৬-তে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সিটি সেলের একচেটিয়া রাজনৈতিক ব্যবসায়ের ইতি ঘটে। আজ রাস্তায় ভিক্ষুকের হাতেও মোবাইল ফোন। যোগাযোগ মাধ্যমের এ বিপ্লবের নেপথ্য নায়ক নিঃসন্দেহে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ক্ষেত্রেও এ কথাটি সমানভাবে প্রযোজ্য। শিক্ষার ক্ষেত্রে নৈরাজ্য মনে হয় বাংলাদেশের নিয়তির সঙ্গে মিশে গেছে। এক সময় ছিল নকল-দৌরাত্ম্য। এখন সেটা বন্ধ হয়ে হচ্ছে প্রশ্নপত্র ফাঁস। কিছুতেই এটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। প্রশ্নপত্র ফাঁস নিম্ন মুখী হতে হতে এখন পঞ্চম-অষ্টম শ্রেণীর পিএসসি এবং জেএসসি পর্যন্ত পৌঁছেছে। অন্যদিকে ছাত্র নামক ‘বীর বাহাদুরদের’ শিক্ষক পেটানো, শিক্ষক-শিক্ষিকা লাঞ্ছিতকরণ, ভাঙচুর-অবরোধ-ধর্মঘট তো প্রায়শই ঘটে। কিছুদিন আগে শিক্ষা শহর রাজশাহী উত্তাল ছিল ছাত্রী অপহরণের ঘটনায়। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা হলের সামনে থেকে গত ১৭ নবেম্বর ফিল্মী স্টাইলে এক ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়। দিন দুয়েক আগে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ে একটি ছাত্র সংগঠনের চাঁদাবাজির ঘটনায় সৃষ্ট জনদুর্ভোগের দায় নিবে কে? ছাত্র নামধারী বীর-বাহাদুরদের এ দুষ্টচক্র হতে বাঙালী জাতি কবে মুক্তি পাবে? আর শিক্ষার মান নিয়ে কিছু না বলাই শ্রেয়। পাশের হারে শিক্ষামন্ত্রী উল্লসিত। জিপিএ-৫ এ তিনি তৃপ্ত, সোনালি জিপিএতে তিনি মহাতৃপ্ত। আম জনতার বলার কিছু নেই। তবে তারই সহকর্মী সেতুমন্ত্রী যখন বলেন, ‘এক লাইন বাংলা শুদ্ধ করে লিখতে পারে না তারা আবার সাংবাদিক! তখন শিক্ষা ও সাংবাদিকতার মান নিয়ে জাতির চোখ কপালে উঠে। অন্যদিকে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্তি এবং উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য গোটা পরিবার শুদ্ধ এক অসম যুদ্ধে লিপ্ত। ভর্তি হওয়া, না হওয়ার হাহাকার অন্যসব হাহাকারকেও ছাড়িয়ে যায়! আমরা জানি স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। একটি দেশের স্বাস্থ্য-চিকিৎসা খাত প্রমাণ করে দেশটি কত উন্নত। কিন্তু সেই স্বাস্থ্য খাতও আজ অসুস্থ। রোগী মারা গেলে রোগীর আত্মীয়স্বজন কর্তৃক ডাক্তার হেনস্থা, হাসপাতাল ভাঙচুর একটি ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। আমার-আপনার মতো নিরীহ জনগণের, যাদের রাজনৈতিক পরিচয় নেই- চিকিৎসকদের অবহেলা-অপচিকিৎসায় তাদের পরিবারশুদ্ধ মারা গেলেও টু-শব্দটি করার জো নেই। সে ক্ষেত্রে ডাক্তার-নার্স-হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রবল বলবান। দুর্বল জনতার পক্ষে সে বৃক্ষের একটি পাতা ছেড়ারও সামর্থ্য নেই। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনও সবলের পক্ষে থাকে। আমি রাজনীতি করি না, ক্ষমতাসীন দলে আমার কেউ নেই তাই বাংলাদেশে আমি বড় অসহায়’-এ ধারণা দিন দিন কারো কারো মর্মমূলে প্রোথিত হচ্ছে। এ বিপজ্জনক ধারণা চিরতরে নির্মূল করতে হবে- নইলে একদিন রাষ্ট্রের মূল কাঠামোই ভেঙ্গে পড়বে। তাই রাষ্ট্রের আইন প্রতিটি নাগরিকের রক্ষাকবচ- এ সত্য প্রতিষ্ঠা করা আজ জরুরী হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, অপচয় স্বাস্থ্যখাতে রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে দেশব্যাপী স্বাস্থ্য প্রশাসন কে পরিচালনা করে তা ‘ওপেন সিক্রেট’। বিএনপি আমলে ড্যাব, এ আমলে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, বদলি-নিয়োগ সবই তাদের হাতে- এ সব কথা কি একেবারে মিথ্যে? অধ্যাপক রুহুল হক স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকাকালে এক মিঠুর কথা পত্রিকায় পড়তাম। দিন কয়েক আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম আরেক মিঠুর কীর্তি-কারবার! পাবনা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে অবসরে যাওয়ার মাত্র ১৫ দিন আগে কেন ওএসডি করা হলো- তার জবাব কে দেবে? তাঁর অপরাধ-নব্য মিঠুদের কম্পিউটার-কম্পোজ করা স্বনির্ধারিত কোটি টাকার চাহিদাপত্রে স্বাক্ষর করতে তিনি নারাজ। তাঁর বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের হৃদয়স্পর্শী কান্না এক করুণ ফরিয়াদে রূপ নিয়েছে- এ অভিসম্পাৎ কার ওপর বর্তাবে জানি না। আশা করি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশন এ বিষয়টির তদন্ত করবেন এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনবে। নাফ নদীর ওপারে মগদের কার্যকলাপ গোটা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করছে, কিন্তু ঘরের ভেতরে মগের মুল্লুকের প্রত্যক্ষদর্শী সাধারণ জনগণ- এ কথাটি সকলের মনে রাখা উচিত। এক সময়ে গণতান্ত্রিক রাজনীতির সবচেয়ে বড় নির্ভরতা ছিল এদেশের শ্রমিক-শ্রেণী। আদমজী থেকে নোয়াখালীর বড় সাদুর মিছিল পল্টনের কাছাকাছি না এলে বঙ্গবন্ধু নাকি ৩২ নম্বর থেকে বের হতেন না। মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে আমাদের শ্রমিকশ্রেণীর অংশগ্রহণ ও আত্মত্যাগ সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে। আজকে আদমজী নেই, বিশাল বিশাল শ্রমঘন কলকারখানা নেই। তাই শ্রমিক রাজনীতির সেই দিনও নেই। এখন সে স্থান দখল করেছে পরিবহন শ্রমিক রাজনীতি। পরিবহন শ্রমিকরাই নির্ধারণ করে রাস্তার আইন। যাত্রীরা গিনিপিক। গাড়ির সংখ্যাধিক্যে রাস্তায় জ্যাম হতে পারে, তবে জট নয়। জট হয় ট্রাফিক আইন না মেনে যেনতেনভাবে গাড়ি চালালে। গাড়ির জ্যাম আস্তে আস্তে কমে আসে, কিন্তু জট ছাড়ানো বড়ই কঠিন ব্যাপার। ট্রাফিক পুলিশের নাভিশ্বাস ওঠে। কিন্তু কিছুই করার নেই। পরিবহন খাত একটি স্পর্শকাতর খাতে রূপ নিয়েছে। পরিবহন ধর্মঘটে দেশ অচল করার হুমকি নিত্য ব্যাপার। যানজট এখন রাজধানীসহ বড় বড় শহর ছাড়িয়ে উপজেলা শহরে বিস্তৃত। অন্যদিকে গণপরিবহনে ভাড়া আদায়ে চলছে চরম নৈরাজ্য, যাত্রী হেনস্থা নিত্যদিনের। কর্ণবিদারক বেআইনী হুটার নামক হর্ন এখনও দিব্যি বাজিয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতাবানরা। অন্যদিকে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আমলা থেকে নিম্ন পর্যায়ের অনেক আমলার গাড়িতেও সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে শোভা পাচ্ছে পতাকাদ-। সংবিধানে কার কার গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়বে, কখন উড়বে তা সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে। তা সত্ত্বেও আমাদের আমলারা কী কারণে পতাকাহীন পতাকাদ- তাদের গাড়িতে লাগিয়ে রাখেন তা বোধগম্য নয়। এটিও একটি বিধি-বহির্ভূত কাজ। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হচ্ছে যখন দেশ এগিয়ে চলে, গণমানুষের জীবন-মানের উন্নয়ন হয়, তখনই এক শ্রেণির রাজনীতিক-ব্যবসায়ী-বুদ্ধিজীবী-ধর্মান্ধ গোষ্ঠী নানা ইস্যুতে সে উন্নয়নধারাকে ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। সরকারের দায়িত্বও এক্ষেত্রে কম নয়। সরকারী দলের অগণিত অঙ্গদলের কাজ-কারবার অনেক ক্ষেত্রে জনবিরুদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়। সেটি ষড়যন্ত্রকারীদের ইন্ধন জোগায়, তাদের অপপ্রচারের খোরাক হয়। দলীয় কোন্দল জনজীবনে প্রায়শই ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। আজিমপুরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ১৭ নবেম্বরের ময়লার স্তূপ শুধু দলীয় কোন্দলের দুর্গন্ধই ছড়ায়নি, সরকারের ভাবমূর্তির উপরেও দুর্গন্ধের কৃষ্ণপ্রলেপ লাগিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে তৃতীয় বিশ্বের রাজনৈতিক দলগুলোর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ক্ষমতায় গেলে দলগুলো সরকারের ওপর চেপে বসে। ফলে সরকারী কর্মকর্তারা এক ধরনের রাজনৈতিক চাপে থাকে। এ কারণেই মাঝে মাঝে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্নস্থানে দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়াবাড়ি সামাল দিতে সরকারী কর্মকর্তারা ব্যর্থ হন। বিগত ক’বছরে বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনাবলী পরীক্ষা করলে দেখা যাবে- এতে সরকারের প্রতি আওয়ামী ঘরানার নেতা-কর্মীদের নিদারুণ উপেক্ষা প্রকারান্তরে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। এসব বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় সরকারী দলের দায়িত্ব অপরিসীম। প্রশাসনের ভুল-ত্রুটি-অনিয়মের প্রতি সরকারের যথাযথ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সরকারী দলের দায়িত্ব। সরকারী দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে সংবিধানের আলোকে দেশ পরিচালিত হবে- এর অন্যথা হলেই প্রশাসন ব্যর্থ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। বিগত ৯ বছরে দেশের অর্থনীতি-ব্যবসা-বাণিজ্য-যোগাযোগ-অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিবিধ খাতের ধারাবাহিক ব্যাপক উন্নয়ন জনগণকে স্বস্তির বার্তা দিলেও এক শ্রেণীর দলীয় নেতা-কর্মীর বাড়াবাড়ি জনস্বস্তিকে চরম জন-অস্বস্তিতে পরিণত করেছে। ফলে নৈরাজ্যের কবলে বাঁধা পড়ছে সরকারের যত উন্নয়ন গাথা সাফল্যের কাহিনী। যত দ্রুত সম্ভব এ বাধা দূর করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে উন্নয়নের সুফল ও নাগরিক অধিকার। বিজয়ের ৪৬তম বার্ষিকীতে এই হোক সকলের অঙ্গীকার। লেখক : সাবেক প্রধান তথ্য কর্মকর্তা
×