ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাল আসছেন তুর্কী প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অনাবাসিক দূতদের আলোচনা

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অনাবাসিক দূতদের আলোচনা

বাংলাদেশে নিযুক্ত অনাবাসিক দূতরা নিরাপত্তা ও মর্যাদাসহ রোহিঙ্গাদের সঠিক প্রত্যাবাসন নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশকে তাদের সমর্থন দিয়েছেন। নয়াদিল্লীতে নিযুক্ত ১৫ দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও কূটনীতিকরা রবিবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাতকালে এ সমর্থন দেন। দূতরা হলেন বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, বুলগেরিয়া, ইথিওপিয়া, জর্জিয়া, গ্রিস, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া ও ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত, সাইপ্রাস, মরিশাস ও কেনিয়ার হাইকমিশনার, অস্ট্রিয়া, চেক রিপাবলিক ও ঘানার চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স এবং নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় সচিব। বাসস জানায়, এ সময় ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী উপস্থিত ছিলেন। নয়াদিল্লীভিত্তিক এসব মিশন প্রধান ও কূটনীতিকরা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, তাদের (রোহিঙ্গা) ভোগান্তি খুবই বেদনাদায়ক। এই সঙ্কট নিরসনে আলোচনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তারা বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে তাদের স্বদেশভূমি রাখাইনে ফিরে যেতে পারে সেজন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে হবে। মিয়ানমার থেকে আগত শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদানে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, বিপুলসংখ্যক মিয়ানমারের নাগরিককে আশ্রয় ও তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মানবতার পরিচয় দিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তারা বলেন, প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদান খুব সহজ কথা নয়, এটির ব্যবস্থাপনা খুবই কষ্টসাধ্য বিষয়। রোহিঙ্গা সমস্যা এখন শুধু বাংলাদেশের একার সমস্যা নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা বলেও তারা উল্লেখ করেন। এ সময় রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং কূটনীতিকবৃন্দ তাদের নিজ নিজ দেশের সরকারকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করবেন বলেও জানান। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের সেদেশে ফেরত নিতে আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, মিয়ানমার সরকারকে তার নাগরিকদের অবশ্যই দ্রুততার সঙ্গে যথাযথ মর্যাদা ও নিরাপত্তা দিয়ে ফেরত নিয়ে যেতে হবে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ও নেপিডোর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের উল্লেখ করে বলেন, মিয়ানমার তার নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় পুনর্বাসনে সহায়তায় রোহিঙ্গাদের রেজিস্ট্রেশন ও পরিচয়পত্র প্রদানসহ তাদের জন্য অস্থায়ী আবাসিক ব্যবস্থা গড়ে তোলায় তার সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য পৃথক একটি জায়গায় আবাসনের উদ্যোগও নিচ্ছে তার সরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মানবিক কারণেই তাদের আশ্রয় দিয়েছি। তবে বিপুল জনগোষ্ঠীর ভার বহন করা বাংলাদেশের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য। তিনি বলেন, জানি না কবে মিয়ানমার তাদের প্রত্যাবাসন করা শুরু করবে। তবে এ জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বজায় রাখতে হবে। রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকগণ জানান, তারা বিজয় দিবসে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে আবেগে আপ্লুত হয়েছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির পুনরুল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে কোন সন্ত্রাসীর আশ্রয় হবে না এবং বাংলাদেশের ভূখ-কেও কারো বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে আমরা ব্যবহার করতে দেব না। শরণার্থী হওয়ার যন্ত্রণা বোঝেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট হত্যার পর তিনি ও ছোট বোন শেখ রেহানা শরণার্থী হিসেবেই ছয় বছর বিদেশে অবস্থান করেন। তাদের দেশে ফিরতে দেয়া হয়নি। তাছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও প্রায় এক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর ভারতে আশ্রয় নেয়া প্রায় ৬২ হাজার শরণার্থীকে তিনি দেশে ফিরিয়ে আনেন বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন। পনেরো দেশের ১৯ দূত পরিদর্শন করলেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প॥ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রশ্নে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিক সমঝোতা স্মারক চুক্তির ২৪ দিন অতিবাহিত হয়েছে রবিবার। কিন্তু এ বিষয়ে লক্ষ্যণীয় কোন তৎপরতা মিয়ানমারের নেই। মিয়ানমার থেকে ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্যদের বাংলাদেশে আগমনের কর্মসূচী দেয়া হলেও তার শেষ ফলোআপের বিষয়টি নিয়েও বাংলাদেশের কোন পক্ষ নিশ্চিত করে তথ্য দিতে পারেনি। ফলে সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী দুমাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরুর যে আলোচনা হয়েছে তা এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়ে গেছে। এ অবস্থায় ভারতে কর্মরত পনের দেশের ১৯ দূত রবিবার কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে এসব দূত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে রাখাইন রাজ্যে তাদের ওপর যে বর্বরতা চলেছে তার কাহিনী শোনেন। সেনাবাহিনী ও উগ্র মগ সন্ত্রাসীরা কিভাবে নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে, বাড়িঘর জ্বালিয়েছে, যুবতী ও নারীদের ধর্ষণ করেছে তার বর্ণনা শুনেন। ওইসব দূত বিস্মিত হন রোহিঙ্গাদের যেভাবে গণহারে হত্যা করা হয়েছে তার বিবরণ শুনে। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর নেতৃত্বে সকালে এসব দেশের দূতগণ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিস্তারিত তথ্য অবগত হন। ক্যাম্প পরিদর্শনকালে কয়েকজন দূত জানান, তারা এ বিষয়ে ভারতের দিল্লীতে গিয়ে তাদের নিজ নিজ দেশের সরকারের কাছে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠাবেন। তারা আরও জানান, পুরো বিশ্ব এখন রোহিঙ্গাদের স্বার্থে একমত। তারা আগেই যে ধারণা পেয়েছিলেন সরেজমিনে এসে তার মিল পেয়েছেন। সঙ্গত কারণে তারা আশাবাদী তাদের নিজ নিজ দেশের সরকারগুলোও আগামীতে মিয়ানমার সরকারের ওপর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও তাদের নিজ বাড়িঘরে বসবাস নিশ্চিত করতে চাপ সৃষ্টি করবেন। যেসব দেশের দূতগণ এসেছিলেন সেগুলো হচ্ছে বসনিয়া-হারজেগোবিনা, বুলগেরিয়া, সাইপ্রাস, ইথিওপিয়া, জর্জিয়া, গ্রিস, মরিশাস, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, ইউক্রেন, জাম্বিয়া, নাইজিরিয়া, চেক রিপাবলিক, অস্ট্রিয়া, ঘানা, নিউজিল্যান্ড, কেনিয়া ও ফিজি। দিল্লীতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের আহ্বানে বিভিন্ন দেশের এসব দূতগণ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে সন্ধ্যার আগেই ঢাকায় ফিরে যান। কাল আসছেন তুর্কী প্রধানমন্ত্রী ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে তুর্কী প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম আগামীকাল দুদিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন। তিনি রাষ্ট্রীয় পর্যায় বৈঠক শেষে কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যাবেন বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে। রাখাইনে আগুনে পুড়ে দুই সহোদরের মৃত্যু ॥ মিয়ানমারের রাখাইনে কিয়ত্ততে উগ্রপন্থী রাখাইনদের দেয়া আগুনে দুই রোহিঙ্গা সহোদর প্রাণ হারিয়েছে। সীমান্তের ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, নিহতরা কিয়ত্তের উপচিপাড়া এলাকার ইলিয়াসের পুত্র। এদের একজন নবম এবং আরেকজন দশম শ্রেণীতে লেখাপড়া করত। এ দু’সহোদর নিজস্ব একটি ওষুদের দোকান চালাত। শনিবার রাতে দোকান বন্ধ করে তারা ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর রাতে ওই দোকানটিতে উগ্রপন্থীরা আগুন লাগিয়ে দেয়। ফলে প্রাণ বাঁচানোর পথ খুঁজে পাওয়ার আগেই দগ্ধ হয়ে তাদের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। আজ থেকে ফের চালু হচ্ছে ত্রাণ বিতরণ ॥ রোহিঙ্গাদের মধ্যে এক সপ্তাহ খাদ্য বিতরণ কর্মসূচী বন্ধ রাখার পর আজ সোমবার থেকে ফের চালু হচ্ছে ত্রাণ বিতরণ। অতিরিক্ত ত্রাণ পেয়ে রোহিঙ্গারা তছরুপ ও বাইরে বিক্রি করে দেয়ার সত্যতা পেয়ে সোমবার (১১ ডিসেম্বর) থেকে এক সপ্তাহের জন্য এ কর্মসূচী বন্ধ রেখেছিল সরকার। আজ সোমবার থেকে স্বাভাবিকভাবে ত্রাণ কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন। তিনি বলেন, খাদ্য সামগ্রীর অভাব নেই। প্রচুর খাদ্য সামগ্রী আসছে। বিভিন্ন এনজিওর কাছে প্রচুর খাদ্য আছে। রবিবার থেকে সাময়িক স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়ে যাবে। সোমবার থেকে আবার ত্রাণ কার্যক্রম চলবে। ডিসি আলী হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য শীতকালীন প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যে এক-দেড় লাখ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
×